Karnataka Assembly Election Results

নির্বাচনের আগে ৪৬টি জনসভা, ২৬ কিমি রোড শো, তবু ‘মোদী-ম্যাজিক’ কাজে এল না কর্নাটকে

কর্নাটকে বিজেপির হারকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পরাজয় হিসেবেই তুলে ধরল কংগ্রেস। কংগ্রেসের যুক্তি, ‘জয় বজরংবলী’-র জয়ধ্বনি তুললেও মোদীর মেরুকরণ ও সাম্প্রদায়িকতার কৌশলও কাজ করেনি।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৩ ০৭:৪১
Share:

গত ছয় মাসে প্রধানমন্ত্রী সরকারি বা দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে ১১ বার কর্নাটকে গিয়েছেন। তবু লাভ হল না। ছবি: পিটিআই।

কর্নাটকে ভোটের আগের দু’সপ্তাহে নরেন্দ্র মোদী একাই ১৯টি জনসভা করেছিলেন। আধডজন ‘রোড-শো’ করেছিলেন। তার মধ্যে বেঙ্গালুরুর একটি রোড-শো ২৬ কিলোমিটার লম্বা ছিল। শুধু শেষ দু’সপ্তাহ নয়। গত ছয় মাসে প্রধানমন্ত্রী সরকারি বা দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে ১১ বার কর্নাটকে গিয়েছেন। মোট ৪৬টি জনসভা করেছেন।

Advertisement

হিমাচলের পর কর্নাটক জয়, রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র প্রভাব কতটা?

ফলাফল দেখুন

এত কিছুর পরেও কর্নাটকে বিজেপির হারকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পরাজয় হিসেবেই তুলে ধরল কংগ্রেস। কংগ্রেসের যুক্তি, ‘জয় বজরংবলী’-র জয়ধ্বনি তুললেও নরেন্দ্র মোদীর মেরুকরণ ও সাম্প্রদায়িকতার কৌশলও কর্নাটকে কাজ করেনি। বরং তাদের দাবি, রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রার সুফল কর্নাটকের ভোটে মিলেছে। মোদীর বিদ্বেষ, বিভাজনের রাজনীতিতে তৈরি ‘ঘৃণার বাজার’ খারিজ করে কর্নাটকের মানুষ রাহুলের ‘ভালবাসার বিপণি’ বেছে নিয়েছেন। রাহুল নিজে অবশ্য কর্নাটক জয়ের সাফল্য দাবি করেননি। দলের নেতা-কর্মীদের কৃতিত্ব দিয়ে তাঁর বক্তব্য, গরিব মানুষের শক্তি মুনাফাখোর শিল্পপতিদের শক্তিকে হারিয়ে দিয়েছে। কংগ্রেস গরিবের সমস্যা নিয়ে লড়েছে। ঘৃণা, কটু কথা দিয়ে ভোটে না লড়ে ভালবাসা নিয়ে ভোটে লড়েছে কংগ্রেস। বিজেপির পাল্টা দাবি, বেঙ্গালুরু শহর এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর রোড-শোয়ের সুবাদেই বিজেপির আসন বেড়েছে। গত ভোটের তুলনায় প্রায় চল্লিশটি আসন খুইয়ে বিজেপি হারলেও সার্বিক ভাবে দলের ভোটের হার কমেনি।

Advertisement

কংগ্রেস ও বিজেপি নিজেদের জাতীয় নেতৃত্বের গরিমা প্রচার করলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কর্নাটকে কংগ্রেসের জয়ের আসল কারিগর রাজ্যের দুই নেতা—প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এস সিদ্দারামাইয়া এবং প্রদেশ সভাপতি ডি কে শিবকুমার। দু’জনেই মাঠে নেমে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। রাজ্যের সমস্যা, বিজেপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগেই কংগ্রেসের প্রচারের অভিমুখ ধরে রেখেছেন। তাঁদের সঙ্গে বিজেপির বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই, বি এস ইয়েদুরাপ্পা এঁটে উঠতে পারেননি বলেই কংগ্রেস জিতেছে। কংগ্রেস সভাপতি, দলিত নেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে নিজে কর্নাটকের নেতা হওয়ার সুফলও মিলেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আরও মত, গান্ধী পরিবার বা কংগ্রেসের জাতীয় নেতৃত্ব দীর্ঘ দিনই রাজ্যের ভোটে প্রভাব ফেলতে পারেন না। এখন দেখা যাচ্ছে, মোদীর পক্ষেও বিধানসভা ভোটে সবসময় খেলা ঘোরানো সম্ভব হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গ থেকে পঞ্জাব, হিমাচল থেকে কর্নাটকের ভোটের ফল তারই প্রমাণ।

কংগ্রেসের যুক্তি, কর্নাটকের বিজেপি সরকারের দুর্নীতি, ৪০ শতাংশ হারে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ ধামাচাপা দিতে প্রধানমন্ত্রী নিজের নামে ভোট চেয়েছিলেন। তাঁকে কংগ্রেস ৯১ বার কটু কথা বলেছে বলে সহানুভূতি কুড়োনোর চেষ্টা করেছিলেন। কংগ্রেস নির্বাচনী ইস্তাহারে বজরং দলকে নিষিদ্ধ করার কথা বলায় মোদী ধর্মের নামে ভোট কুড়োতে জনসভায় ‘জয় বজরংবলী’ স্লোগান তুলেছিলেন। জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নের নরম হওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। ভারত থেকে কর্নাটককে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনার অভিযোগ তুলেছিলেন সনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে। এবং কর্নাটকের বিজেপি সরকারের ব্যর্থতাকে ধামাচাপা দিয়ে কেন্দ্রের সাফল্য তুলে ধরতে ‘ডাবল ইঞ্জিনের সরকার’-এর উপকারিতার কথাও বলেছিলেন। তার পরেও বিজেপি হেরেছে।

আর যে বিজয়নগরের হাম্পিতে (হাম্পি হনুমানের জন্মস্থান বলে অনেকের বিশ্বাস) প্রথম কংগ্রেসের বিরুদ্ধে হনুমানকে অপমান করার অভিযোগ তুলে মোদী বজরংবলীর জয়ধ্বনি দিয়েছিলেন, সেই বিজয়নগরে বিজেপি হেরেছে, কংগ্রেস জিতেছে। এক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, ‘‘মোদী যে দিন থেকে বজরঙ্গবলীর নামে স্লোগান দিয়েছেন, দলিত মুসলিমরা এককাট্টা হয়ে কংগ্রেসে ভরসা রেখেছেন। আগে তাঁরা জেডিএস-কে ভোট দিতেন। এ ছাড়া শহুরে, শিক্ষিত মানুষের বড় অংশ বজরং দলকে নিয়ে এই বাড়াবাড়ি পছন্দ করেননি।

সিদ্দারামাইয়া এ দিন বলেন, ‘‘এটা নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে রায়। তাঁর মতো আর কোনও প্রধানমন্ত্রী বিধানসভা ভোটে এ ভাবে প্রচারে নামেননি। মোদী নিজেও তাঁর সরকারের প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি, মানুষ তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন।’’ বিজেপির বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইয়ের পাল্টা দাবি, প্রধানমন্ত্রী মোদী যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। বিজেপির যুক্তি, বিজেপির আসন ২০১৮-র তুলনায় প্রায় চল্লিশটি কমলেও ভোটের হার একই রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুহাস পাশলিকরের প্রশ্ন, ‘‘বজরংবলীর জয়ধ্বনি কি তা হলে বিজেপির খাতায় কোনও ভোট যোগ করেনি? না কি বজরংবলীর নামেপাওয়া ভোট যোগ করার পরেই বিজেপি এই ভোট পেয়েছে? সে ক্ষেত্রে মোদীর নিজস্ব ভোট ছাড়া বিজেপির ফল কী হত?”

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ

কংগ্রেসের দাবি, রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রার সুফল কর্নাটকের ভোটে মিলেছে। কর্নাটকের সাতটি জেলার ২০টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে দিয়ে রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রা গিয়েছিল। তার মধ্যে ১৫টি কংগ্রেস জিতেছে। বিজেপি পেয়েছে মাত্র দু’টি। পাঁচ বছর আগে কংগ্রেস এই ২০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৫টি পেয়েছিল। বিজেপি পেয়েছিল ৯টি। দলের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশেরও ব্যাখ্যা, কর্নাটকে কংগ্রেস জিতেছে। প্রধানমন্ত্রী হেরেছেন। কারণ, বিজেপি কর্নাটকের ভোটকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে গণভোট হিসেবে তুলে ধরেছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement