অরুণা শানবাগ
পুলিশ তার খোঁজ পায়নি এখনও। কিন্তু মরাঠি একটি স্থানীয় কাগজের সাংবাদিক তার হদিস পেয়েছেন বলে দাবি।
সোহনলাল বাল্মিকী। ভারতে নিষ্কৃতি-মৃত্যু বিতর্কের অন্যতম মুখ অরুণা শানবাগকে নির্মম ভাবে ধর্ষণের পিছনে এই ব্যক্তির দিকেই আঙুল উঠেছিল। তবে ধর্ষণ নয়, অরুণাকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে সাত বছর জেল খেটে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিল এই সোহনলাল।
চার দশক ধরে প্রায় জড় পদার্থের মতো কেইএম হাসপাতালে কোমায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন ওই হাসপাতালেরই নার্স অরুণা শানবাগ। এ মাসেরই ১৮ তারিখ মারা যান তিনি। যে ব্যক্তি অরুণার ওই শোচনীয় অবস্থার জন্য দায়ী, কেইএম হাসপাতালের সেই অস্থায়ী জমাদার সোহনলাল বাল্মিকী কিন্তু এত দিন লোকচক্ষুর অন্তরালেই ছিল। অরুণার মৃত্যুর পরে সোহনলালের নাম আলোচনায় উঠে এলেও পুলিশ থেকে শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ— কেউই জানত না সে কোথায় রয়েছে। অরুণার সাংবাদিক বন্ধু যিনি তাঁকে নিয়ে বইও লিখেছেন, সেই পিঙ্কি ভিরানি জানিয়েছিলেন, কেইএম হাসপাতালের ওয়ার্ড-বয়দের সঙ্গে কথা বলে তিনি সোহনলাল সম্পর্কে কিছু তথ্য পেয়েছিলেন। পিঙ্কির দাবি, ওই ঘটনার পরে সোহনলাল দিল্লি চলে যায়। নিজের পরিচয় বদলে অন্য হাসপাতালে কাজ নেয়।
তবে মরাঠি কাগজের এক সাংবাদিক তার খোঁজ পেয়েছেন গাজিয়াবাদের পারপা নামে একটি গ্রামে। ওই সংবাদপত্রের অন্তত সেই রকমই দাবি। সোহনলাল নাকি সেই গ্রামে মজুরের কাজ করে। মরাঠি সাংবাদিকের বক্তব্য অনুযায়ী, ওই ব্যক্তি নাকি মনেই করতে পারছে না, ১৯৭৩-এর ২৭ নভেম্বর ঠিক কী ঘটেছিল। উল্টে সোহনলাল নাকি দাবি করেছে, ‘‘আপনারা ওই ঘটনাকে ধর্ষণ বলছেন কেন, সেটাই বুঝতে পারছি না!’’ যদিও সে কোনও দিন দিল্লিতে কাজ করেনি বলেই সাংবাদিকের কাছে জানিয়েছে সোহনলাল।
সোহনলালের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে শুনে মুম্বই পুলিশ জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে আর কোনও নতুন মামলা দায়ের করা হবে কি না, সে ব্যাপারে আইনি পরামর্শ চাইবে তারা। কারণ সোহনলাল খুনের চেষ্টার অভিযোগে ইতিমধ্যেই সাজা খেটে ১৯৮০ সালে মুক্তি পেয়েছে। অথচ ৪২ বছর আগে যে নারকীয় অত্যাচার সে অরুণার উপরে চালিয়েছিল, সেই ভয়ঙ্কর ধর্ষণের জন্য সাজা হয়নি তার। ’৭৩ সালের ২৭ নভেম্বরের সেই রাতে অরুণার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সোহনলাল। অরুণা যাতে পালাতে না পারেন, সে জন্য তাঁর গলায় কুকুর বাঁধার চেন পেঁচিয়ে দেয়। ধর্ষণ করতে গিয়ে সে দেখে অরুণার ঋতুস্রাব চলছে। বিরক্ত হয়ে সোহনলাল তখন পায়ুসঙ্গম করে। ওই অবস্থাতেই ১১ ঘণ্টা পড়ে ছিলেন অরুণা। কিন্তু ভারতীয় আইনে তখন পায়ুসঙ্গম অপরাধ হিসেবে গণ্য হতো না। ২০১৩ সালে এই ‘অপ্রাকৃতিক’ সঙ্গমকে ধর্ষণের আওতায় আনা হয়।