স্মরণে: ইন্দিরা-স্মৃতি সংগ্রহশালায় সনিয়া গাঁধী ও সস্ত্রীক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। পিটিআই
মনমোহন সিংহের প্রশংসা। সেটাই পরোক্ষে নরেন্দ্র মোদীকে সমালোচনা। সনিয়া গাঁধীর বর্ণনায় মনমোহন যেন নরেন্দ্র মোদীর মূর্তিমান বিপ্রতীপ।
ইন্দিরা গাঁধীর ১০১তম জন্মবার্ষিকীতে আজ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের হাতে ২০১৭-র ইন্দিরা গাঁধী শান্তি, নিরস্ত্রীকরণ ও উন্নয়ন পুরস্কার তুলে দিল ইন্দিরা গাঁধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। সেই পুরস্কারের মঞ্চে ট্রাস্টের চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধী তাঁর বক্তৃতায় মনমোহনের প্রশংসা করতে গিয়ে নাম না করে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ফারাকটাই তুলে ধরেন। মনমোহন জমানাতেই যে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার তুঙ্গে পৌঁছেছিল, তা মনে করিয়ে দিয়ে সনিয়া বলেন, ‘‘মনমোহন তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় দেশের জন্য গোটা বিশ্বের সম্মান আদায় করেছেন। কিন্তু তার জন্য আলাদা করে কৃতিত্ব দাবি করতে হয়নি বা হাততালি চাইতে হয়নি। তিনি তাঁর কাজকেই তাঁর হয়ে কথা বলতে দিয়েছেন।’’
অনুষ্ঠানে রাহুল গাঁধী উপস্থিত থাকলেও তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। শুধু সকালে টুইট করে ইন্দিরাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘‘ক্ষমা সাহসীদের সদ্গুণ।’’ আজ সকালে মোদীও টুইট করে ইন্দিরাকে শ্রদ্ধা জানান। তবে সংসদের ইন্দিরা স্মরণ অনুষ্ঠানে রাজনাথ সিংহ, লালকৃষ্ণ আডবাণীরাই ছিলেন, মোদী যাননি। পরে হরিয়ানায় নতুন এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করতে গিয়ে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে কাজে ঢিলেমির অভিযোগ তোলেন মোদী। নাম না করে তারই জবাবে পরে সনিয়া বলেন, ‘‘ইন্দিরাজিকে তাঁর ঠাকুরদা বলেছিলেন, কিছু লোক কাজ করে, কিছু লোক কৃতিত্ব নেয়। প্রথম দলে থাকার চেষ্টা করবে।’’
এ বারে পুরস্কার-প্রাপক বাছাইয়ের জন্য গঠিত জুরির নেতৃত্বে ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। মনমোহনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘‘আমার বাবা আমাকে আইনজীবীদের কথা শোনার পরামর্শ দিয়েছিলেন। মনমোহন সিংহ যে ভাবে সংসদে বসে মন দিয়ে বিতর্ক শোনেন, ওঁর সমালোচকদের কথাও শোনেন, তাতে মনে হয়, উনি বিচারপতি হলে আমার থেকেও ভাল বিচারপতি হতেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘মনমোহন ছাড়া আর কে সংখ্যালঘুদের মধ্যে আস্থা জুগিয়েছেন যে তাঁরা সুরক্ষিত!’’
এর পরেই বলতে ওঠেন সনিয়া। তিনি বলেন, ‘‘মনমোহন সিংহের আচরণ এমন যে মনে হয়, উনি জন্ম থেকেই প্রাজ্ঞ। উনি সততা, বুদ্ধিমত্তা, নম্রতা, গাম্ভীর্যের প্রতীক। উনি বড় বড় দাবি করেন না। ফাঁপা, অবাস্তব দর্প
দেখান না। নিজেকে তুলে ধরতে বাগাড়ম্বর করেন না। মিথ্যে তথ্য, বিকৃত
ইতিহাস পেশ করেন না। খারাপ, বিষাক্ত ভাষাও ব্যবহার করেন না।’’
মনমোহন তাঁর নিজের বক্তৃতায় বিশ্বায়নের বিপরীতে পৃথিবী জুড়ে সঙ্কীর্ণ জাতীয়তাবাদ মাথা চা়ড়া দেওয়ার প্রবণতা নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যদি সব দেশই শুধু নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়, দর কষাকষিতে আসতে না চায়, তা হলে উভয়ের লাভের জন্য সহযোগিতার জায়গাটা কোথায় বাঁচবে?’’