— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
রাশিয়ার বাহিনীর হয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে লড়ে ছ’জন যুবক শুক্রবার দেশে ফিরে এসেছেন। অন্য চাকরির কথা বলে নিয়ে গিয়ে তাঁদের সেনায় যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের লোকজন। তেলঙ্গনার নারায়ণপেটের মহম্মদ সুফিয়ান (২৪) রয়েছেন ফিরে আসা যুবকদের মধ্যে। কর্নাটকের কালবুর্গি জেলার তিন জন আছেন— মহম্মদ ইলিয়াস সইদ হুসেইনি (২৩), মহম্মদ সমীর আহমেদ (২৪) এবং নইম আহমেদ (২৩)। মস্কো থেকে ফেরার বিমানে বৃহস্পতিবার ওই চার জনের সঙ্গে কলকাতা এবং কাশ্মীরের দুই যুবকও উঠেছিলেন এবং তাঁরা দিল্লিতে নামার পরে নিজের নিজের শহরের বিমানে উঠেছেন, এমনটাই দাবি করেছেন সুফিয়ানের ভাই সলমন।
সলমন জানান, সুফিয়ান রাশিয়া গিয়েছিলেন গত বছর ডিসেম্বরে। তার আগে দুবাইয়ের একটি প্যাকেজিং সংস্থায় কাজ করতেন। মাসে ভারতীয় মুদ্রায় ত্রিশ হাজার টাকার মতো হাতে আসত। তার পরে এক এজেন্ট তাঁকে মস্কোয় ভাল সুযোগ আছে বলে ভুল বুঝিয়ে নিয়ে যায়। কালবুর্গির তিন জন যুবকও দুবাইয়ে সুফিয়ানের সঙ্গেই চাকরি করতেন। একসঙ্গে মস্কো যান তাঁরাও। সলমন জানান, যুদ্ধক্ষেত্রে একটি ড্রোন হামলায় সুফিয়ান প্রায় প্রাণ হারাতে বসেছিলেন।
সলমন বলেন, “ওরা ছাড়া আরও অন্তত ৫৫ জনকে বাহিনী থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ভারতীয়। চাকরির যে চুক্তিতে জোর করে সই করানো হয়েছিল, সেটার মেয়াদ তো ফুরিয়ে গিয়েছিল তিন মাস পরেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাশিয়া গিয়ে এ নিয়ে সরব হওয়ার পরে শেষপর্যন্ত ছাড়া হয়েছে।”
দেশে ফেরা যুবকদের পরিজন দাবি করেছেন, ট্রাভেল এজেন্টরা অন্য চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাশিয়া নিয়ে গিয়েছিল। তাঁদের বলা হয়েছিল, রুশ সরকারের বিভিন্ন দফতরে ‘হেল্পার’ হিসেবে কাজ করতে হবে। কিন্তু সটান যুদ্ধক্ষেত্রে নামতে বাধ্য করা হয়। প্রাণ হারান হায়দরাবাদের মহম্মদ আফসান নামে এক জন। তাতে আতঙ্ক বাড়ে।
গত সপ্তাহেই মুখে গুরুতর আঘাত নিয়ে রাশিয়া থেকে ফিরে এসেছেন পঞ্জাবের দোয়াব অঞ্চলের বছর তেইশের এক যুবক। চণ্ডীগড়ের হাসপাতালে তিনি ভর্তি আছেন এখন। তাঁকেও জোর করে সেনায় ভর্তি করানো হয়েছিল, অভিযোগ করেছে পরিবার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই যুবক জানিয়েছেন যে, ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে ট্রাভেল এজেন্টরা তাঁকে এবং তাঁর মতো আরও অনেক যুবককে রাশিয়া পাঠিয়ে দিয়েছিল। ওই যুবক পড়াশোনা করেছেন দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। পঞ্জাবে কারখানায় কাজ করছিলেন। বেতন পেতেন মাসে আট-ন’হাজার টাকা। এরই মধ্যে অনলাইনে ট্রাভেল এজেন্টদের ফাঁদে পড়েন।
ওই যুবকের অভিযোগ, রাশিয়া নিয়ে গিয়ে তাঁদের বলা হয়, সেনায় ভর্তি হতে হবে। নয়তো মেয়াদ ফুরনো ভিসার জন্য জেল খাটতে হবে দশ বছর। রুশ ভাষায় লেখা বিভিন্ন নথি তাঁদের দিয়ে সই করিয়ে নেওয়া হয়। তাঁর দাবি, সেখানে আরও অনেক ভারতীয় যুবক ছিলেন। অধিকাংশই পঞ্জাব ও হরিয়ানার। পিস্তল আর রাইফেল চালানোর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিয়েই সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে ছিটকে আসা একটি ভারী রেঞ্চের আঘাতে তাঁর চোয়ালের হাড় ভেঙে গিয়েছে।
ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে ট্রাভেল এজেন্টের ভেক ধরে এমন একটি বড়সড় চক্র সক্রিয় রয়েছে বলে দাবি করেছেন পঞ্জাবের ওই যুবক। তিনি জানান, যুবকদের স্পেন, ইটালি, পর্তুগাল বা জার্মানি নিয়ে যাওয়ার টোপ দিয়ে রুশ বাহিনীতে ভর্তি হতে বাধ্য করে তারা। প্রথমে ভিজিটর বা ট্রানজ়িট ভিসা করিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় রাশিয়ায়। অপেক্ষা করা হয় ভিসার মেয়াদ ফুরোনোর। তারপরে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পুলিশের ভয় দেখানো শুরু হয়।