(বাঁ দিকে) উদ্ধব ঠাকরে এবং আদিত্য ঠাকরে (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
বয়স চৌত্রিশ, তবে চোখে-মুখে সারল্যের ছাপ। ঠোঁটের ফাঁকে সব সময় হাসি। বালাসাহেব ঠাকরের নাতিকে দেখে মহিলারা এগিয়ে এসে সস্নেহে জয়তিলক এঁকে দেন। আদিত্য ঠাকরের কপালে তবু যেন চিন্তার ভাঁজ।
ওরলি— মুম্বইয়ের কেন্দ্রস্থল, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের ঠিকানা। ভোটার তালিকায় অগুনতি বলিউডের তারকা। এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই লড়ছেন আদিত্য। বাল ঠাকরের নাতি, উদ্ধব ঠাকরের পুত্র, পাঁচ বছরের বিধায়ক হলেও যিনি নিশ্চিন্ত নন। কারণ, ছয় মাস আগে লোকসভা নির্বাচনে ওরলি বিধানসভা এলাকায় উদ্ধবের শিবসেনা মাত্র সাড়ে ছ’হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল। আদিত্যের চিন্তার কারণ অবশ্য শুধু ওরলি নয়। মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচন যে উদ্ধবের শিবসেনার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। উদ্ধবের প্রত্যাবর্তনের পরীক্ষা। ঘুরে দাঁড়ানোর যুদ্ধে জিতে উদ্ধব মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে ফিরতে চান। সেই যুদ্ধে তাঁর প্রধান ভরসা পুত্র আদিত্য।
৬৪ বছর বয়সি উদ্ধবের গত মাসেই অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি হয়েছিল। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরে প্রচারে নামতে পেরেছেন। তার পরেও ৫ নভেম্বর থেকে ৬০টি জনসভা করেছেন উদ্ধব। বাবার অনুপস্থিতি ঢাকতে আদিত্য রাজ্য জুড়ে ৫০টি জনসভা করেছেন। সেই সঙ্গে ওরলিতেও প্রচারে জোর দিতে হয়েছে। কারণ, একনাথ শিন্দের শিবসেনা তাঁর বিরুদ্ধে মিলিন্দ দেওরাকে প্রার্থী করেছে। প্রয়াত কংগ্রেস নেতা মুরলী দেওরার পুত্র মিলিন্দ দক্ষিণ মুম্বইয়ের সাংসদ ছিলেন। অতীতে ঠাকরে পরিবারের সঙ্গে দেওরা পরিবারের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব থাকলেও তা মনে রাখেননি মিলিন্দ।
ওরলিতে প্রচারে আদিত্য বলছেন, ‘‘মহারাষ্ট্রের ঐতিহ্য, বালাসাহেবের ঐতিহ্য রক্ষার জন্য লড়ছি। বিজেপির লক্ষ্য, অন্যান্য আঞ্চলিক দলের মতো শিবসেনাকেও শেষ করা। একনাথ শিন্দে শিবসেনা ভেঙে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। দলের নাম, প্রতীক চুরি করে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’’
একনাথ শিন্দে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করলেও তিনি ঠাকরে পরিবারের বাইরের লোক। ঠাকরে পরিবারের আর এক সদস্য রাজ ঠাকরেও উদ্ধবকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে তৎপর। মুম্বইয়ে এলে মনে হবে, মহারাষ্ট্রে এখন এক জনই ঠাকরে। তাঁর নাম রাজ ঠাকরে। সমস্ত বড় হোর্ডিংয়ে তাঁর ছবি, তাঁর মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার প্রচার। রাজের পুত্র অমিত মাহিমে প্রার্থী। মহারাষ্ট্রের রাজনীতির অলিগলিতে কান পাতলে শোনা যাবে, উদ্ধবকে চাপে ফেলতে রাজকে বিজেপিইমদত দিচ্ছে।
বাল ঠাকরেরা আট ভাইবোন ছিলেন। বাল ঠাকরে ও তাঁর ভাই শ্রীকান্ত দুই বোন মীনা ও কুন্দকে বিয়ে করেছিলেন। শ্রীকান্তের ছেলে রাজ প্রথম শিবসেনা এবং ঠাকরে পরিবারে ভাঙন ধরিয়ে আলাদা দল গড়েছিলেন। পারিবারিক সৌজন্য মেনে উদ্ধব ভাইপো অমিতের বিরুদ্ধে মাহিমের প্রচারে যাননি। রাজ ওরলিতে প্রচার করলেও আদিত্যকে নিশানা করেননি। তবে উদ্ধবকে ছেড়ে কথা বলছেন না। রাজের অভিযোগ, ‘‘উদ্ধব নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে ছত্রপতি শিবাজি, বীর সাভারকরকে অপমান করা কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। উদ্ধব নিজেই বিশ্বাসঘাতক। বাল ঠাকরের নীতি বিসর্জন দিয়ে নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।’’
এই সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে উদ্ধবের একমাত্র অস্ত্র সহানুভূতি। প্রচারে বলছেন, বিজেপি বাল ঠাকরের শিবসেনার সাহায্যেই মহারাষ্ট্রে নিজের শক্তি বাড়িয়েছে। তার পরে বাল ঠাকরের তৈরি শিবসেনাকেই শেষ করতে উদ্যত হয়েছে। বাল ঠাকরের পুত্রকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে উৎখাত করেছে। এই অঙ্কেই শুধু মুম্বইয়ের ৩৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে উদ্ধব একা ১৫-১৬টি আসন জেতার আশা করছেন।
শুধু সহানুভূতিতে লাভ হবে? বিজেপির অঙ্ক— সহানুভূতির সুফল উদ্ধব লোকসভা ভোটে পেয়েছেন। বিধানসভাতে আর তা মিলবে না। উদ্ধবের মিডিয়া উপদেষ্টা হর্ষল প্রধানের দাবি, “মরাঠীরা যা মনস্থ করেন, তার পরিণতি দেখে ছাড়েন। উদ্ধবকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে হটানো হয়েছিল। বিধানসভা ভোটে মানুষ জবাব দেবেন। মহা বিকাশ আঘাড়ী মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় ফিরবে।’’
আঘাড়ী ক্ষমতায় ফিরলেও উদ্ধব কি মুখ্যমন্ত্রী হবেন? রাজনীতির অঙ্ক বলছে, উদ্ধবের শিবসেনা, কংগ্রেস, শরদ পওয়ারের এনসিপি-র জোটে উদ্ধবের ঝুলিতে সবথেকে কমআসন থাকবে। তা হলে কি মহা বিকাশ জিতলে মুখ্যমন্ত্রী হতে ফের বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাবেন উদ্ধব?আদিত্যের উত্তর, ‘‘এ সব গুজব বিজেপি ছড়াচ্ছে। কারণ, বিজেপি এখন উদ্ধব ঠাকরে ছাড়া খারাপ ফলের আশঙ্কা করছে।’’