Special Session of Parliament

‘বাস্তুশাস্ত্র’ মেনে তৈরি সংসদ ভবনে আজ অধিবেশন

আজ থেকে সংসদে বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়েছে। পুরনো সংসদ ভবনের লোকসভা ও রাজ্যসভাতেই সংবিধান পরিষদ থেকে ৭৫ বছরের সংসদীয় যাত্রাপথ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:০৭
Share:

গণেশ চতুর্থীর দিনই নতুন সংসদ ভবনে শুরু হচ্ছে বিশেষ অধিবেশন। —ফাইল চিত্র।

লোকসভা, রাজ্যসভার অধিবেশন সবেমাত্র মুলতুবি হয়েছে। শেষ হয়েছে পুরনো সংসদ ভবনে শেষ দিনের অধিবেশন। সেখান থেকে বার হয়ে এক বিজেপি সাংসদ নতুন সংসদ ভবনের দিকে তাকিয়ে বলছিলেন, ‘‘দেখুন, সব কিছু বাস্তুশাস্ত্র মেনে হয়েছে। ঠিক বেছে বেছে গণেশ চতুর্থীর দিনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন সংসদ ভবনে অধিবেশন শুরু করছেন।’’

Advertisement

আজ থেকে সংসদে বিশেষ অধিবেশন শুরু হয়েছে। পুরনো সংসদ ভবনের লোকসভা ও রাজ্যসভাতেই সংবিধান পরিষদ থেকে ৭৫ বছরের সংসদীয় যাত্রাপথ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামিকাল সকালে পুরনো সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে একটি অনুষ্ঠান হবে। তার পরে দুপুর থেকে নতুন সংসদ ভবনে বসবে অধিবেশন। আজ সকালে সংসদে অধিবেশনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘আশা করি, পুরনো-খারাপ দিকগুলি ছেড়ে, উত্তম থেকে উত্তম ভালগুলি সঙ্গে নিয়ে নতুন ভবনে প্রবেশ করব। আগামিকাল গণেশ চতুর্থীর পবিত্র পর্ব। গণেশকে বিঘ্ন কাটানোর দেবতা মানা হয়। এ বার ভারতের বিকাশ যাত্রায় কোনও বিঘ্ন আসবে না।’’

গত ২৮ মে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন হয়। কিন্তু তার পরে সংসদের বাদল অধিবেশন বসেছিল পুরনো ভবনেই। বিরোধী সাংসদেরা বলছেন, এখন স্পষ্ট যে বিনায়ক দামোদর সাভারকরের জন্মবার্ষিকীতে সংসদ ভবন উদ্বোধন করবেন বলেই মোদী ২৮ মে-কে বেছে নেন। এ বার গণেশ চতুর্থীর দিনটি নতুন সংসদ ভবনে কাজ শুরুর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

সরকারি ভাবে না মানলেও বিজেপি সাংসদেরা বলছেন, পুরনো সংসদ ভবনে বাস্তুদোষ রয়েছে বলে মনে করা হত। নতুন সংসদ ভবন তৈরি হয়েছে ‘বাস্তুশাস্ত্র’ ও ‘সনাতন পরম্পরা’ মেনে। অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের আমলেই প্রশ্ন উঠেছিল, ব্রিটিশদের তৈরি পুরনো সংসদ ভবনে বাস্তুদোষ রয়েছে কি না। লোকসভার তৎকালীন স্পিকার জি এম বালাযোগী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। এ ছাড়াও ওই সময় মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জন সাংসদের। তদানীন্তন স্পিকার মনোহর জোশীর মনে হয়েছিল, ব্রিটিশ স্থপতি এডউইন লাটিয়েন্স, হার্বার্ট বেকারদের তৈরি বৃত্তাকার সংসদ ভবনে
বাস্তুদোষ রয়েছে।

দিল্লির অন্যতম স্থপতি হার্বার্ট বেকারের পরিকল্পনা ছিল, কাউন্সিল হাউস হবে তিন কোণা। কিন্তু অন্য স্থপতি লাটিয়েন্স তাতে আপত্তি তুলে বলেছিলেন, কাউন্সিল হাউস হবে বৃত্তাকার। তাঁর মতেই সিলমোহর পড়েছিল। দিল্লিতে তৈরি হয়েছিল বৃত্তাকার কাউন্সিল হাউস, এখনকার সংসদ ভবন। বেকার বা লাটিয়েন্স কেউই জানতেন না, প্রায় ১০০ বছর পরে তাঁদের তৈরি সংসদ ভবনের সামনেই তৈরি হবে ত্রিকোণাকার নতুন সংসদ ভবন। বেকার প্রথমে ঠিক যেমনটা ভেবেছিলেন।

মনোহর জোশী সে সময় বাস্তু বিশেষজ্ঞ অশ্বিনীকুমার বনসলকে ডেকে সংসদ ভবনে বাস্তু দোষ খতিয়ে দেখতে বলেছিলেন। জানা যায়, বনসল তাঁর রিপোর্টে বেশ কিছু বাস্তুদোষ তুলে ধরেছিলেন। যদিও তা কখনও প্রকাশ্যে আসেনি। পরে সেই রিপোর্ট ধামাচাপা পড়ে যায়। ইউপিএ সরকারের আমলে লোকসভার স্পিকার মীরা কুমার পুরনো ভবনের সমস্যার জেরে নতুন ভবনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিলেন। মোদী জমানায় সেই কাজ শুরু হয়।

পদ্মশিবিরের সাংসদেরা বলছেন, নতুন ভবনে বাস্তুশাস্ত্রের দিকটি নজরে রাখা হয়েছে। নতুন ত্রিকোণাকার সংসদ ভবনে ছ’টি মূল দ্বারে ছ’টি পৌরাণিক পশুপাখির মূর্তি বসিয়ে, তাদের নামেই ফটকের নামকরণ হয়েছে। উত্তর দিকে রয়েছে গজদ্বার। তারপরে একে একে গরুড়, অশ্ব, শার্দুল, মকর, হংস দ্বার তৈরি হয়েছে। সবই বাস্তুশাস্ত্র মেনে।

পুরনো ভবনে আগামিকাল সকল সাংসদের ছবি একসঙ্গে তোলা হবে। তার পরে সেন্ট্রাল হলে সংসদীয় ঐতিহ্য উদ্‌যাপন করতে এবং ২০৪৭-এ উন্নত ভারতের প্রতিজ্ঞা করতে একটি অনুষ্ঠান হবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী, উপরাষ্ট্রপতি, স্পিকারের সঙ্গে লোকসভা, রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে লোকসভার সব চেয়ে পুরনো সাংসদ হিসেবে মেনকা গান্ধী, রাজ্যসভার সব চেয়ে পুরনো সাংসদ মনমোহন সিংহ, শিবু সোরেনদের। এই অনুষ্ঠানের পরে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা দল বেঁধে নতুন সংসদ ভবনে যাবেন। সূত্রের খবর, সকলের হাতে সংবিধান থাকতে পারে। নতুন ভবনে অধিবেশন শুরু উপলক্ষে সকল সাংসদকে একটি ব্যাগে করে সংবিধান, পুরনো সংসদ ভবনের ইতিহাস, স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে প্রকাশিত বিশেষ মুদ্রা ও ডাকটিকিট উপহার দেওয়া হচ্ছে।

পুরনো সংসদ ভবনে আজ শেষ দিন অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যাওয়ার পরে সেন্ট্রাল হলে, লোকসভা, রাজ্যসভায় একসঙ্গে ছবি তুলেছেন সকল সাংসদ। বিজেপি, কংগ্রেস— শাসক, বিরোধী সব দলের সাংসদেরাই বিবাদ ভুলে পুরনো সংসদ ভবনের স্মৃতিচারণা করেছেন। পুরনো ভবনে শেষ দিনের স্মৃতি মোবাইলের ক্যামেরায় বন্দি করে নিয়েছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement