ফাইল চিত্র।
গত বছর ৫ জুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করেছিলেন, “উত্তরপ্রদেশের প্রগতিশীল ও কর্মঠ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। তাঁর নেতৃত্বে রাজ্য উন্নতির নতুন শিখরে পৌঁছচ্ছে।”
এ বছর যোগীর জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী কোনও টুইট করেননি। শুধু মোদী নন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও টুইট করে যোগীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাননি।
যোগীর মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর আস্থাভাজন, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রাক্তন আমলা অরবিন্দকুমার শর্মাকে জায়গা করতে দিতে চাইছেন এবং তা নিয়ে মোদী শিবির বনাম যোগী শিবিরের সংঘাত বেঁধেছে বলে এমনিতেই জল্পনা চলছিল। প্রধানমন্ত্রী যোগীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা না-জানানোয় সেই জল্পনা আরও জোরদার হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশ সরকারের একটি সূত্রের দাবি, প্রকাশ্যে শুভেচ্ছা না-জানালেও মোদী ও শাহ, দু’জনেই ফোনে যোগীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। যদিও দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতর বা লখনউয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর সরকারি ভাবে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। বিজেপির একটি সূত্রের বক্তব্য, হতে পারে, কেন্দ্রের সঙ্গে টুইটারের আইনি সংঘাতের জন্যই মোদী টুইট করেননি। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য আজ পরিবেশ দিবস নিয়ে টুইট করেছেন। রাজনাথ সিংহ ও বিজেপির অন্য নেতা-মন্ত্রীরা অবশ্য যোগীকে টুইট করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বিজেপির আর একটি সূত্রের যুক্তি, শুধু যোগী নন। গত দেড়-দু’মাসে প্রধানমন্ত্রী কাউকেই টুইটে শুভেচ্ছা জানাননি। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী, থাওয়র চাঁদ গহলৌত, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টরের জন্মদিন গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁদেরও টুইটে শুভেচ্ছা জানাননি। দেশে কোভিডে বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুকেই টুইটে শুভেচ্ছার প্রতি মোদীর এই বীতরাগের কারণ বলে মনে করছে দলের একটি সূত্র।
কেন্দ্রের মোদীর সরকারের মতো উত্তরপ্রদেশে যোগী সরকারও কোভিডের দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আরএসএস এবং বিজেপি নেতারা উত্তরপ্রদেশে গিয়ে রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মতামত নিয়েছেন। তাঁরা টের পেয়েছেন, অনেক বিজেপি বিধায়কই যোগীর আমলা-নির্ভরতায় ক্ষুব্ধ। গত তিন দিন ধরে দিল্লিতে সঙ্ঘের শীর্ষনেতাদের বৈঠকেও উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিজেপি নেতারা বুঝিয়ে দিয়েছেন, যোগীর নেতৃত্বেই বিজেপি আগামী বছর ভোটে যাবে। তবে রাজ্যে প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়াতে মোদীর আস্থাভাজন অরবিন্দকুমার শর্মাকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসা হতে পারে বলে বিজেপি সূত্রের খবর। বর্তমান দুই উপমুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে কোনও এক জনকে সরিয়ে তাঁকে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন। বিজেপি সূত্রের দাবি, এটাকে মোদীর নজরদারি মনে করে যোগী প্রবল আপত্তি তুলেছেন।
আরএসএস নেতৃত্বের মতে, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় বিজেপি, আরএসএস জনসেবার কাজও ঠিক মতো করতে পারেনি। তৃতীয় ঢেউ এলে তা শোধরাতে হবে। আজ যোগী নিজের জন্মদিনে কোভিডের ফলে বাপ-মা হারা শিশুদের চিহ্নিত করে তাঁদের শিক্ষার বন্দোবস্ত করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি স্বতন্ত্রদেব সিংহও জেলা সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠক করে সংগঠনকে জনসেবায় নামানোর নির্দেশ দিয়েছেন।