kumudini tyagi

এক জন ফেরান লোভনীয় বেতন, অন্য জনের অনুসরণ পারিবারিক রীতি, বন্ধুর পথ পেরিয়ে যুদ্ধজাহাজে দুই কন্যা

রীতির মতো কুমুদিনীর পরিবারে সেনাবাহিনীতে কাজ করার ধারা নেই। তবুও স্বপ্ন দেখতে অসুবিধে হয়নি তাঁর। উত্তরপ্রদেশের মেরঠের খরখৌদা গ্রামের মেয়েটির ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:৩২
Share:
০১ ১৮

ঠাকুরদা যুদ্ধ করেছিলেন কার্গিলে। বাবা সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন ২০ বছর ধরে। উত্তরাধিকারের সেই ব্যাটন এ বার পরের প্রজন্মের রীতি সিংহের হাতে। সাব লেফ্টেন্যান্ট হিসেবে তিনি এ বার যোগ দিতে চলেছেন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজে। তাঁর সঙ্গে এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে চলেছেন আরও এক মহিলা অফিসার কুমুদিনী ত্যাগী।

০২ ১৮

এই প্রথম বার নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজে মোতায়েন করা হচ্ছে দুই মহিলা অফিসারকে। নৌবাহিনীর এমএইচ-৬০ আর কপ্টারের পাইলট হিসেবে যোগ দিলেন তাঁরা। সোমবার কোচিতে আইএনএস গরুড় যুদ্ধজাহাজে একটি অনুষ্ঠানে কুমুদিনী এবং রীতিকে নিয়োগ করা হয়। খুব তাড়াতাড়ি তাঁদের এমএইচ-৬০ আর কপ্টার ওড়াতে দেখা যাবে।

Advertisement
০৩ ১৮

ছক ভাঙা এই পেশায় নিজেকে রীতি দেখছেন আশৈশব। মাত্র ছ’ বছর বয়সে তিনি পরিবারের বাকি সদস্যের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশ থেকে হায়দরাবাদে চলে এসেছিলেন। বাবা মা ও দিদির সঙ্গে এরপর নিজামের শহরেই দিন কেটেছে রীতির।

০৪ ১৮

ঠাকুর্দা এবং বাবাকে অনুসরণ করে দেশসেবার স্বপ্ন দেখা শুরু রীতির। অন্যদিকে স্কুলশিক্ষিকা মা যত্ন করে শিখিয়েছেন ইংরেজি। বাবা মায়ের পাশে দিদি রিয়া-ও পাশে থেকেছেন সমর্থনের স্তম্ভ হয়ে।

০৫ ১৮

২৪ বছর বয়সি বোনের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত রিয়া সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, ছোট থেকেই রীতি লড়াকু। প্রতিদিন সকালে বাবার তত্ত্বাবধানে রীতি কঠোর অনুশীলন করত সেনাবিহীনতে প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য।

০৬ ১৮

রীতির মতো কুমুদিনীর পরিবারে সেনাবাহিনীতে কাজ করার ধারা নেই। তবুও স্বপ্ন দেখতে অসুবিধে হয়নি তাঁর। উত্তরপ্রদেশের মেরঠের খরখৌদা গ্রামের মেয়েটির ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার।

০৭ ১৮

১৯৮৩ সালে ত্যাগী পরিবার গ্রাম থেকে পাড়ি দেয় গাজিয়াবাদ শহরে। কম্পিউটার সায়েন্সে বি-টেক করার সময় তিনি ছিলেন কলেজের ছাত্রীদের মধ্যে মেধাতালিকার শীর্ষে।

০৮ ১৮

বি-টেক করার পরে বেসরকারি সংস্থায় মোটা বেতনের চাকরির সুযোগ পেয়েছিলেন কুমদিনী। কিন্তু বেতনের অঙ্ক তাঁকে স্বপ্নচ্যুত করতে পারেনি। চাকরির সুযোগ ফিরিয়ে তিনি প্রস্তুতি শুরু করেন সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য।

০৯ ১৮

স্কুলকলেজে মেধাবী ও পরিশ্রমী বলে সুনাম ছিল কুমদিনীর। সেই ধারা বজায় থাকল সেনাবাহিনীতে প্রবেশিকা পরীক্ষার সময়েও। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কুমুদিনী সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ২০১৮ সালে।

১০ ১৮

বলতে যতটা সহজ, কুমুদিনীর চলার পথ ছিল ততটাই বন্ধুর। তাঁর প্রয়াত ঠাকুর্দা ছিলেন উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর। পুলিশ বিভাগের কর্মী তাঁর কাকা-ও। বাবা একটি সিকিয়োরিটি এজেন্সির মালিক।

১১ ১৮

কিন্তু সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য পরিবার থেকে উৎসাহ পাননি কুমুদিনী। বরং, সবাই তাঁকে বলেছিলেন চাকরিতে যোগ দিতে। বাড়ির লোকের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের জেদে অটল থাকেন কুমুদিনী। আজ, ২৩ বছরের এই তরুণীর সাফল্যে তাঁর পরিবার গর্বিত।

১২ ১৮

রীতি এবং কুমুদিনীর হাত ধরে ভারতীয় নৌবাহিনীতে নতুন অধ্যায়ের সূত্রপাত হল। নৌবাহিনীর বিভিন্ন পদে মহিলারা কর্মরত থাকলেও এত দিন বেশি সময়ের জন্য তাঁদের যুদ্ধজাহাজে মোতায়েন করা হত না। ক্রু কোয়ার্টারে গোপনীয়তার অভাব, মহিলাদের ব্যবহারের উপযোগী শৌচাগার না-থাকার মতো বিষয়গুলি এর কারণ ছিল। সব অচলায়তন গুঁড়িয়ে আকাশে ডানা মেললেন দুই প্রমীলা।

১৩ ১৮

দুই অফিসারকে অভিনন্দন জানিয়ে এটিকে ঐতিহাসিক মুর্হূত বলে বর্ণনা করেছেন রিয়ার অ্যাডমিরাল অ্যান্টনি জর্জ। তিনি বলেন, ‘‘এই প্রথম হেলিকপ্টার অপারেশনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে মহিলাদের। এ ভাবেই যুদ্ধজাহাজেও মহিলা অফিসারদের মোতায়েনের সূচনা হল।’’

১৪ ১৮

কুমুদিনী ও রীতি নৌসেনার মাল্টি রোল হেলিকপ্টার অপারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় সেন্সর, সোলার কনসোল এবং ইন্টেলিজেন্স, সার্ভিল্যান্স ও সমন্বয়ের কাজ কাজ করবেন।

১৫ ১৮

২০১৮ সালে নির্মলা সীতারামন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী থাকাকালীন ২৪টি এমএইচ-৬০ আর হেলিকপ্টার কেনার বরাতের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছিল। নৌবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরে ওই হেলিকপ্টার ওড়াবেন তাঁরা। প্রতিপক্ষ বা শত্রুপক্ষের জাহাজ ও সাবমেরিনের অবস্থান নির্ধারণ করা এবং ধ্বংস করার কাজে পারদর্শী এই হেলিকপ্টারগুলি।

১৬ ১৮

এর আগে ২০১৬ সালে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রথম মহিলা ফাইটার পাইলট হয়েছেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ভাবনা কান্থ, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট অবনী চতুর্বেদী এবং ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মোহনা সিংহ। এই মুহূর্তে বায়ুসেনায় ১৮৭৫ জন মহিলা রয়েছেন।

১৭ ১৮

কার্গিল যুদ্ধে অংশ নিয়ে নজির গড়েছিলেন গুঞ্জন সাক্সেনা। যুদ্ধক্ষেত্রে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল থেকে তিনি উদ্ধার করে আনতেন আহত ভারতীয় সেনাদের। মৃত সেনাদের উদ্ধার করা এবং যুদ্ধের ময়দানে রসদ পৌঁছে দেওয়াও ছিল তাঁর দায়িত্ব।

১৮ ১৮

কিন্তু কার্গিল গার্ল গুঞ্জন বেশিদিন ভারতীয় সেনায় কাজ করতে পারেননি। কারণ তখন বায়ুসেনায় মহিলাদের পার্মানেন্ট কমিশন ছিল না। ফলে শর্ট সার্ভিস কমিশনে কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন গুঞ্জন। তাঁর অধরা স্বপ্নপূরণের দায়িত্ব এ বার পরবর্তী প্রজন্মের সাহসিনীদের হাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement