পরবর্তী শুনানি আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর। ফাইল চিত্র।
আইনসভায় পাশ হওয়া কোনও বিল বা আইনের বিরুদ্ধে নাগরিককে মত প্রকাশ থেকে বিরত করা বাকস্বাধীনতার অধিকার এবং গণতান্ত্রিক নীতিকে লঙ্ঘন করে। একটি মামলার প্রেক্ষিতে দিল্লি হাই কোর্টে এই মতই জানিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী এবং কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। ২০২০ সালে দিল্লি হিংসার সময় তাঁরা কোনও ঘৃণাভাষণ দেননি বলে দাবি করেছেন মা ও ছেলে। তাঁদের দাবি, জাতীয় স্বার্থের পক্ষে হানিকর এমন কিছু তাঁরা করেননি। ষড়যন্ত্র করেই তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। পরবর্তী শুনানি আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর।
সিএএ-এনআরসি বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলন ২০২০ সালে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে হিংসা পর্যন্ত গড়িয়েছিল। সিএএ-এনআরসি বিরোধী বিক্ষোভে ঘৃণাভাষণ দিয়েছেন, এই অভিযোগে সনিয়া, রাহুলের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের আবেদন জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা করে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারা এ ব্যাপারে তদন্তের জন্য নিরপেক্ষ বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠনের আবেদন করেছিল। শুধু সনিয়া, রাহুল নয়, আরও অনেক নেতানেত্রীকে ওই মামলায় নোটিস পাঠায় হাই কোর্ট।
ওই নোটিসের জবাব আজ দিয়েছেন মা ও ছেলে। তাঁদের বক্তব্য, জাতীয় স্বার্থের পক্ষে হানিকর কোনও মামলা তাঁদের বিরুদ্ধে গঠন করা যায় না। বেছে বেছে তাঁদের নিশানা করা হচ্ছে, যার পিছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র আছে বলেও অভিযোগ রাহুল, সনিয়ার। দু’জনের অভিমত, বিরোধী শিবিরের শীর্ষ নেতা হিসাবে সরকারের পেশ করা বিলের সমালোচনা, তার বিরোধিতা করতে দেশবাসীকে ডাক দেওয়া তাঁদের মৌলিক কর্তব্য। তাঁদের ব্যাখ্যা, ‘‘সংসদে গৃহীত কোনও বিল নিয়ে জনস্বার্থে সুনির্দিষ্ট মতামত গঠন, মত প্রকাশ করা থেকে এক জন নাগরিককে নিবৃত্ত করা যুক্তিযুক্ত বিধিনিষেধ নয়, তা আমাদের গণতন্ত্রের মূল নীতিগুলিকে লঙ্ঘন করে। সংসদে পাশ করা কোনও বিল বা আইনের বিরুদ্ধে মত প্রকাশে নাগরিককে বাধা দেওয়ার মানে অবাধ বাকস্বাধীনতাকেই অস্বীকার করা।’’
একই সঙ্গে সনিয়া ও রাহুল আবেদন জানিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে করা জনস্বার্থ মামলাটি খারিজ করা হোক। বছর দু’এক আগে দিল্লি হিংসায় ঘৃণাভাষণের অভিযোগ উঠেছিল অনুরাগ ঠাকুর, কপিল মিশ্র, পরবেশ বর্মার মতো বেশ কয়েক জন বিজেপি নেতার। সে দিকে ইঙ্গিত করে সনিয়া এবং রাহুল তাঁদের বক্তব্যে জানিয়েছেন, ক্ষমতাসীন দলের বহু সদস্য এমন অনেক ভাষণ দিয়েছেন, যেগুলি সংশ্লিষ্ট আবেদনে যে যে ধারা টেনে আনা হয়েছে, তার আওতায় পড়ে। কিন্তু আবেদনকারী সে গুলি বেমালুম চেপে গিয়েছেন, যা তাঁরা গোটা প্রয়াসের চরিত্রকেই পক্ষপাতদুষ্ট করে তুলেছে।
২০২০ সালে উত্তর-পূর্ব দিল্লি হিংসার সিট তদন্তের দাবিতে পেশ হওয়া একগুচ্ছ আবেদন হাইকোর্টের বিচারাধীন। সেগুলিতে বলা হয়েছে, ঘৃণাভাষণ দেওয়া রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হোক, কর্তব্য পালনে ব্যর্থ পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করতে হবে।