প্রিয়ঙ্কা গাঁধী।
বছরে বিঘা প্রতি ৫০০ টাকা। জমির মালিকের হাতে ভাড়া গুণে দিতে হত সোনভদ্রের গোন্ড আদিবাসী পরিবারগুলিকে। তার বিনিময়েই জমি চাষ করতে লাঙল নিয়ে মাঠে নামার ছাড়পত্র মিলত। সঙ্গে ছিল মৌখিক আশ্বাস। এই জমি কখনও বিক্রি করা হবে না।
১৯৫৫ থেকে এ ভাবেই আদিবাসীরা জমি ভাড়ায় নিয়ে চাষ করছিলেন। কিন্তু পরের পর প্রজন্ম চাষ করলেও উত্তরপ্রদেশের সরকারের থেকে জমির অধিকার বা পাট্টা মেলেনি। প্রশাসনের কাছে হাত জোড় করাটাই বিফলে গিয়েছে। শেষে সেই জমি দখলের সামনে রুখে দাঁড়াতে গিয়েই প্রাণ দিতে হল আদিবাসীদের।
সোনভদ্রে আদিবাসী কৃষকদের উপর গুলি চালনার ঘটনায় অনেকেই সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের ছায়া দেখছেন। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে শিল্পের জন্য সরকার চাষিদের জমি অধিগ্রহণ করতে গিয়েছিল। সোনভদ্রে জমির দখল নিতে গিয়েছিল গ্রামপ্রধান। আদিবাসীদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে সেই জমিই পরে বেসরকারি শিল্প সংস্থাকে বেচে দেওয়া হতো বলে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ।
সমাজকর্মীরা জানাচ্ছেন, আদিবাসীরা ওই জমিতে চাষ করেন। পরের পর প্রজন্ম ভিটে তৈরি করে বাস করেন। কিন্তু জমির পাট্টা পান না তাঁরা। তারপর আচমকা সেই জমি কারখানার জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু পাট্টা না থাকায় এক পয়সাও ক্ষতিপূরণ পান না আদিবাসীরা। গোটা দেশের এই সমস্যাই সোনভদ্রের হিংসার মূলে রয়েছে বলে মনে করছেন সামাজিক আন্দোলনকারীরা। ইউপিএ সরকার জঙ্গলের জমিতে আদিবাসীদের অধিকার সুনিশ্চিত করতে অরণ্যের অধিকার আইন এনেছিল। কিন্তু সেই আইন মেনেও বনবাসীদের পাট্টা না দেওয়ায় সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ১০ লক্ষ বনবাসীর ভিটেমাটি ছাড়া হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সোনভদ্রের জমি জঙ্গলের জমি না হলেও, সেখানেও আদিবাসীদের জমির উপরে কোনও অধিকার ছিল না। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালার অভিযোগ, ‘‘আদিত্যনাথের সরকার বেআইনি ভাবে জমি গ্রামপ্রধান যজ্ঞদত্ত ভুরিয়ার নামে হাতবদল করে দেয়।’’
তথ্য বলছে, সোনভদ্রের ৯০ বিঘা জমিতে গোন্ডেরা ১৯৫৫ থেকে চাষ করছিলেন। ওই জমিই ছিল তাঁদের ভিটেমাটি। ১৯৫৫-তে ‘আদর্শ সমবায় সোসাইটি’-র জমি বেচা হয়। কিন্তু ১৯৬৬-তে সোসাইটির মেয়াদ ফুরোনোর পরে জমির কোনও মালিকানা ছিল না। ১৯৮৯-তে সোনভদ্রের প্রাক্তন জেলাশাসক প্রভাত মিশ্র জমি নিজের নামে করে নেন। ২০১৭-য় সেই জমিই গ্রামপ্রধান যজ্ঞদত্তকে বেচা হয়। সোনভদ্রের পরিস্থিতি দেখে ফেরা সিপিএমের প্রতিনিধি দলের নেতা হীরালাল যাদবের অভিযোগ, ‘‘যোগী সরকারের প্রত্যক্ষ মদতেই আদিবাসীদের জমি হাতবদল হয়।’’ গত ৬ জুলাই আদিবাসীরা জেলা প্রশাসনের কাছে আর্জি জানান। তা খারিজ হয়ে যায়। এরপরেই ১৭ জুলাই জমি দখল করতে গিয়ে যজ্ঞদত্তের গুণ্ডাবাহিনী গুলি চালায়। যজ্ঞদত্ত গুজ্জর সমাজের সদস্য। উত্তরপ্রদেশের ওই এলাকায় অধিকাংশ জমির মালিক এই গুজ্জররাই।
আদিবাসী অধিকার আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্র জেলাতেই অরণ্যের এলাকা সবচেয়ে বেশি। অথচ অরণ্যের অধিকার আইনে সোনভদ্রের সিংহভাগ আদিবাসীর পাট্টার দাবি খারিজ হয়ে গিয়েছে। কয়েক দশকের দাবির পরে গোন্ডেরা ২০০২-তে তফসিলি জনজাতির মর্যাদা পেয়েছেন। কিন্তু তাঁদের জমি থেকে উৎখাত করে বাঁধ, কয়লা খনি, অ্যালুমিনিয়াম ও সিমেন্ট কারখানা তৈরি হয়েছে। এ বারও সোনভদ্রের উমভা গ্রামে সেই লক্ষ্যেই জমি দখল করার চেষ্টা হচ্ছিল বলে অভিযোগ।