স্বামীর মৃত্যু অভিশাপের মতো জড়িয়ে ধরেছিল অভাবের সংসারটাকে। সংসার ছাড়া কখনও বাইরে পা দেননি দীপ্তি। স্বামী থাকাকালীন বাইরে বেরনোর প্রয়োজনও পড়েনি তাঁর।
অভাব-অনটন থেকে সংসারটাকে উদ্ধার করতে হবে যে! তাই বাধ্য হয়েই কাজ শুরু করলেন তিনি। কাজ বলতে পাহাড়ি রাস্তার ধারে ছোট্ট একটা চায়ের দোকান।
কিন্তু খদ্দের বড় হত না। সারা দিনে হাতে গোনা কিছু ট্রাক চালক আর পথ চলতি কয়েক জন পর্যটক। তা দিয়ে অভাব মেটে না। আচমকাই একটা মোড় আসে দীপ্তির জীবনে। সেই ছোট্ট চায়ের দোকানই আজ কুমায়ুনের জনপ্রিয় জোশ কাফে!
যাঁর কথা হচ্ছে তিনি দীপ্তি জোশী। উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুনের ছোট্ট গ্রাম কাপকোট ভারারির বাসিন্দা। নৈনিতালে একটি পরিবারে তাঁর বিয়ে হয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন স্বামী। কিন্তু ২০১৪ সালে স্বামীর মৃত্যু হয়। তারপরই উপার্জন করতে শুরু করেন দীপ্তি।
কুমায়ুনের পাহাড়ি রাস্তার ধারে কোনওক্রমে টিন দিয়ে ঘিরে ছোট ওই চা-কফির দোকানটা বানিয়েছিলেন তিনি। ছোট গুমটির মতো দোকানে গাড়ির চালকরাই মূলত চা-কফি খেতেন। কিন্তু সেই বা আর কত জন? কোনও কোনও সপ্তাহে এক-দু’জন পর্যটকও জুটে যেত দীপ্তির কপালে। যা রোজগার হত, তাতে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ছিল তাঁর।
২০১৭ সালে একদিন এক পর্যটকের দল তাঁর দোকানে আসেন। তাঁরা দিল্লির কিরন নাদার মিউজিয়াম অফ আর্টস-এর পড়ুয়া। চা-কফি খাওয়ার সময় দীপ্তির মুখে তাঁর স্বামীর মৃত্যু এবং তার পর সংসারের অনটনের কথা শোনেন তাঁরা। দীপ্তির চায়ের দোকানের কাছেই একটি হোটেল ছিল। পর্যটকেরা ওই হোটেলেই উঠেছিলেন।
সেই দিনটাই যেন ছিল দীপ্তির জীবনের নতুন মোড়। দিল্লির আর্টস মিউজিয়ামের পড়ুয়ারাই বদলে দেন দীপ্তির জীবন। কী ভাবে?
ছোট্ট গুমটির চেহার বদলে যায় শিল্পের ছোঁয়ায়। গুমটিতে রং করে তার উপর কুমায়ুন সংস্কৃতির পরিচয় বহনকারী শিল্পকলা এঁকে দেন ওই পড়ুয়ারা। এই কাজে স্থানীয় স্কুল পড়ুয়ারাও হাত লাগায়। জোশী টি স্টল থেকে জন্ম নেয় জোশ কাফে।
স্থানীয় ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির ধারক হয়ে ওঠে দোকানটি। শিল্পকলার টানে একে একে বাড়তে থাকে দোকানের খদ্দের। দীপ্তি ভাবতেও পারেননি যে এত দ্রুত এতটা ভাগ্য বদলাতে চলেছে তাঁর।
এখন আর অনটনে দিন কাটাতে হয় না দীপ্তিকে। স্থানীয় চালক তো আছেনই, স্থানীয় মানুষ এবং পর্যটকদেরও ভিড়ও বেড়ে গিয়েছে, জানান দীপ্তি।