মোদীর মুদ্রানীতি নিয়ে প্রশ্ন পড়ুয়াদের

দেড়মাস পরও নরেন্দ্র মোদীর মুদ্রানীতি বা নগদবিহীন রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের মধ্যে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। অন্যান্য বিভাগ তো বটেই, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রছাত্রীদেরও জিজ্ঞাসা কম নয়। ক্যাশলেস করা আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয়ে তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:০২
Share:

দেড়মাস পরও নরেন্দ্র মোদীর মুদ্রানীতি বা নগদবিহীন রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের মধ্যে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। অন্যান্য বিভাগ তো বটেই, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ছাত্রছাত্রীদেরও জিজ্ঞাসা কম নয়। ক্যাশলেস করা আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয়ে তাঁরা। বরং ইলেকট্রনিক লেনদেনে কষ্টার্জিত অর্থের নিরাপত্তা নিয়ে ছাত্র-গবেষকরা নিজেদের শঙ্কা প্রকাশ করেন। শঙ্কিত উপাচার্য দিলীপচন্দ্র নাথও।

Advertisement

আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ম্যানেজমেন্ট ফেস্ট’-এ বিশেষজ্ঞদের পেয়ে কেউ জানতে চান— বাংলাদেশের ব্যাঙ্ক নিউইয়র্কের এক ব্যাঙ্কের গোপন কোড জেনে বহু কোটি টাকা সরিয়ে ফেলেছিল। এ দেশের টাকা সরাতে পারবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? আরেক ছাত্রের প্রশ্ন, ক্যাশলেস করতে চাইলে আবার নতুন ১ লক্ষ ৮০ হাজার এটিএম বসানোর পরিকল্পনা কেন? উইন্ডোজ এক্সপি পুরো কর্মহীন হয়ে পড়লে ব্যাঙ্কগুলি কী করবে, তাও জানতে চান পড়ুয়াদের এক জন। তাঁর কথায়, ‘‘ব্যাঙ্কগুলি তো এখনও এক্সপি-ই ব্যবহার করছে। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে উইন্ডোজ এই সফটওয়্যার আর তৈরি করছে না।’’

প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন। এর মধ্যে আসছিল কিছু প্রস্তাবও। পুরোপুরি অশিক্ষিতদের জন্য পিন নম্বরের গোপনীয়তা যে অর্থহীন, সে কথা উল্লেখ করে ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়াদের পরামর্শ, বিষয়টিকে বায়ো-মেট্রিক করা গেলে সমস্যা মিটে যায়। না হলে অশিক্ষিতরা অন্যকে এটিএম কার্ড দেবে, সঙ্গে বলবে গোপনীয় নম্বরও। তাতে আর্থিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবেই।

Advertisement

উপাচার্য দিলীপচন্দ্র নাথও বলেন, ‘‘হ্যাকারদের ভয়ে আমি নিজেও নেট-ব্যাঙ্কিং করি না । ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড যদিও ব্যবহার করি।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ক্লাবের আহ্বায়ক দেবমাল্য ঘোষ অবশ্য ‘ক্যাশলেস ইকনমি’র পক্ষে নিজের অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘পুরনো অভ্যাস, এতদিনের ব্যাপার বলে পিছিয়ে থাকলে হবে না।’’ তাঁর কথার সূত্র ধরে সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞ সুবিমল ভট্টাচার্য জনসচেতনতায় গুরুত্ব দেন। তিনিই ছিলেন ‘ম্যানেজমেন্ট ফেস্টে’র নির্ধারিত বক্তা। তিনি জানান, পথচলার শুরু ২০১১ সালে। ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল ব্যাঙ্কিং, ইলেকট্রনিক ব্যাঙ্ক সিস্টেম, ই-কমার্স সব এরই প্রাথমিক পদক্ষেপ। তবে ৫০০, ১ হাজার নোট বদলের ঠিক পরই ক্যাশলেস ইকনমির ঘোষণা সঠিক সময়ে মোদীর সেরা সিদ্ধান্ত বলে দাবি করেন তিনি। ছোটখাটো অভিযোগ থাকলেও ই-মানি নিরাপদ জানিয়ে সুবিমলবাবু বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় এতসব নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় যে, হ্যাকিং সম্ভব নয়। অজ্ঞতার দরুন কেউ সুযোগ হাতে তুলে দিলে আলাদা কথা।’’ তাঁর পরামর্শ, পাসওয়ার্ডটা বুঝেশুনে ব্যবহার করতে হবে। অনেকেই ১২৩৪৫৬ বা স্ত্রী-সন্তানের নাম পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করেন। কেউ কেউ জন্মতারিখকে বেছে নেন। ফলে পরিচিতজনদের পক্ষে গোপনীয়তা ভাঙা কঠিন কিছু নয়। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ঘরে তালা দিয়ে কি কেউ চাবি সামনে রেখে আসে!’’

ক্যাশলেস ইকনমির যে বহু সুবিধের জায়গা রয়েছে, সে সবের উল্লেখ করে সুবিমলবাবু বলেন, ‘‘সব চেয়ে বড় কথা, বিশ্বের কাছে ভারতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। তাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এখনই বিশ্ব জুড়ে বলাবলি শুরু হয়েছে, কী ভাবে এমন বিশাল দেশে নীরবে মুদ্রা বদল সম্ভব হয়ে গেল!’’

সুবিমলবাবু ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে গলা না মিলিয়ে পারেননি যে, পুরোমাত্রায় ক্যাশলেস করা সম্ভব নয়, বলা যায় লেস ক্যাসেরই প্রক্রিয়া চলছে। গ্রামীণ অশিক্ষিতদের কথা ভেবে বায়োমেট্রিক কার্ডের প্রস্তাবে সহমত পোষণ করেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে জড়িত সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞ সুবিমল ভট্টাচার্য।

শিলচর ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ঈশ্বরভাই ওবাদিয়ার মন্তব্য, ‘‘ভাল কিছু পেতে গেলে শুরুতে সামান্য মুশকিল হয়ই।’’ তিনি আশাবাদী, ক্যাশলেস পদ্ধতিতে আগামী দিনগুলি ভারতবাসীর পক্ষে সুখকর হবে। তিন দিনের ম্যানেজমেন্ট ফেস্টের প্রথম দিন আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সঞ্জীব ভট্টাচার্য, অধ্যাপক অমৃতলাল ঘোষ, ডিন অপূর্বানন্দ মজুমদারও বক্তৃতা করেন। আগামী কাল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা। তাও মুদ্রা বদল নিয়ে। বিতর্কের বিষয়: মুদ্রা বদল রাজনীতির দুর্নীতিগ্রস্ত মুখগুলিকে সামনে নিয়ে এলো। হবে আকস্মিক বক্তৃতাও। ২৫ ডিসেম্বর বিভাগের প্রাক্তনী মিলন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement