ফাইল চিত্র।
বৃহস্পতিবার লোকসভায় নির্ধারিত সময়ের কম বলতে দেওয়ার অভিযোগে সংসদের ভিতরে ও বাইরে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তৃণমূলের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। রাতে টুইট করে এবং চ্যানেলের সামনেও সেই ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। আজ মহুয়ার নাম না-করে স্পিকার লোকসভার প্রশ্নোত্তর পর্বের পরে একটি দীর্ঘ বিবৃতি দিয়ে গত কালের ঘটনা নিয়ে গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি বিপক্ষ দলের নেতাদেরও বিষয়টি নিয়ে বলতে অনুরোধ করেন স্পিকার।
মহুয়া মৈত্রের নাম কেউই নেননি। কিন্তু সার্বিক ভাবে শুক্রবারের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন প্রায় সব বিরোধী দলের নেতা। তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “লোকসভা তথা সংসদের সম্মান এবং গরিমাকে বজায় রাখা অবশ্য কর্তব্য। সেই গরিমা যাতে বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” বিপক্ষ নেতাদের বলার পরে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, “গত কাল যা হয়েছে, তা দুর্ভাগ্যপূর্ণ। তা কারও ভাল লাগেনি। লোকসভার মর্যাদা সর্বদা পালন করা উচিত।”
গত কাল রাতে মহুয়া টুইট করে বলেন, “লোকসভার স্পিকারের আমাকে অন্তত ১৩ মিনিট ধার্য করার কথা ছিল। তাঁর চেম্বারে গিয়ে যখন এই নিয়ে মুখোমুখি হলাম, উনি দাবি করলেন তিনি সেই সময়ে আসনে ছিলেন না। তাই তাঁকে দোষ দেওয়া চলে না। এর পর আরও কোণঠাসা হওয়ার পরে উনি বললেন, ‘এটা আমার মহানুভবতা যে, আমি আপনাকে অন্তত ১৩ মিনিট সময় দিয়েছি।’ অবিশ্বাস্য!” এখানেই না থেমে মহুয়া রাতে একটি চ্যানেলকেও তাঁর বক্তৃতার সময় আসনে থাকা রমা দেবী সম্পর্কে বলেন। তাঁর কথায়, “আমার আর এক অনুচ্ছেদ বাকি ছিল, যা আমাকে পড়তে দেওয়া হল না। অনেক বার অনুরোধ করেছি।…রমা দেবী আমায় বলছেন, আমি কেন রেগে কথা বলছি? আমি রেগে বলব না, ভালবেসে বলব, না দয়া দেখিয়ে বলব— আপনি এ সব কথা আমাকে বলার কে? সেটা একান্তই আমার ব্যাপার।”
এই মন্তব্যগুলি স্পিকারের অফিসে পৌঁছে যাওয়ার পরেই সক্রিয়তা শুরু হয়। আজ স্পিকার ওম বিড়লা বলেন, “সংসদের ভিতরে ও বাইরে স্পিকারের আসন নিয়ে মন্তব্য করা সংসদের গৌরবের পক্ষে অত্যন্ত অমর্যাদাকর। সংসদ গণতন্ত্রের মর্যাদাস্বরূপ।” তাঁর বক্তব্য, গত কাল যা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যপূর্ণ। সংসদের ভিতরে মতবিরোধ হতে পারে, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় সে সম্পর্কে মন্তব্য করা একেবারেই অনুচিত। তিনি এর পর একে একে বিরোধী নেতাদের আহ্বান করেন এই নিয়ে কিছু বলতে।
তৃণমূল কংগ্রেসের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, শিবসেনার অরবিন্দ সাওয়ন্ত, ডিএমকে-র এ রাজা, টিআরএস-এর নাগেশ্বর রাও, এনসিপি-র সুপ্রিয়া সুলে, এনসি-র ফারুক আবদুল্লা, বিএসপি-র রীতেশ পাণ্ডে, বিজেডি-র ভ্রাতৃহরি মহতাব, আরএসপি-র এন কে প্রেমচন্দ্রন— সকলেই স্পিকারের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। অনেককেই গতকালের ঘটনার জন্য গভীর দুঃখপ্রকাশ করতে দেখা যায়। সুলে বলেন, “আমি আজ অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে বলতে উঠেছি। কাল যা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। সংসদের নিয়ম রয়েছে মেনে চলার জন্যই। আমরা ভাল ব্যবহার করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” বিজেডি-র ভ্রাতৃহরি বলেন, “আমি অত্যন্ত দুঃখিত। গত কালের ঘটনার আমিও সাক্ষী।” ঘটনাচক্রে আজই তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারকে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার উপরে বলার জন্য পাঁচ মিনিট সময় ধার্য করেন স্পিকার।