এমভিএ-র ইস্তাহারে জনগণনার প্রতিশ্রুতি
Maharashtra Assembly Election 2024

মহারাষ্ট্রে খয়রাতিতেই ভরসা রাখছে দুই শিবির

মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে ভোটারদের মন জয়ে আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অমিত শাহ দলের তরফে ‘সঙ্কল্প পত্র’ প্রকাশ করেন। সেখানে যে ২৫ দফা প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তাতে মূলত মহিলা-কৃষক ও যুব সমাজের ভোটকেই নিশানা করেছে বিজেপি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:৪৩
Share:

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।

মূলত খয়রাতির রাজনীতিকে হাতিয়ার করে মহারাষ্ট্রের ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে ইস্তাহার প্রকাশ করল যুযুধান বিজেপি ও ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ। আজ এনডিএ তথা মহাযুতি জোটের বড় শরিক বিজেপি নিজেদের ইস্তাহারে রাজ্যের মহিলাদের ২১০০ টাকা মাসিক সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাল্টা মহাবিকাশ আঘাড়ী তথা ইন্ডিয়া মঞ্চের প্রতিশ্রুতিতে রয়েছে, মহিলাদের মাসিক তিন হাজার টাকা ও বিনামূল্যে বাসে সফর।

Advertisement

রাজনীতিকদের মতে, মূলত কর্নাটকের মডেলে মহারাষ্ট্রে বিজেপি-জোটকে ধরাশায়ী করার কৌশল নিয়েছে কংগ্রেস-এনসিপি-শিবসেনা (ইউবিটি) মঞ্চ। আজ নিজেদের প্রতিশ্রুতিতে ক্ষমতায় এলেই জাতগণনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইন্ডিয়া মঞ্চ গেরুয়া শিবিরের অস্বস্তি অনেকটাই বাড়িয়েছে।

মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে ভোটারদের মন জয়ে আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অমিত শাহ দলের তরফে ‘সঙ্কল্প পত্র’ প্রকাশ করেন। সেখানে যে ২৫ দফা প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তাতে মূলত মহিলা-কৃষক ও যুব সমাজের ভোটকেই নিশানা করেছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে বিভিন্ন বক্তব্যে খয়রাতির রাজনীতির সমালোচনা করলেও ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে সেই খয়রাতির পথেই হেঁটেছেন বিজেপি তথা মহাযুতি নেতৃত্ব। সঙ্কল্প পত্রে বলা হয়েছে, এনডিএ সরকার ক্ষমতায় এলে লাডলি বহিন যোজনায় মহিলারা মাসিক পনেরোশো টাকার পরিবর্তে একুশশো টাকা করে বছরে ২৫ হাজার টাকা পাবেন। মূলত মহিলাদের ভোট নিশ্চিত করতেই ওই প্রকল্পে মাসিক অনুদান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। বিজেপির ব্যাখ্যা, মধ্যপ্রদেশে একই ধাঁচের প্রকল্প দলকে জিতিয়ে আনতে সাহায্য করেছিল। তাই মহারাষ্ট্রেও ওই সমীকরণ মেনেই এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। কিন্তু বিরোধী শিবির তাদের প্রতিশ্রুতিতে পাল্টা মহিলাদের মাসে তিন হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করায় অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবির। পরিস্থিতি সামলাতে তাই কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গের বক্তব্যকে হাতিয়ার করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদের কথায়, কর্নাটকে খয়রাতির রাজনীতি করতে গিয়ে কোষাগার ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। একই অবস্থা হিমাচলপ্রদেশ, তেলঙ্গানার মতো কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যে। তাই খড়্গে দলীয় নেতৃত্বকে খয়রাতির রাজনীতি থেকে বিরত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মহারাষ্ট্রবাসী কখনই চাইবেন না, তাঁদের রাজ্যে আর্থিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ুক।

Advertisement

প্রকাশ্যে বিজেপি নেতৃত্ব বিরোধী রাজ্যগুলিকে আর্থিক শৃঙ্খলার কথা মনে করিয়ে দিলেও বিজেপি নিজের ‘সঙ্কল্প পত্রে’ সেই খয়রাতির পথেই হেঁটেছে। দিল্লিতে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি নীতির সমালোচনায় বিজেপি সরব হলেও মহারাষ্ট্রে কিন্তু কেজরীওয়ালের পথে হেঁটে বিদ্যুৎ বিলে ৩০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়ার ঘোষণা করেছে দল। এ ছাড়া কৃষকদের ভোট পেতে কৃষক সম্মান নিধি যোজনায় ১২ হাজার টাকার পরিবর্তে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে অন্তত কুড়ি শতাংশ বাড়ানোর কথা ঘোষণা করা হয়েছে, যা মহারাষ্ট্রের মতো কৃষিপ্রধান রাজ্যে কৃষকদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল। কৃষকদের সার কেনার প্রশ্নে রাজ্যকে যে জিএসটি দিতে হয়, তা-ও মুকুবের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। গরিবদের জন্য পাকা ঘর ও খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রবীণদের ভোট পেতে বয়স্ক ভাতা ১৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২১০০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে সঙ্কল্প পত্রে। রাজ্যের ১৫ হাজার গ্রাম পাকা রাস্তা দিয়ে জোড়ার পাশাপাশি আশা কর্মীদের ভাতা ১৫০০ টাকা করার ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া যুব সমাজের ভোট নিশ্চিত করতে ১০ লক্ষ শিক্ষার্থীকে মাসে দশ হাজার টাকা করে অনুদান ও ২৫ লক্ষ নতুন চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের কটাক্ষ, এক সময়ে বছরে দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। এখন নতুন করে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুব সমাজকে বিভ্রান্ত করার কৌশল নিয়েছে এনডিএ জোট।

অন্য দিকে, এমভিএ জোট এ দিন তাদের ‘মহারাষ্ট্র নামা’ প্রকাশ করে জানিয়েছে, রাজ্যের সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে এটা করা হয়েছে। ‘মহারাষ্ট্র নামা’ নামের ওই প্রতিশ্রুতি পত্রের লক্ষ্য হল, মহারাষ্ট্রের কৃষক ও কৃষিক্ষেত্রের উন্নতি সাধন, শিল্পের বিকাশ, নগরোন্নয়ন, পরিবেশ রক্ষা ও জনকল্যাণ। আজ ‘মহারাষ্ট্র নামা’ উদ্বোধন করে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে দাবি করেন, তাঁদের প্রতিশ্রুতি পত্র কার্যকর হলে মহারাষ্ট্রের প্রতিটি পরিবার বছরে তিন লক্ষ টাকার সরকারি সাহায্য পাবেন। ইন্ডিয়া জোটের ব্যাখ্যা, প্রতিটি পরিবারের মহিলারা মাসে তিন হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য পাবেন। পাশাপাশি কর্নাটকের ধাঁচে এ রাজ্যেও মহিলারা বিনামূল্যে বাস পরিষেবার সুযোগ পাবেন। কৃষকেরা যাতে সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারেন, সে জন্য পাঁচ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি বেকার যুবকেরা প্রতি মাসে চার হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন বলেও জানানো হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে স্বাস্থ্য খাতে ২৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমার সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্যবাসীর জন্য বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণের ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে ইন্ডিয়া জোট।

বিজেপি নেতৃত্ব জাতগণনার প্রশ্নে সম্পূর্ণ নীরব হলেও ইন্ডিয়া জোট নিজেদের প্রতিশ্রুতি পত্র ‘মহারাষ্ট্র নামা’-য় সেই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছে। খড়্গে জানান, ক্ষমতায় এলে সবার আগে রাজ্যে জাতগণনা হবে। সংরক্ষণের প্রশ্নে যে ৫০ শতাংশ সীমা রয়েছে, তা তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। লোকসভা ভোটের প্রচারে জাতগণনার পক্ষে সওয়াল করে দলিত, পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ভোট টানতে সক্ষম হয়েছিল ইন্ডিয়া জোট। এ ক্ষেত্রেও তাই তফসিলি জাতি, জনজাতি ও ওবিসি সমাজের ভোট নিশ্চিত করতে জাতগণনার ও সংরক্ষণের সর্ব্বোচ্চ সীমা তুলে দেওয়ার পক্ষে জোরালো ভাবে সওয়াল করেছে ইন্ডিয়া জোট। এ প্রসঙ্গে অমিত শাহের কটাক্ষ, ‘‘আসলে এরা জাতগণনার নামে সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে। পরিবর্তে সেই সংরক্ষণ উলেমা কাউন্সিলের দাবি মতো মুসলিমদের দেওয়ার দাবিকে মেনে নিয়েছে কংগ্রেস।’’ যদিও ওই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কংগ্রেসের বক্তব্য, ভোটে হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের লক্ষ্যেই অমিত শাহ ওই মিথ্যে প্রচার করছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement