চাপের মুখে সোনভদ্রে গিয়ে যোগীর তোপ কংগ্রেসকে

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মৃতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের ঘোষণার পাশাপাশি গোটা ঘটনার দায় চাপালেন রাজ্যে তিন দশক আগে শেষ বার ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেস সরকারের ঘাড়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৯ ০৩:০১
Share:

সোনভদ্রে গিয়ে আহতদের সঙ্গে দেখা করলেন যোগী আদিত্যনাথ। রবিবার। ছবি: পিটিআই।

জমি বিবাদে গত বুধবার সোনভদ্রে দশ আদিবাসীর মৃত্যুর চার দিন পরে অবশেষে সেখানে পা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। ওই ঘটনার পরেই কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার সফরকে কেন্দ্র করে জাতীয় রাজনীতি তোলপাড় হয়েছে। অবশেষে চাপের মুখে সোনভদ্রে যাওয়ার কথা গত কাল জানান মুখ্যমন্ত্রী। এবং চার দিন পরে ঘটনাস্থলে পা রেখে টেনে আনলেন সেই দলীয় রাজনীতিই।

Advertisement

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মৃতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের ঘোষণার পাশাপাশি গোটা ঘটনার দায় চাপালেন রাজ্যে তিন দশক আগে শেষ বার ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেস সরকারের ঘাড়ে। উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের দলিত-বিরোধী মনোভাব নিয়ে বিরোধীদের সব অভিযোগ উড়িয়ে যোগীর দাবি, সোনভদ্রের ঘটনা আসলে সরকারের বিরুদ্ধে একটি বড় মাপের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। যার পিছনে রয়েছে কংগ্রেস। মূলত যার সঙ্গে পাল্লা দিতে যোগীর আজকের সফর বলে মনে করা হচ্ছে, সেই প্রিয়ঙ্কা এই সফরকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘দেরিতে হলেও পীড়িতদের পাশে দাঁড়ানো সরকারের কর্তব্য।’’

গত শুক্রবার নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে যে ভাবে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী উত্তরপ্রদেশে ছুটে বেড়িয়েছেন, তাতে ঘুম ছুটেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। বিশেষ করে গত কাল যে ভাবে নির্যাতিতরা প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে দেখা করার জন্য জোট বেঁধেছিলেন, তাতে অশনি সঙ্কেত দেখছে গেরুয়া শিবির। তাই দিল্লির সদর দফতর থেকে আদিত্যনাথকে বার্তা দেওয়া হয়, দ্রুত পীড়িতদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সেই নির্দেশ মেনেই আজ সোনভদ্রে পৌঁছন আদিত্যনাথ। কংগ্রেস নিহতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাকে টেক্কা দিতে সাড়ে ১৮ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেন যোগী। শুরুতে ক্ষতিপূরণের এই অঙ্কটাই ছিল মাত্র ৫ লক্ষ টাকা।

Advertisement

কিন্তু তাতেও মানুষের ক্ষোভ কমছে কই! আজ আদিত্যনাথের সামনেই অনেক গ্রামবাসী নিজেদের ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানান, কী ভাবে পুলিশের মদতে সে দিন হামলা চালানো হয়েছিল। অবিলম্বে গ্রামে নিরাপত্তার বাড়ানোর দাবি তুলেছেন গ্রামবাসীরা। দাবি উঠেছে পলাতক অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারেরও। রাজীব-কন্যা টুইট করে বলেন, ‘‘নির্যাতিতদের সমর্থনে কয়েক হাজার কংগ্রেস কর্মী পথে নামার পরেই উত্তরপ্রদেশ সরকার বুঝতে পারে যে, বিষয়টি গুরুতর। দেরিতে হলেও যোগীর সোনভদ্র সফরকে স্বাগত। সরকারের উচিত পীড়িতদের পাশে দাঁড়ানো। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে ওই গ্রামটি ন্যায়বিচারের প্রতীক্ষায় রয়েছে। আশা করি, তাঁদের পাঁচ দফা দাবি মেনে আজ মুখ্যমন্ত্রী যা ঘোষণা করেছেন, তা দ্রুত বাস্তবায়িত হবে। আদিবাসীদের জমির মালিকানা দেওয়ার পাশাপাশি দোষীদের দ্রুত সাজা এবং গ্রামবাসীরা যেন পূর্ণ সুরক্ষা পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।’’

মোদী সরকারের প্রথম পর্বে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দলিত ও আদিবাসীদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। গো-রক্ষার নামে দলিতদের উপর আক্রমণ, মহারাষ্ট্রের ভীমা-কোরেগাঁও সংঘর্ষ, উত্তরপ্রদেশের মুজফফ্‌রনগরের দলিত ও উচ্চবর্ণের সংঘর্ষের একের পর এক ঘটনায় ব্যাপক মুখ পোড়ে বিজেপির। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে মোদী যতই ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশে’র পাশাপাশি ‘সবকা বিশ্বাস’ জেতার দাবি করুন না কেন, দেশের নানা প্রান্তে দলিত-নির্যাতনের ঘটনা কিন্তু ঘটেই চলেছে। তার মধ্যেই সোনভদ্রের ঘটনা নতুন করে অস্বস্তির মুখে ফেলেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। ফিরিয়ে এনেছে মোদী সরকারের প্রথম পর্বের স্মৃতিকেই।

সরকারের দায় এড়াতে গত কাল থেকেই গোটা ঘটনার জন্য তিন দশক আগের কংগ্রেস সরকারের নীতিকে দায়ী করে দফায় দফায় সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী ও তাঁর দুই উপ-মুখ্যমন্ত্রী।। আজও সোনভদ্রে দাঁড়িয়ে আদিবাসী হত্যার পিছনে বড় মাপের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব তুলে যোগী বলেন, ‘‘ওই জমিটি ১৯৫৫ সালে একটি ট্রাস্টকে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৮৯ সালে কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় থাকাকালীন ফের ওই জমি ব্যক্তিগত মালিকদের ফিরিয়ে দেয়। সেই ব্যক্তিগত মালিকেরা ২০১৭ সালে জমিটি গ্রামপ্রধানকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন।’’ যোগীর দাবি, তাতে মদত দিয়েছিল কংগ্রেসই। যোগীর মতে, কংগ্রেসের সেই পাপের ফলই ভোগ করতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement