ফাইল চিত্র।
আইআইটি-তে ভর্তি হয়েও যাঁরা মাঝপথে পড়া ছেড়ে দিচ্ছেন, তাঁদের বেশিরভাগই তফসিলি জাতি, জনজাতি ও ওবিসি শ্রেণির। দেশের সাতটি প্রথম সারির আইআইটি-র মধ্যে এই তালিকার উপরের দিকে রয়েছে খড়্গপুরের আইআইটি। গত পাঁচ বছরে আইআইটি-তে ভর্তি হয়েও ৭৯ জন মাঝপথে পড়া ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৪৭ জন তফসিলি জাতি ও জনজাতি, ওবিসি শ্রেণির।
কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক এক প্রশ্নের উত্তরে সংসদে জানিয়েছে, দেশের প্রথম সারির আইআইটি-র ‘ড্রপআউট’-দের মধ্যে ৬৩ শতাংশই তফসিলি জাতি, জনজাতি, ওবিসি শ্রেণির। এঁদের মধ্যে ৪০ শতাংশই তফসিলি জাতি ও জনজাতির। বাকিরা ওবিসি ও আর্থিক ভাবে অনগ্রসর শ্রেণির। এঁদের জন্য আইআইটি, আইআইএসসি, এআইটি, আইআইআইটি, আইআইএসইআর-এর মতো কেন্দ্রীয় অনুদানে চলা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসন সংরক্ষণের বন্দোবস্ত থাকে। কিন্তু সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ থেকে ২০২০— পাঁচ বছরে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে তফসিলি জাতির ৬১৯ জন, তফসিলি জনজাতির ৩৬৫ জন ও ৮৪৭ জন ওবিসি পড়ুয়া মাঝপথে বেরিয়ে যান। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তফসিলি জাতির পড়ুয়াদের মধ্যে ‘ড্রপআউট’-এর হার ২.৪%, জনজাতির ২.৯% এবং ওবিসি-দের মধ্যে ১.৭%।
রাজ্যসভার সিপিএম সাংসদ ভি শিবদাসন সংসদে প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন অনগ্রসর শ্রেণির পড়ুয়ারা এত বেশি সংখ্যায় আইআইটি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন? কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান উত্তরে জানিয়েছেন, এর পিছনে মূলত দু’টি কারণ রয়েছে। এক, পড়ুয়াদের পছন্দের অন্য প্রতিষ্ঠান বা বিভাগে সুযোগ পেয়ে যাওয়া। দুই, অন্যান্য ব্যক্তিগত কারণ। তবে অন্যান্য ব্যক্তিগত কারণ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে, শিক্ষামন্ত্রী তার ব্যাখ্যা দেননি। তাঁর যুক্তি, এ বিষয়ে সরকার ফি কমানো, স্কলারশিপের ব্যবস্থা, জাতীয় স্তরের স্কলারশিপ দেওয়ার ক্ষেত্রে গরিব পরিবারের পড়ুয়াদের অগ্রাধিকার দেওয়ার মতো পদক্ষেপ করেছে। শিবদাসন মনে করিয়ে দিচ্ছেন, দলিত ও আদিবাসী সমাজকর্মীরা অনেকদিন ধরেই অভিযোগ তুলছেন যে অনগ্রসর শ্রেণির পড়ুয়ারা আইআইটি-র মতো নামজাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে গিয়ে বৈষম্য ও বাড়তি চাপের মুখে পড়ছেন।
বিরোধীদের অভিযোগ, এমনিতেই কেন্দ্রীয় অনুদানে চলা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে তফসিলি জাতি, জনজাতি, ওবিসিদের জন্য যতখানি আসন সংরক্ষিত থাকে, তা পূরণ হয় না। শুধুমাত্র আইআইটি-গুলিই শূন্য পড়ে থাকা সংরক্ষিত আসনগুলিতে ছাত্র ভর্তি করার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়। এখন দেখা যাচ্ছে, ভর্তি হওয়ার পরেও অনেকে ছেড়ে দিচ্ছেন।