কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে মনমোহন সিংহ ও সনিয়া গাঁধী। শনিবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
সংসদে পাশ হওয়া নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) প্রত্যাহার ও জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি-র (এনপিআর) প্রক্রিয়া রদ করার দাবি তুললেন সনিয়া গাঁধী। এই দাবিতে সায় দিলেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও। একই সঙ্গে সনিয়া জানিয়ে দিলেন, এ বছরের এনপিআর-এর মোড়কেই যে আসলে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) লুকিয়ে আছে, সে বিষয়ে কোনও সংশয় থাকা উচিত নয়।
বিরোধী শিবিরের সবথেকে বড় দল কংগ্রেস সিএএ এবং এনপিআর নিয়ে এতটা কঠোর অবস্থান নিলেও আনুষ্ঠানিক ভাবে তাদের রাজ্যগুলিকে কোনও নির্দেশ দিচ্ছে না। কিন্তু দলের সূত্র বলছে, সোমবারই বিরোধী দলগুলির বৈঠক রয়েছে দিল্লিতে। সব বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলি বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করতে পারে, তাদের রাজ্যে সিএএ এবং এনপিআর বলবৎ হবে না। তা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যে বিরোধ তৈরি হতে পারে। সেটি কী ভাবে নিষ্পত্তি হবে, রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ প্রয়োজন নাকি আদালতে গিয়ে মীমাংসা করা হবে, সেই বিষয় নিয়ে বিরোধী শিবিরে সবিস্তার আলোচনা করা প্রয়োজন।
সনিয়া গাঁধীর উদ্যোগে সোমবারের বিরোধী শিবিরের বৈঠকের আগে আজ কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হয় দিল্লিতে এআইসিসি দফতরে। বৈঠকের শুরুতেই সনিয়া গাঁধী বলেন, ‘‘বিজেপি সরকার আসলে গোটা দেশেই এনআরসি করতে চেয়েছিল। কিন্তু অসমের অভিজ্ঞতার পর এখন এনপিআর নিয়ে এসেছে। যেটি আসলে এনআরসি-র জন্যই পদক্ষেপ। রাজ্যে রাজ্যে আমাদের অভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’
আরও পড়ুন: দিল্লি পুলিশকে দুষে বিচার চাইছেন ঐশী
কংগ্রেস সভানেত্রীর মতে, এই নাগরিকত্ব আইন যে বৈষম্য ও ধর্মীয় ভিত্তিতে বিভাজন তৈরির জন্য, সব দেশভক্ত, সহিষ্ণু, ধর্মনিরপেক্ষ ভারতীয় জানেন। রোজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও কখনও প্রধানমন্ত্রী উস্কানি দিচ্ছেন। ছাত্ররা পথে নেমেছেন, প্রবল ঠান্ডাতেও আন্দোলন করছেন, তা-ও পুলিশের নির্মম অত্যাচার হচ্ছে, বিরুদ্ধ স্বর রোধের চেষ্টা হচ্ছে। দিল্লি, উত্তরপ্রদেশকে পুলিশ-রাষ্ট্র তৈরি করা হয়েছে। কংগ্রেস সূত্রের মতে, বৈঠকে প্রিয়ঙ্কাও বলেন সিএএ-এনআরসি নিয়ে কংগ্রেসের লড়াই লাগাতার চালিয়ে যেতে হবে। সংখ্যার জোরে যুবক-ছাত্রদের স্বর দমিয়ে অসংবেদনশীল ভাবে মোদী সরকার নিজেদের মেরুকরণের রাজনীতি করছেন।
ইতিমধ্যেই অনেক রাজ্য সিএএ ও এনপিআর না-করার কথা ঘোষণা করেছে। কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও সেই পথ অনুসরণ করেছেন। কিন্তু কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, রাজ্য এমন কাজ করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হবে। সেটি বুঝেই আজ ওয়ার্কিং কমিটি আলাদা করে কোনও নির্দেশিকা জারি করেনি। বৈঠকে পি চিদম্বরম পরামর্শ দেন, বিধানসভার হাতেই ক্ষমতা আছে। সেই মোতাবেক কংগ্রেসের নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘রাজ্য কী করবে, আমরা কোনও নির্দেশ দেব না। রাজ্য এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে স্বাধীন।’’