কাশ্মীরে কড়া নিরাপত্তা। ছবি: পিটিআই
মাসখানেক আগে ইদের দিন নিরাপত্তার ঘেরাটোপ থেকে কিছুটা মুক্তি মিলেছিল, কিন্তু মহরমে কার্যত থমথমে হয়ে রইল কাশ্মীর। মহরমের প্রস্তুতি হিসাবে রাস্তার ধারে কালো পতাকা টাঙানো হয়েছিল। কিন্তু, শোভাযাত্রার বদলে মঙ্গলবার পথঘাট জনশূন্যই রইল। বদলে প্রতি পাঁচশো মিটার অন্তর দেখা গিয়েছে ব্যারিকেড। মোড়ে মোড়ে মোতায়েন করা হয়েছে আধা সামরিক বাহিনী। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ ও তা নিয়ে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই মহরমের মিছিলের জন্য এ বার অনুমতি দেয়নি উপত্যকার প্রশাসন।
স্থানীয়দের অনেকের মতেই, নব্বইয়ের দশকের কঠিন সময় বা তার পরেও মহরমের দিন এমন ছবি কাশ্মীরে দেখা যায়নি। ঠিক সে কথাই উঠে এসেছে জাদিবাল এলাকার বাসিন্দা সত্তর বছরের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি অফিসার গুলাম হুসেনের কথায়। নিরাপত্তার কড়াকড়ি নিয়ে এক রাশ অভিযোগ তাঁর গলায়। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ওষুধপত্র বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে যেতেও অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।’’
উপত্যকার বর্তমান পরিস্থিতির উপর নজর রেখেই যে কোনও ধরনের জমায়েত বা শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্থানীয়দের অনেকেই মূল রাস্তাকে বাদ দিয়েই এলাকায় ছোট ছোট জমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু, রবিবার সে সবের উপরেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে প্রশাসন। এর মধ্যেই নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো ও ছররা বন্দুক ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। শ্রীনগর মিউনিসিপ্যাল কমিটির সদস্য তনভির পাঠান অভিযোগ করেন, ‘‘আমরা নিজের এলাকায় গলিতে মিছিল বার করেছিলাম। নিরাপত্তারক্ষীরা পাহারা দিচ্ছিলেন। তার পরেই তারা টিয়ার গ্যাসের শেল ও ছররা ছোড়ে।’’ রাস্তায় জল বিলি করার সময় কয়েক জন যুবককে মারধরের অভিযোগও উঠেছে নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: এ বার চেন্নাই থেকে গ্রেফতার জেএমবি জঙ্গি বর্ধমানের আসাদুল্লা
সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পর এই প্রথম মহরম উপত্যকায়। ভারতের পদক্ষেপ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সুর চড়াচ্ছে পাকিস্তানও। প্রশাসনিক কর্তাদের মত, মহরমের জমায়েত হলে তার সুযোগ নিয়ে উপত্যকায় গন্ডগোল বাধানো হতে পারে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। তাই ঝুঁকি নিতে চাইছে না প্রশাসন। যদিও, স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেরই প্রশ্ন, অমরনাথ যাত্রায় নিরাপত্তা দিতে পারলে, এখানেই বা তা দেওয়া হবে না কেন?
১৯৮৯ সালের আগে কাশ্মীরে মহরমে বড়সড় জমায়েত হতো। কিন্তু, ওই সময়ে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বাড়তে থাকায় তার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। অবশ্য তার পরেও শ্রীনগর, বদগাম বা বারামুলা এলাকায় মহরম উপলক্ষে বড়সড় জমায়েত দেখা গিয়েছে। কিন্তু এ বার অবশ্য সে ছবি দেখা যায়নি।