নরেন্দ্র মোদীর সরকারের কাছে আবার জবাব চাইছেন বিরোধীরা। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
কালো টাকা কি ফিরল দেশে? নগদ টাকায় দুর্নীতির কারবারে কি লাগাম পড়ল? নোটবন্দির সিদ্ধান্তকে এই একটিই প্রশ্ন গত ছ’বছর ধরে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। যার কোনও সন্তোষজনক উত্তর কেন্দ্রের কাছে নেই। কারণ, অক্টোবরেই নোটবন্দি সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলায় সুপ্রিম কোর্টকে তারা জানিয়েছেন, নোটবন্দি বিষয়টি এখন বাস্তব জীবনে প্রাসঙ্গিক নয়। কারণ তার পর গত ছ’ বছরে গঙ্গা বেয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল এ-ও বলেছেন যে, নোটবন্দি এখন নিছক একটি পাঠ্য বিষয়ে উপনীত হয়েছে। তবু মঙ্গলবার সেই নোটবন্দির সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোরে নতুন করে সরগরম হল দেশের রাজনীতি। বিরোধী দলগুলি নতুন করে তুলল পুরনো প্রশ্ন। প্রকাশ্যে এল আর একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও। যেখানে খাস দেশের কেন্দ্রীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কই জানাচ্ছে, নোটবন্দির চার দিন আগে দেশের জনতার হাতে যে পরিমাণ নগদ টাকা ছিল, নোটবন্দির পর গত ছ’বছরে তা কমেনি। বরং ৭১.৮৪ শতাংশ বেড়েছে।
মঙ্গলবার ছিল নোটবন্দির সিদ্ধান্তের ষষ্ঠ বর্ষপূর্তি। ২০১৬ সালে এই ৮ নভেম্বর রাতেই আচমকা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন দেশ থেকে সমস্ত ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল করার কথা। কারণ হিসাবে মোদী জানিয়েছিলেন, দেশের মানুষের হাতে থাকা নগদ কালো টাকায় রাশ টানতেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। মোদী এ-ও জানিয়েছিলেন, কালো টাকায় রাশ টানতে এখন থেকে দেশে ক্যাশলেস অর্থাৎ নগদহীন ডিজিটাল লেনদেন হবে বেশি। মঙ্গলবার সেই প্রতিশ্রুতিরই জের টেনে প্রধানমন্ত্রীকে তোপ দেগেছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। টুইটারে রাহুল লেখেন, ‘‘কালো টাকা ফেরেনি। তবে দারিদ্র ফিরেছে। অর্থনীতি নগদহীন হয়নি। কিন্তু দুর্বল হয়েছে।’’ নোটবন্দির সিদ্ধান্তের কথা মনে করিয়ে দিয়ে রাহুল লেখেন, ‘‘ডিমনিটাইজেশন (নোটবন্দি) করে ৫০ দিনের মধ্যে কালো টাকা ফেরার পরামর্শ দিয়েছিলেন ‘রাজামশাই’। কিন্তু তা করতে গিয়ে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ছেড়েছেন তিনি।’’ রাহুলের মন্তব্যকেই সমর্থন করছে আরবিআইয়ের দেওয়া তথ্যও। দেশের মানুষের হাতে নগদ বৃদ্ধির খবর দেওয়ার পাশাপাশি তারা জানিয়েছে, কোনও নির্দিষ্ট সময়ে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের অনুপাতে ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে মানেই এমন নয় যে নগদের ব্যবহারের অনুপাত নিজে থেকে হ্রাস পেয়েছে। বরং নোট বাতিলের চার দিন আগে অর্থাৎ ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর ভারতে জনতার হাতে নগদ ছিল ১৭.৭ লক্ষ কোটি টাকা। আর এই বছরের গত ২১ অক্টোবরে তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০.৮৮ লক্ষ কোটি টাকা। গত শুক্রবার এই তথ্য প্রকাশ্যে এনেছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
মঙ্গলবার নোটবন্দির বর্ষপূর্তিতে কেন্দ্রকে তোপ দেগেছে তৃণমূলও। এ রাজ্যের শাসকদলের মুখপাত্র এবং সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইটারে লিখেছেন, ‘‘ছ’বছর আগে আজকের দিনে তৈরি করা একটা গিমিক ভারতের অর্থনৈতিক হত্যালীলায় পরিণত হয়েছিল।’’ ছ’বছর আগের সেই ঘটনার কথা স্মরণ করে ডেরেক লিখেছেন, ‘‘সে দিন সেই মারাত্মক ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যেই এ হেন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও বাকিদের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব বুঝতে প্রায় এক সপ্তাহ লেগে গিয়েছিল।’’
অবশ্য কংগ্রেস বা তৃণমূল যা-ই বলুক বা কেন্দ্র যতই বলুক নোটবন্দি এখন নিছক পাঠ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে, কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক অমিত মালব্য নোটবন্দির ছ’বছর পূর্তিতে কালো টাকার বিশদ হিসাব দিয়েছেন। অমিত টুইটারে লিখেছেন, ‘‘বিজেপির শাসনে কালো টাকা ফিরে এসেছে। দারিদ্রও কমেছে। কত পরিমাণ কালো টাকা ফিরে এসেছে দেশে? ছবিতে তার তথ্য দিয়েছেন অমিত। যেখানে বলা হয়েছে, ২০১৪-২১ সালে দেশের মধ্যে ৭৮৭৭ কোটি টাকা মূল্যে হিসাব-বহির্ভূত সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। ৮৭ হাজার ২০০ কোটি টাকার অনথিভুক্ত আয়ের কথাও প্রকাশ্যে এসেছে।’’
বিদেশ থেকে কত কালো টাকা ফিরেছে? অমিত জানিয়েছেন, একটি মামলা সূত্রে ১১ হাজার ১০ কোটি টাকা মূল্যের হিসাব-বহির্ভূত আয়ের খোঁজ পেয়েছে সরকার। পানামা পেপার লিক মামলাতেও খোঁজ মিলেছে ২০ হাজার কোটি টাকার হিসাব-বহির্ভূত আয়ের। বিদেশ থেকে দেশে কত কালো টাকা ফিরেছে, তার অবশ্য হিসাব দেননি বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি সেলের প্রধান।
নোটবন্দি ঘিরে রাজনৈতিক চাপান-উতোর চলবে। এরই সঙ্গে সমাজমাধ্যমে উঠে আসছে হঠাৎ করে নোটবন্দি ঘোষণার ফলে মানুষের দুর্দশার স্মৃতিও।