লখনউয়ের বিক্রমাদিত্য মার্গে সমাজবাদী পার্টির সদর দফতর। দরজার উপরে আজও জ্বলজ্বল করছে নামফলকটি। মুলায়ম সিংহ যাদব, রাষ্ট্রীয় অধ্যক্ষ। কিন্তু মুলায়ম তো আর ওই পদেই নেই!
সমাজবাদী পার্টির রাষ্ট্রীয় অধ্যক্ষ পদে মুলায়ম-পুত্র অখিলেশ যাদবের অভ্যুত্থানের পর দু’দিন কেটে গিয়েছে। সপা-র গোটা দফতরটাই এখন অখিলেশ-অনুগামীদের দখলে। শিবপালকে সরিয়ে সপা-র রাজ্য সভাপতি পদ দখল করা অখিলেশ-অনুগামী নরেশ উত্তম পটেল একটি ঘর দখল করে জাঁকিয়ে বসেছেন। কিন্তু মুলায়মের ঘর এখনও অটুট। সেখানে পা পড়েনি ছেলের।
পিতা-পুত্রে পরস্পরে দ্বন্দ্বে অমঙ্গল— কথাটা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন দু’জনেই। এই অবস্থায় দলের ভাঙন রুখতে আজ রাষ্ট্রীয় অধ্যক্ষের পদ ফের বাবাকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিলেন অখিলেশ। আজ সকালেই দিল্লিতে মুলায়মকে ফোন করেন অখিলেশ। তখনই এই প্রস্তাব দেন তিনি। দলীয় সূত্রের খবর, ফোন পেয়ে ছেলে ‘টিপু’-কে জোর ধমক দেন মুলায়ম। বলেন, টিপু তাঁর
সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাঁর তৈরি দল থেকে তাঁকেই বের করে দিয়েছে। বলতে বলতে কেঁদেও ফেলেন মুলায়ম।
সপা সূত্রের খবর, অখিলেশ বাবাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি যা করেছেন, সবই দলের ভালর কথা ভেবে। তিনি চান অমর সিংহের মতো ‘অমিত শাহর এজেন্ট’-দের তাড়াতে। ছেলের ফোনে শান্ত হয়ে, চাটার্ড বিমানে দিল্লি থেকে লখনউ ফেরেন মুলায়ম। তার পরেই ছেলের সঙ্গে সাড়ে তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন তিনি।
সেই বৈঠকে যে সব মিটে গেল, তা নয়। যাদবকুলের পারিবারিক কলহও থামেনি। সপা-র একটি সূত্রের দাবি, বাবা-ছেলে মিটমাটের চেষ্টা করলেও যাদব-পরিবারের জ্ঞাতিগুষ্টিরা এখনও বাগড়া দিচ্ছেন। তা সে মুলায়ম-শিবিরের শিবপাল হোন বা অখিলেশ-শিবিরের রামগোপাল যাদব। গত কাল মুলায়ম শিবিরের মতোই আজ দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে ‘সাইকেল’ প্রতীকের দাবি জানিয়ে এসেছেন অখিলেশ শিবিরের দূত রামগোপাল। কমিশনকে রামগোপাল জানান, সপা-র ৯০ শতাংশ বিধায়ক অখিলেশের সঙ্গে রয়েছেন। তাই তাঁরাই সপা-র প্রকৃত প্রতিনিধি। দলের প্রতীকও অখিলেশের কাছেই থাকা উচিত। আগামিকাল উত্তরপ্রদেশে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হতে চলেছে। কমিশন জানিয়েছে, বাবা-ছেলে দু’শিবিরই সাইকেলের দাবি জানিয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। একটি সূত্রের খবর, দু-চার দিনের মধ্যে মীমাংসা না হলে সাইকেল
চিহ্ন আপাতত বাজেয়াপ্ত করতে পারে কমিশন।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝেই তাই আজ বৈঠকে বসেন অখিলেশ-মুলায়ম। সপা সূত্রের খবর, সেখানে বাবাকে দলের সুপ্রিমোর সিংহাসন ছাড়তে রাজি হলেও অখিলেশ তিনটি শর্ত দিয়েছেন। এক, ভোট পরিচালনার যাবতীয় ক্ষমতা তাঁর হাতে দিতে হবে। তাঁর কথা অনুযায়ীই প্রার্থী ঠিক হবে। দুই, রাজ্য সভাপতির পদ কাকা শিবপালকে ছাড়তে নারাজ অখিলেশ। শিবপালকে জাতীয় স্তরে কোনও পদ দিয়ে দিল্লি পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। তৃতীয় শর্ত, অমর সিংহকে পার্টিতে ফেরানো হবে না।
অখিলেশের প্রস্তাব শিবপাল পুরোপুরি মানেননি। তাঁর দাবি, জাতীয় স্তরে দায়িত্ব দিলে তাঁকে রামগোপালের থেকে বড় পদ দিতে হবে। তিনি রামগোপালের অধীনে কাজ করবেন না। রামগোপালও শিবপালের সঙ্গে কাজ করতে নারাজ। সপা-র অনেকেই বলছেন, দু’তরফের দুই নেতার জেদে আটকে গেল শান্তির প্রথম প্রচেষ্টা। বাবা-ছেলের বৈঠক শেষে রামগোপালের মন্তব্য, “এই বৈঠকের কোনও অর্থ নেই। কোনও ফয়সালাও হয়নি।’’ একই সুর শিবপালের গলাতেও।
আজম খানের মতো বর্ষীয়ান সপা নেতা এখনও ভাঙন রোখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আজ অখিলেশ-মুলায়মের ফোনালাপের নেপথ্যেও তিনিই। দু’জনকেই আজম বুঝিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশের বহু আসনে মুসলমানেরাই নির্ণায়ক শক্তি। মুলায়মের সঙ্গে মুসলমানদের পুরনো নাড়ির টান। এখন বাবা না ছেলে, এই পরীক্ষার মধ্যে মুসলমানদের না ফেলাই ভাল। অখিলেশ-মুলায়ম দুজনে সে কথা বুঝতেও পারছেন। কিন্তু তা-ও ঝগড়া মিটছে কই!