অসময়ের ভারী বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত নৈনিতাল। কুমায়ুনের সাজানো গোছানো এই শৈলশহর জুড়ে ধস নেমেছে। হ্রদ ছাপিয়ে জল উঠে এসেছে শহরের রাস্তায়। তলিয়ে গিয়েছে বহু রাস্তা ঘাট, ঘরবাড়িও।
এর আগে আরবসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে কেরল এবং পশ্চিমবঙ্গে ভারি বৃষ্টি হয়েছিল। তার রেশ এখনও চলছে দুই রাজ্যে। মঙ্গলবার মেঘ ভাঙা বৃষ্টি নামল উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুনের শৈল শহর নৈনিতালে। বৃষ্টিতে হওয়া ধসে শহরে প্রবেশ করার প্রধান তিনটি রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। উত্তরাখণ্ডের বাকি এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় নৈনিতাল। আটকে পড়েন নৈনিতালে বেড়াতে আসা পর্যটকরাও।
জলে ডুবে যায় মল রোড। নৈনি হ্রদের ধার বরাবর এই রাস্তাটি সোজা নৈনিদেবী মন্দির পেরিয়ে এগিয়ে গিয়েছে। এই রাস্তার লাগোয়া পর পর হোটেল, অতিথিশালা, দোকান। বৃষ্টিতে রাস্তাটি প্লাবিত হয়েছে। নৈনিদেবী মন্দির চত্বরটিও সম্পূর্ণ জলের নীচে।
নিরুপায় হয়েই হোটেল বন্দি হয়েছেন পর্যটকরা। জমা জল এবং ধসে শহরের সমস্ত রাস্তা কার্যত অকেজো। গাড়ি চলছে না। অন্যদিকে, শহরের প্রবেশের মূল তিনটি রাস্তার একটি খুলছে। কিন্তু বাকি দু’টি রাস্তা বন্ধ বুধবারও। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা জানিয়েছেন, রাস্তা খুললেও গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগবে। ফলে পরিবহণ সঙ্কটে আরও কিছু দিন শৈলশহরে বন্দি থাকতে হবে পর্যটকদের।
বছরের এই সময়ে নৈনিতালের পর্যটকদের আনাগোনা থাকে কিছুটা বেশি। নবরাত্রি, দুর্গাপুজো এবং দশেরার ছুটিতে অনেকেই এই সময়ে নৈনিতালে বেড়াতে আসেন। উত্তরাখণ্ডের সরকারি তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কয়েকশো পর্যটক নৈনিতালে আটকে পড়েছেন।
প্রশাসন সূত্রে খবর, রামনগর-রানিখেত এলাকা সংলগ্ন লেমন ট্রি রিসর্টেই আটকে পড়েছেন অন্তত ২০০ জন পর্যটক। নেটমাধ্যমে ওই রিসর্টের একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে রিসর্টের সামনের গাড়িগুলি জলে ডুবে রয়েছে। প্রায় গলা সমান জল জমেছে রিসর্ট লাগোয়া এলাকায়।
কলকাতা থেকে ১০ জন নৈনিতাল থেকে রুদ্রনাথের পথে ট্রেকিংয়ে গিয়েছিলেন। কালাচনাথে তাঁরাও বৃষ্টি এবং ধসে আটকে পড়েন। পরে বন দফতরের কর্মীরা তাঁদের দেখতে পেয়ে উদ্ধার করেন। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া এবং হুগলি জেলারও বেশ কিছু পর্যটক নৈনিতালে আটকে পড়েছেন বলে খবর।
ধস এবং বৃষ্টি সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় ২৪ ঘণ্টায় ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছিল সংবাদ সংস্থা পিটিআই। পরে উত্তরাখণ্ডের ডিআইজিকে উদ্ধৃত করে তারা জানায়, সবক’টি দুর্ঘটনাই ঘটছে কুমায়ুনের অঞ্চলে। এর মধ্য শুধু নৈনিতালে মারা গিয়েছেন ২৮ জন। পরে ডিজিপি জানান, নৈনিতাল জেলায় ২৪-২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও সরকারি হিসেবে জানানো হয় রাজ্যে বৃষ্টিতে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে ।
দেহরাদুনের আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, কুমায়ুনের দু’টি আবহাওয়া কেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের সর্বকালীন রেকর্ড হয়েছে। মুক্তেশ্বরে ২৪ ঘণ্টায় ৩৪০.৮ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। পন্তনগরে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৪০৩.২ মিমি। ১৯৬২ সাল থেকে বৃষ্টির রেকর্ড রাখার কাজ শুরু হয়েছে। দেরাদুন আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা বিক্রম সিংহ জানিয়েছেন, দু’টি কেন্দ্রেই তারপর থেকে এত বৃষ্টি কখনও হয়নি।
আলমোড়ায় প্লাবিত হয়েছে কোশী নদী। খুলে দেওয়া হয়েছ বেশ কয়েকটি বাঁধের গেট। কুমায়ুনের উধম সিং নগরের নানক সাগর বাঁধের দু’টি খুলে দেওয়ার পর বহু গ্রাম, জনবসতিপূর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।
নৈনিতালের চৌখুটা গ্রামে কাঁচা বাড়ি ভেঙে মৃত্যু হয় পাঁচ বাসিন্দার। উদ্ধারকারীরা প্রায় চার ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে তাঁদের দেহ উদ্ধার করে। পরে জানা যায় মৃতদের মধ্যে চারজন পেশায় শ্রমিক। উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার থেকে তাঁরা কর্মসূত্রে নৈনিতালে এসেছিলেন।
আপাতত জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর এবং রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর অনেকগুলি দল নৈনিতালে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে।। নৈনিতালের পরিস্থিতির খোঁজ নিয়ে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রে মোদী। পরে ধামি নিজেও আকাশ পথে নৈনিতাল-সহ কুমায়ুনে বৃষ্টি বিধ্বস্ত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন। বুধবার দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা করে এককালীন অর্থ সাহায্য করার ঘোষণা করেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী।