গুরপতবন্ত সিংহ পন্নুন। —ফাইল চিত্র।
খলিস্তানি জঙ্গি গুরপতবন্ত সিংহ পন্নুনকে খুনের চেষ্টায় অভিযুক্ত তিনি। কিন্তু এ নিয়ে কিছুই জানে না তাঁর পরিবার। বরং হরিয়ানার প্রাণপুরা গ্রামে বসে তাঁর আত্মীয় অবিনাশ জানালেন, তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে বিকাশের। তিনি জানিয়েছেন, এ সবই ভুয়ো রিপোর্ট।
ঘটনা হল, আমেরিকান সরকার তাদের অভিযোগে সরাসরি জানিয়েছে পন্নুনকে হত্যার জন্য টাকার জোগান দেওয়া ও খুনি ভাড়া করার ব্যবস্থা করেছিলেন বিকাশ। তাদের দাবি, বিকাশ ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা র-এর কর্মী। ভারত সরকারের পাল্টা দাবি, বিকাশ এখন আর ভারত সরকারের কর্মী নন। বরং তাঁকে দিল্লি পুলিশ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে অপহরণ ও তোলাবাজির মামলায় গ্রেফতার করেছিল দিল্লি পুলিশ। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে জামিন পান তিনি। এই সূত্রে এই ঘটনায় জড়িয়েছে মহারাষ্ট্রের নেতা ও সলমন খানের বন্ধু বাবা সিদ্দিকির হত্যায় অভিযুক্ত গ্যাংস্টার লরেন্স বিশ্নোাইয়ের নাম। বিকাশের বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগকারী ব্যবসায়ী দাবি করেন, লরেন্সই তাঁকে অপহরণ করার জন্য বিকাশকে ‘সুপারি’ দিয়েছিল।
তবে দিল্লি থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে হরিয়ানার প্রাণপুরায় বসে বিকাশের তুতো ভাই অবিনাশ বললেন, ‘‘ও গুপ্তচর সংস্থায় কাজ করত কি না আমরা জানি না। আমার সঙ্গে অনেক বার কথা হয়। কিন্তু ও কিছু বলেনি। আমরা এখনও জানি ও সিআরপি-তে কাজ করে। প্যারাট্রুপারের প্রশিক্ষণও নিয়েছে।’’
বিকাশ কোথায় আছেন তা অবিনাশ জানেন না। তবে তিনি তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন অবিনাশ। মেয়ের জন্ম হয়েছে গত বছর।
আমেরিকার অভিযোগে একই রকম ধাক্কা খেয়েছেন বিকাশের মা বছর পঁয়ষট্টির সুদেশ যাদব। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কী বলব বলুন? আমেরিকা সত্য বলছে কি না তা আমি জানি না। তবে ও দেশের জন্য কাজ করে।’’
আমেরিকার অভিযোগ অনুযায়ী, বিকাশ আর এক ভারতীয় নাগরিক নিখিল গুপ্তের মাধ্যমে এক খুনিকে ১৫ হাজার ডলার দেন। সেই খুনি আবার এফবিআই-এর চর ছিল। ফলে গোটা ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যায়।
প্রাণপুরায় বসে অবিনাশ যাদবের প্রশ্ন, ‘‘কোথা থেকে এত টাকা আসবে? আপনি কি এখানে বাড়ির বাইরে অডি-মার্সিডিজ় দেখতে পাচ্ছেন।’’
প্রাণপুরার অধিকাংশ পরিবারের সদস্যেরাই বাহিনীতে কাজ করেন। বিকাশের বাবা কাজ করতেন বিএসএফে। অন্য দিকে তাঁর ভাই কাজ করেন হরিয়ানা পুলিশে।
বিকাশের আর এক তুতো ভাই অমিত যাদবের কথায়, ‘‘বিকাশ স্বভাবত চুপচাপ। অ্যাথলেটিক্সে আগ্রহ ছিল। ও জাতীয় স্তরের শুটারও।’’ তাঁর কথায়, ‘‘একমাত্র ভারত সরকার ও বিকাশই জানে কী হয়েছিল। ভারত সরকারের উচিত সত্য
আমাদের জানানো। যদি সরকার আধাসেনার অফিসারের পাশ থেকে সরে দাঁড়ায় তাহলে কে তাদের হয়ে কাজ করবে?’’
রণকৌশলগত বিশেষজ্ঞদের মতে, চরেদের ক্ষেত্রে সব সময়েই নানা কাহিনি তৈরি করা হয়। গুপ্তচরদের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘কাভার স্টোরি’। বিশেষ বিশেষ অভিযানের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে তৈরি হয় সেই ‘কাভার স্টোরি’। যাতে অভিযান হিসেব মতো না চললেও এজেন্ট বা দেশের স্বার্থকে যতদূর সম্ভব রক্ষা করা যায়।