প্রতীকী ছবি।
করোনা সংক্রমণের আবহে ‘এক দেশ এক ভোট’-সংক্রান্ত বিতর্ক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফের উস্কে দিলেন বটে, কিন্তু সংবিধান সংশোধন ছাড়া তার বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলেই মনে করছে নির্বাচন কমিশন।
বহু দিন ধরেই বিজেপির একটি অংশ লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে করার কথা বলছে। মোদী ক্ষমতায় এসে এর পক্ষে সওয়াল শুরু করেন। গত বছর স্বাধীনতা দিবসের দিন লালকেল্লা থেকে দেওয়া ভাষণেও বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি। গত কাল সংবিধান দিবসে তিনি ফের বলেন, “এ’টি এখন সময়ের দাবি।” অর্থনীতিবিদ বিবেক দেবরায় ও কিশোর দেশাই পরিসংখ্যান তুলে ধরে দেখিয়েছেন, ২০০৯ সালের ভোটে ১,১১৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। সেখানে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোট করতে খরচ হয় ৩,৮৭০ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদদের মতে, একসঙ্গে ভোট হলে বিধানসভা ভোটের আলাদা প্রস্তুতি খাতে খরচ করার প্রয়োজন হবে না। সরকারেরও যুক্তি, খরচ তো কমবেই, সেইসঙ্গে নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে সরকারি প্রকল্পে যে নীতি-পঙ্গুত্ব তৈরি হয়, তা-ও এড়ানো যাবে।
কিন্তু নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, আইন কমিশন ২০১৮ সালের ৩০ অগস্ট যে রিপোর্ট সরকারকে জমা দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে— বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী এক সঙ্গে ভোট করা সম্ভব নয়। এর জন্য জনপ্রতিনিধিত্ব আইন সংশোধন ছাড়াও সংবিধানে অন্তত পাঁচটি পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশির মতে, আদর্শগত ভাবে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে? তাঁর মতে, যদি ১৯৯৮ সালের মতো ১৩ দিনে কেন্দ্রের সরকারের পতন হয়, সে ক্ষেত্রে কী হবে? সে ক্ষেত্রে কি জনমত অগ্রাহ্য করে রাজ্যের সরকারও ভেঙে দিয়ে নতুন করে লোকসভা-বিধানসভা নির্বাচন হবে? একই ভাবে কোনও রাজ্যের শাসক দল যদি নির্বাচনের এক বছরের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ফেলে, সে ক্ষেত্রে রাজ্যের ভবিষ্যৎ ঘিরেও প্রশ্ন উঠবে। সেই পরিস্থিতিতে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়ে ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে চলে যাওয়ার কথা। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির মতে, এ হল বিজেপির পিছন দরজা দিয়ে রাজ্যগুলির ক্ষমতা দখলের চেষ্টা। সিপিএম নেতৃত্বের মতে, বিজেপির লক্ষ্য হল, দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করা। কুরেশির মতে, এক সঙ্গে গোটা দেশে লোকসভা-বিধানসভা নির্বাচন হলে যে পরিমাণ ইভিএম, ভিভিপ্যাট প্রয়োজন, তা ভারতের নেই। এ ছাড়া, সংবিধান বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য— একটি ভোটের প্রভাব অন্য ভোটে পড়ার সম্ভাবনাও রয়ে যায়।
আরও পড়ুন: সম্পর্ক মজবুত করতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসনের সঙ্গে বৈঠক মোদীর
বিশেষজ্ঞদের একাংশ আবার বলছেন— দু’ধাঁচের ভোট এক সঙ্গে হলে, ফায়দা পাবে জাতীয় দলগুলি। বিশেষ করে বিজেপির মতো ধনী দল। গোড়া থেকে একসঙ্গে ভোটের প্রশ্নে আপত্তি তৃণমূলের। তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “অর্থনীতির বেহাল দশা, কৃষক-বিক্ষোভ, ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা থেকে নজর ঘোরাতে এই গুরুত্বহীন বিষয়ে সরব বিজেপি নেতৃত্ব।”
আরও পড়ুন: জাল নোটের মামলায় এনামুলের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ এনআইএ-র