ডোকলাম নিয়ে ভারত-চিন বিবাদ শুরু হয়েছিল ২০১৭-য়। সে সময় কূটনৈতিক স্তরে সমঝোতা হয়েছিল দু’পক্ষের। তার পর কেটে গিয়েছে তিন বছর। এ বার লাদাখ-সহ একাধিক সীমান্ত এলাকায় দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে নতুন করে বিরোধের সূত্রপাত। সীমান্তে সঙ্ঘাতের এই বাতাবরণ ঘিরেই উত্তেজনা বাড়ছে নয়াদিল্লি ও বেজিংয়ের মধ্যে। পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে, চিনা প্রেসিডেন্ট চিনফিং সেনাকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়ায়। চিনকে টক্কর দিতে কতটা তৈরি ভারত? এক নজরে দেখে নেওয়া যাক দেশের বিপুল অস্ত্র সম্ভার।
ভারতের স্থল বাহিনী খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেনা রয়েছে ১২ লক্ষ ৩৭ হাজারেরও বেশি। এ ছাড়াও সংরক্ষিত বাহিনী রয়েছে ৯ লক্ষ ৫০ হাজারেরও বেশি।
অটোম্যাটিক কালাশনিকভ সিরিজের স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ছাড়াও, ভারতের হাতে রয়েছে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্রের সম্ভার। তার মধ্যে রয়েছে টি ৯১অ্যাসল্ট রাইফেল, কার ৮১৬, টিআরজি এম ১০, এম ২৪৯, বিভিন্ন মডেলের মেশিন গান-সহ বহু আগ্নেয়াস্ত্র।
সম্মুখ সমরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র ট্যাঙ্ক। ভারতের হাতে রয়েছে অর্জুন, টি ৯০ ভীষ্ম, টি ৭২ অজেয়-এর মতো মেন ব্যাটল ট্যাঙ্ক। এ ছাড়াও রয়েছে টি ৫৫ ও বৈজয়ন্ত ট্যাঙ্ক। এ দেশে মোট ট্যাঙ্কের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৯৭৮টি।
বিপক্ষের ট্যাঙ্ক ধ্বংস করার জন্য ভারতের হাতে রয়েছে নাগের মতো বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র।
এ ছাড়াও রয়েছে মেশিনগানবাহী গাড়ি। রয়েছে সাঁজোয়া গাড়ি। রয়েছে মাইনের মতো বিস্ফোরক সাফ করার যানও। রয়েছে মাইন বসানোর যানও। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আহতদের উদ্ধার করার জন্য তালিকায় রয়েছে আর্মার্ড অ্যাম্বুল্যান্সও।
ভারতের হাতে রয়েছে ডিআরডিও-র তৈরি করা ২টি অ্যাডভান্সড টাওড আর্টিলারি সিস্টেম।
ভারতের হাতে রয়েছে ১৪৫টি এম ৭৭৭ হাউইৎজার কামান। সেগুলি ২৪ থেকে ৩০ কিমি দূরে গোলাবর্ষণ করতে সক্ষম। এ ছাড়াও রয়েছে এম ৪৬ হাউইৎজার কামান, হুবিটস হাউইৎজার কামান ও ডি ৩০ হাউইৎজার কামান। সেগুলির সংখ্যা সবমিলিয়ে ১৮৬০টি। রয়েছে ধনুষ গোত্রের হাউইৎজার কামানও।
সেনাবাহিনীতে এমকে সিরিজের ফিল্ড গান রয়েছে ১৭০০টি ও হালকা ফিল্ড গান রয়েছে ৭০০-র বেশি।
ভারতের হাতে রয়েছে পিনাকা ও বিএম ২১ গোত্রের রকেট লঞ্চার সিস্টেম। সব মিলিয়ে সেই সংখ্যাটা ২০০-র বেশি।
ভারতের যুদ্ধাস্ত্র সম্ভারের মধ্যে রয়েছে অমোঘ, নাগ, মিলান ২টি, কোমেল-সহ বিভিন্ন রকমের অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মিসাইল।
ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে ভারত। একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে ভারতের। এর মধ্যে অগ্নির সর্বোচ্চ পাল্লা নিয়ে ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বেজিং। পাঁচ থেকে আট হাজার কিমি দূরে আঘাত হানতে সক্ষম অগ্নি ৫। এটা অন্তর্মহাদেশীয় গোত্রের মিসাইল। এ ছাড়াও রয়েছে ব্রহ্মস ও কে সিরিজের বিভিন্ন পাল্লার মিসাইল। রয়েছে অরিহন্ত গোত্রের সাবমেরিন থেকে ছোড়া যায় সাগরিকা নামের ক্ষেপণাস্ত্রও।
এ ছাড়াও পৃথ্বী সিরিজ, প্রহার, নির্ভয়ের মতো নানা পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে ভারতের।
বিভিন্ন রকমের ব্যালিস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম রয়েছে ভারতের হাতে। রয়েছে ভূমি থেকে আকাশে ছোড়ার বিপুল ক্ষেপণাস্ত্রের সম্ভারও। রয়েছে অ্যান্টি এয়ারক্র্যাফ্ট আর্টিলারিও।
স্থলের যুদ্ধের মতো আকাশ যুদ্ধের জন্যও বিপুল সম্ভার মজুত ভারতের হাতে। রয়েছে অ্যাপাশে, হ্যাল রুদ্র, হ্যাল ধ্রুব, হ্যাল লাইট কমব্যাট অ্যাটাক হেলিকপ্টার। এ ছাড়াও রয়েছে প্রয়োজন মাফিক বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য একাধিক কপ্টার।
নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি হ্যাল চিতা, ল্যান্সার, চেতক ও চেতনের মতো কপ্টার রয়েছে ভারতের কাছে। ঝুলিতে রয়েছে একাধিক আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকলও।
ভারতের ঝুলিতে রয়েছে ইজরায়েল থেকে আনা ফ্যালকন রাডার। এ ছাড়াও রয়েছে ইন্দ্র, রাজেন্দ্র, স্বাতী, রোহিণীর মতো অত্যাধুনিক রাডার সিস্টেমও।
ডগফাইট হোক বা বোমাবর্ষণ, ভারতের বিমানবাহিনীতে রয়েছে বিভিন্ন অত্যাধুনিক বিমান। রয়েছে মিগ সিরিজের ১১৯টি বিমান। সুখোই ৩০ রয়েছে ২৭২টি। রয়েছে ৫১টি মিরাজ। এ ছাড়াও ১০৬টি জাগুয়ার ও হ্যাল তেজস রয়েছে ৫১টি। সব মিলিয়ে বিমানের সংখ্যা ৫৪৮টি। তবে এর বাইরেও পরিবহণ, এয়ারলিফট ইত্যাদির জন্য রয়েছে বেশ কিছু বিমান।
ফ্রান্স থেকে ইতিমধ্যেই ভারতের হাতে এসে পৌঁছেছে তিনটি রাফাল যুদ্ধবিমান।
এ ছাড়াও বিভিন্ন রকম যুদ্ধাস্ত্র মালপত্র বয়ে নিয়ে যাওয়া, বাহিনী নিয়ে যাওয়া ও নজরদারির জন্য বিভিন্ন বিমান রয়েছে। রয়েছে ১১টি সুপার হারকিউলিস ও ১১টি গ্লোবমাস্টারের মতো অত্যাধুনিক বিমানও।
আইএনএস অরিহান্ত ও আইএনএস চক্র নামে দুটি পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন রয়েছে ভারতের। ভারতেই তৈরি হয়েছে আইএনএস অরিহান্তের মতো পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন। এটাই সবচেয়ে বড় সাবমেরিন।
রাশিয়ার থেকে লিজে নেওয়া আইএনএস চক্র।
ভারতের হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক স্করপেন গোত্রের অ্যাটাক সাবমেরিন।
ভারতের নৌবহরে রয়েছে ১৪টি সাধারণ সাবমেরিন। এগুলি ডিজেল-ইলেকট্রিক প্রযুক্তিতে চালিত। তার মধ্যে রয়েছে সিন্ধুঘোষ, শিশুমারের মতো অ্যাটাক সাবমেরিন।
নৌবহরে রয়েছে বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রমাদিত্য।
নৌবহরে মিসাইল ডেস্ট্রয়ার রয়েছে ১০টি।
এ ছাড়াও নজরদারি, পাহারা ইত্যাদির জন্য ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের জাহাজ রয়েছে ভারতীয় নৌসেনার। রয়েছে উভচর যুদ্ধজাহাজও।
শুধুমাত্র পরমাণু বোমাই নয়, হাইড্রোজেন বোমা তৈরির প্রযুক্তি রয়েছে ভারতের হাতে। জানা গিয়েছে, ১১০টির মতো পরমাণু বোমা রয়েছে ভারতের হাতে।
স্থল, জল ও অন্তরীক্ষ, এই তিনটি জায়গা থেকেই বিভিন্ন লক্ষ্যে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারে সক্ষম ভারত। তবে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে ভারতের নীতি হল, নো ফার্স্ট ইউজ। অর্থাৎ প্রথমেই পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার নয়। প্রতিপক্ষ ওই অস্ত্র ব্যবহার করলে তবেই জবাব দেবে ভারত।
ডিআরডিও-র তৈরি করা অগ্নি সিরিজের সব ক্ষেপণাস্ত্রই নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বা পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম
ভারতের হাতে রয়েছে অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইলের মতো উন্নততমর অস্ত্রও। এই রকম উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন নিয়ন্ত্রিত (গাইডেড) ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে মহাকাশে অবস্থিত কৃত্রিম উপগ্রহ ধ্বংস করা যায়। বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসাবে ভারতের কাছে এই প্রযুক্তি রয়েছে। ২০১৯-এ অ্যাস্যাট ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা করে ভারত।