কাঁটাতারের গেট পেরিয়ে এ ভাবেই আসা নিজের দেশে। আগরতলার জয়পুরে। ছবি: বাপী রায়চৌধুরী।
ভোট আসে, ভোট যায় ত্রিপুরায়। কিন্তু বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার
ও-পারে ভারতীয় জমিতে বসবাস করা মানুষের অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয় না। সীমান্তে থাকা গ্রামবাসীদের আক্ষেপ, নির্বাচনের সময়ে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা এসে তাঁদের কাঁটাতারের এ-পারে দ্রুত পুনর্বাসন দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে যান। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।
বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরার প্রায় ৮৫৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। ১৯৭৫ সালে হওয়া দু’দেশের চুক্তি অনুযায়ী, সীমান্ত থেকে ১৫০ গজের মধ্যে দুই দেশই কোনও রকম নির্মাণ করতে পারবে না। ফলে ভারত সরকারকে কাঁটাতারের বেড়া দিতে হয়েছে সীমান্তের জ়িরো পয়েন্ট থেকে ১৫০ গজ ভিতরে। এই পুরো এলাকাটা জুড়ে রয়েছে প্রায় ১২০ বর্গ কিলোমিটার কৃষিজমি এবং মানুষের বসত। সব মিলিয়ে আগরতলা শহরের মোট এলাকার প্রায় দ্বিগুণ জমি রয়েছে কাঁটাতারের বেড়ার ও-পারে। সে জমি ভারতেরই। এখানে প্রায় ৭২০০ পরিবারের বাস। তার মধ্যে বেশ কিছু পরিবার কোনও মতে বেড়ার এ-পারে এসেছে। নতুন করে বসতি স্থাপনও করেছে তারা। কিন্তু এখনও ত্রিপুরার বিভিন্ন জায়গায় কাঁটাতারের ও-পারে কিছু গ্রাম বা বসতি রয়ে গিয়েছে।
আগরতলা শহরের কাছে এমনই একটি গ্রাম পশ্চিম জয়নগর। এই গ্রামে প্রায় পনেরোটি ভারতীয় পরিবারের বাস। কাঁটাতারের এ-পারে কাজেকর্মে আসতে হলে সেই বেড়ার নির্দিষ্ট গেটে পাহারারত বিএসএফের কাছে ভোটার কার্ড বা অন্য পরিচয়পত্র দেখাতে হয় তাঁদের। ফিরেও যেতে হয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।
যেমন আজ ভোটার পরিচয়পত্র দেখিয়ে ছোট্ট শিশুকে নিয়ে সকাল সকাল ভোট দিতে গেট পার হয়ে এসেছিলেন তাক্লিমা বেগম। আগরতলা জয়পুর ভোটকেন্দ্রে কাঁটাতারের ও-পার থেকে আজ ৭০ জনের বেশি ভারতীয় বাসিন্দা ভোট দিতে এসেছিলেন। সকলের একটাই বক্তব্য, ‘‘ভোটের আগে সব দলের নেতা-কর্মীরা আশ্বাস দেন আমাদের কাঁটাতারের এ-পারে পুনর্বাসন দেওয়ার। কিন্তু ভোটের পরে সবাই ভুলে যায়।’’
সম্প্রতি সিপাহিজলা জেলার একটি এলাকায় সফরে গিয়েছিলেন ত্রিপুরার রাজ্যপাল নাল্লু ইন্দ্রসেনা রেড্ডি। ওই সময়ে কাঁটাতারের বেড়ার ও-পারের ভারতীয় বাসিন্দারা তাঁকে আর্জি জানিয়েছিলেন, সরকারের সঙ্গে কথা বলে তিনি যেন কাঁটাতারের এ-পারে তাঁদের পুনর্বাসনের বিষয়টি দেখেন। রাজ্যপাল পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছিলেন।
ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেল আরও একটি লোকসভা ভোট।