২২ বছর আগে কার্গিল যুদ্ধ জয়ের সাক্ষী থেকেছিল গোটা দেশ। ১৯৯৯-এর মে। নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে মুশকো, দ্রাস, কাকসার এবং বাতালিক সেক্টর, কার্গিল সেক্টরে ঢুকে পড়েছিল পাক হানাদাররা। তাদের সরিয়ে দিতে অভিযানে নামে ভারতীয় সেনা। সেই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন বিজয়’।
প্রায় তিন মাস ধরে দু’পক্ষের লড়াই চলে। বীরত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে এমনকি নিজের জীবন দিয়ে পাক হানাদারদের তাড়িয়ে ছাড়ে ভারতীয় সেনা। এমন কয়েক জন সেনার দুর্জয় সাহসের কাহিনি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ক্যাপ্টেন জেরি প্রেম রাজ: ১৯৯৯-এর ৯ জুলাই। টাইগার হিলে পৌঁছে গিয়েছিল পাক হানাদাররা। তাদের জবাব দিতে সেখানে তখন প্রস্তুত ভারতীয় সেনাও। টাইগার হিলের পয়েন্ট ৫১৪০-এ দায়িত্বে ছিলেন জেরি প্রেম রাজ।
নেতৃত্ব দেওয়ার সময় শত্রুপক্ষের স্নাইপারের গুলিতে জখম হন প্রেম রাজ। সেই অবস্থাতেও নেতৃত্ব দিয়ে যান তিনি। পরে ওই দিন মৃত্যু হয় তাঁর। সাহসিকতার জন্য তাঁকে মরণোত্তর ‘বীর চক্র’ দেওয়া হয়।
লেফটেন্যান্ট কেইসিং ক্লিফোর্ড ননগ্রাম: ১২ জম্মু-কাশ্মীর লাইট ইনফ্যান্ট্রিতে নিযুক্ত ছিলেন। কার্গিল যুদ্ধের সময় বাতালিক সেক্টরে ছিলেন তিনি। পাহাড় বেয়ে উঠে শত্রুপক্ষকে আটকে দেওয়ার জন্য এগোতেই পাহাড়ের উপর থেকে পাক হানাদাররা তাঁদের লক্ষ্য করে প্রবল গোলাবর্ষণ করে।
ননগ্রাম সেই ফায়ার জোনে ঢুকে পড়েন একাই। গ্রেনেড ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে যান। তাঁর ছোড়া গ্রেনেডে শত্রুপক্ষের ৬ জন নিহত হয়। কিন্তু তাদের পাল্টা হামলায় মৃত্যু হয় ননগ্রামের। মরণোত্তর ‘মহাবীর চক্র’ দেওয়া হয় তাঁকে।
ক্যাপ্টেন জিন্টু গগৈ: ১৭ গাঢ়োয়াল রাইফলসে ছিলেন। নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে বাতালিক সাব-সেক্টরের কালা পাথরে শত্রুপক্ষকে খেদানোর দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনার প্রবল আক্রমণের মুখে পড়ে পিছু হঠতে বাধ্য হয় পাক হানাদাররা।
বেশ কয়েক জন পাক হানাদারকে খতম করেন গগৈ। এই সময় নিজেও গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। মরণোত্তর ‘বীর চক্র’ দেওয়া হয় গগৈকে।
নায়েক ব্রিজ মোহন সিংহ: মাসকো সাব-সেক্টরের ‘সান্ডো টপ’ পাক হানাদারদের দখলমুক্ত করার দায়িত্বে ছিলেন। ৩০ সদস্যের দলে কমান্ডার ছিলেন মোহন। খাড়াই সান্ডো টপ-এ লুকিয়ে শত্রুপক্ষের প্রবল গোলাবর্ষণের জবাব দিতে দিতে পাহাড়ের উপরে উঠতে শুরু করেন তাঁরা।
সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মোহন। তাঁদের মুহূর্মুহু গোলাবর্ষণে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় পাক হানাদাররা। সেই সুযোগে সান্ডো টপ দখলমুক্ত করেন মোহনরা। কিন্তু তত ক্ষণে শত্রুপক্ষের একটা গুলি প্রাণ কেড়ে নেয় তাঁর। তাঁকে মরণোত্তর ‘বীর চক্র’ দেওয়া হয়।
ক্যাপ্টেন শশীভূষণ গিলধিয়াল: পিম্পল ১১ কমপ্লেক্সে আর্টিলারি অবজারভেশন পোস্ট অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন। লক্ষ্য থেকে যখন ৪০০ মিটার দূরে সে সময় কোম্পানি কমান্ডার এবং সেকেন্ড ইন কমান্ড পাক হানাদারদের গুলিতে আহত হন।
সে সময় নিজে দায়িত্ব নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন শশীভূষণ। তিনি নিজেও গুরুতর আহত হন। কিন্তু দলকে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছে দেন।
সুবেদার রঘুনাথ সিংহ: ১৩ জম্মু-কাশ্মীর রাইফেলের প্ল্যাটুন কমান্ডার ছিলেন। মাসকো উপত্যকা থেকে পাক হানাদারদের তাড়ানোর দায়িত্বে ছিলেন তিনি। শত্রুপক্ষের প্রবল গোলাবর্ষণে এগোতে পারছিল না ভারতীয় সেনারা। তখন সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন রঘুনাথ সিংহ। খালি হাতে দুই শত্রুসেনাকে খতম করেন তিনি। ‘বীর চক্র’ দেওয়া হয় তাঁকে।