দিনে ৪০০, ঘণ্টায় ১৭... পথই মরণফাঁদ

প্রতি সাড়ে তিন মিনিটে এক জনের মৃত্যু হচ্ছে। প্রতি ঘণ্টায় ১৭ জন এবং দিনে অন্তত ৪০০ জন প্রাণ হারাচ্ছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০৩:৪৩
Share:

প্রতি সাড়ে তিন মিনিটে এক জনের মৃত্যু হচ্ছে। প্রতি ঘণ্টায় ১৭ জন এবং দিনে অন্তত ৪০০ জন প্রাণ হারাচ্ছেন।

Advertisement

মহামারি বা জঙ্গি হামলা নয়। এত মৃত্যু ঘটছে স্রেফ পথ দুর্ঘটনায়।

কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, ২০১৫-য় গোটা দেশে পথ দুর্ঘটনায় ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা ৫ লক্ষেরও বেশি। সারা বছরে ৫ লক্ষেরও বেশি পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। যার প্রায় ৭৭ শতাংশ দুর্ঘটনাই ঘটছে গাড়ির চালকের দোষে।

Advertisement

কী ধরনের দোষ? আপাতভাবে মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর জন্য বেশি দুর্ঘটনা ঘটে বলে মনে হলেও পরিসংখ্যান বলছে, যে সব ক্ষেত্রে চালকের দোষে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে মাত্র ৪.২ শতাংশ ক্ষেত্রে চালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। স্বাভাবিক অবস্থাতেই ঊর্ধসীমার তুলনায় বেশি গতিতে গাড়ি চালানোর ফলে প্রায় ৬২ শতাংশ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটেছে।

দু’বছর পূর্তিতে মোদী সরকার যখন সব ক্ষেত্রেই সাফল্যের দামামা বাজাচ্ছে, তখন পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী নিজেই মানছেন, এই একটি ক্ষেত্রে সরকারের কোনও চেষ্টাই ফলপ্রসূ হয়নি। উল্টে ২০১৪-র তুলনায় ২০১৫-তে দুর্ঘটনার সংখ্যা আড়াই শতাংশ বেড়েছে। রাস্তায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ৪.৬ শতাংশ। গডকড়ী বলেন, ‘‘আগামী বছরের মধ্যে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধেক কমিয়ে আনতে চাই। যদিও দুর্ঘটনা বা মৃতের সংখ্যা বাস্তবে শূন্য হওয়া উচিত।’’

কিন্তু সেটা সম্ভব হবে কী ভাবে? কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ সচিব সঞ্জয় মিত্র বলেন, ‘‘যে হেতু চালকদের দোষেই অধিকাংশ পথ দুর্ঘটনা ঘটছে, তাই গাড়ি চালানোর পরিবেশ কী ভাবে আরামদায়ক করা যায়, তা দেখা হচ্ছে।’’ নানা রকম প্রস্তাবের মধ্যে একটি হল— ট্রাক বা বাসে চালকদের কেবিন বাধ্যতামূলক ভাবে বাতানুকূল করা। যাতে দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর সময় মাথা ঠান্ডা থাকে। গাড়িতে ‘এয়ারব্যাগ’ বাধ্যতামূলক করারও প্রস্তাব রয়েছে। সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যাটা যথেষ্ট বেশি। এ ভাবে চলতে পারে না।’’ মৃতদের প্রায় ৫৫ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৩৪-এর মধ্যে। এটা আর শুধু পথ দুর্ঘটনার বিষয় নেই, জন স্বাস্থ্যের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গডকড়ীই বলছেন, আন্তর্জাতিক স্তরেও ভারতকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। কারণ গোটা বিশ্বে একমাত্র রাশিয়া ছাড়া আর সব দেশে পথ দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ভারতের থেকে কম। ব্রাজিলে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নিতিন প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলেন, ২০২০-র মধ্যে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমিয়ে অর্ধেক করে ফেলা হবে।

পরিসংখ্যান বলছে, মোট পথ দুর্ঘটনার ৮৬.৭ শতাংশই ঘটছে ১৩টি বড় রাজ্যে। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গও রয়েছে। তবে মোট দুর্ঘটনার তুলনায় রাজ্যে দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক কম। এগিয়ে রয়েছে তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলি। দশ লক্ষের বেশি জনসংখ্যার শহরগুলিতে কলকাতার তুলনায় মুম্বই, দিল্লি, চেন্নাই, ইনদওর শহরে দুর্ঘটনার সংখ্যা অনেক বেশি। তবে একটি ক্ষেত্রে আসানসোল-দুর্গাপুর পরিবহণ মন্ত্রকের দুশ্চিন্তার তালিকায় রয়েছে। তা হল, প্রাণনাশক দুর্ঘটনার হারে অমৃতসর, লুধিয়ানা, বারাণসীর পরেই জায়গা করে নিয়েছে আসানসোল-দুর্গাপুর। এই দুই শহরে ৪৭.১ শতাংশ দুর্ঘটনাই প্রাণনাশক হয়ে উঠেছে।

দুর্ঘটনা কমাতে মোদী সরকার মোটর ভেহিকল আইনে সংশোধন, ট্রাফিক আইন ভাঙায় কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা, বেশি ক্ষতিপূরণ ও দুর্ঘটনাগ্রস্তদের বাঁচানোর ব্যবস্থা উন্নত করার মতো বেশ কিছু পদক্ষেপ করতে চাইছে। কিন্তু বিষয়টি রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত হলে রাজ্যগুলির সঙ্গেও ঐকমত্য জরুরি। এ জন্য রাজস্থানের পরিবহণমন্ত্রী ইউনুস খানের নেতৃত্বে সব রাজ্যের মন্ত্রীদের নিয়ে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। ওই কমিটি শীঘ্রই রিপোর্ট দেবে। সামনেই বাদল অধিবেশন। সেই অধিবেশনেই আইন সংশোধনী বিল পাশ হয়ে যাবে বলে মন্ত্রীর আশা। জাতীয় সড়কের ধারে মদের দোকানের লাইসেন্স না দেওয়ার জন্যও রাজ্যগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement