চণ্ডীগড়ের বর্ণিকা কুণ্ডু থেকে কেষ্টপুরের তরুণী— এঁদের অভিজ্ঞতাগুলো আলাদা, আলাদা। কিন্তু বিচ্ছিন্ন নয়। খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকই জানাচ্ছে, মহিলাদের পিছু নিয়ে উত্যক্ত করার ঘটনা ফি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কিন্তু গোটা দেশে যে পরিমাণ অভিযোগ দায়ের হচ্ছে, তার মধ্যে খুব অল্প ঘটনাতেই শেষ পর্যন্ত শাস্তি পাচ্ছেন অপরাধীরা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সমীক্ষা রিপোর্ট (২০১৬) বলছে, বহু রাজ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করে শাস্তি দিতে ব্যর্থ, যার মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। ২০১৬ সালে দু’শোটি নথিভুক্ত ঘটনায় রাজ্যে এক জনেরও শাস্তি হয়নি এখনও অবধি।
মন্ত্রক জানিয়েছে, ২০১৬ সালে দেশে সবচেয়ে বেশি পিছু নেওয়া বা উত্যক্ত করার ঘটনা ঘটেছে মহারাষ্ট্রে। ওই রাজ্যে মোট ঘটনার সংখ্যা ১৫৮৭টি। কিন্তু শাস্তি পেয়েছেন মাত্র ৩৫ জন। তুলনায় মধ্যপ্রদেশে ৭৬২ জনের নামে অভিযোগ জমা পড়লে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ৫৯ জন। উত্তরপ্রদেশে শেষ এক বছরে তুলনামূলক ভাবে ভাল কাজ করেছে অখিলেশ যাদবের সরকার। ওই রাজ্যে ২০১৬ সালে মোট ৫৮৩টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। যার মধ্যে শাস্তি হয়েছে ২০১ জনের। আর পশ্চিমবঙ্গের চিত্র দেখে হতাশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। রাজ্যে ২১০টি ঘটনার মধ্যে ২০৩টি ঘটনায় চার্জশিট দেওয়া হলেও একজনকেও দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব হয়নি।
স্বরাষ্ট্র কর্তাদের মতে, অভিযোগ করা থেকে অভিযুক্ত গ্রেফতার পর্যন্ত প্রাথমিক পর্বটি সুষ্ঠু ভাবেই হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তী ধাপগুলিতেই সমস্যার শুরু হয়। অভিযুক্তদের জামিনে মুক্তির পরে নির্যাতিতকে ভয় দেখানো, পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আর্থিক প্রলোভন, প্রমাণ জোগাড়ে পুলিশি ব্যর্থতায় অধিকাংশ মামলা ভেস্তে যায়। বহু ক্ষেত্রে নির্যাতিতার পরিবার লোকলজ্জা, সম্মানহানির ভয়ে বিষয়টি চেপে যেতেই পছন্দ করে। ফলে দোষীদের শাস্তি দেওয়ার হার ক্রমশ কমে আসছে গোটা দেশ জুড়েই।
আরও পড়ুন: মৃত মায়ের পাশেই ঘুমিয়ে ছেলে
অথচ রিপোর্টই বলছে, ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে মহিলাদের পিছনে ধাওয়া করার মতো ঘটনা এক লাফে ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬ সালে গোটা দেশে এ ধরনের নথিভুক্ত ঘটনা ঘটেছে ৭২০০টি। যাদের মধ্যে ৭,০৭৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হলেও, দোষী সাব্যস্ত হয়েছে মাত্র ৪৮০ জন। মন্ত্রকের কাছে দুশ্চিন্তার বিষয় হল, শাস্তিপ্রাপ্তদের সংখ্যা কমে আসা। ২০১৪ সালে যেখানে ৩৪.৮ শতাংশ লোকের শাস্তি হয়েছিল, সেখানে ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২৬.৪ শতাংশে। আর ২০১৬ সালে সেটা ১৭ শতাংশের আশেপাশে।