শেখ হাসিনার বাসভবনে সীতারাম ইয়েচুরি। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
সংসদে স্থলসীমান্ত চুক্তিকে সমর্থন করার জন্য ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ভারতের বাম দলগুলির সহযোগিতা চাইলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকায় একটি আলোচনা সভায় যোগ দিতে এসে বৃহস্পতিবার বিকেলে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সিপিএম ও সিপিআইয়ের দুই সাধারণ সম্পাদক যাথাক্রমে সীতারাম ইয়েচুরি ও এস সুধাকর রেড্ডি। সীতারাম হাসিনাকে বলেন, ভারতে একমাত্র বামপন্থীরাই বরাবর ছিটমহলবাসীর পাশে থেকে তাঁদের নাগরিক অধিকারের দাবিতে সরব হয়ে এসেছেন। একই ভাবে তাঁরা তিস্তার জলবণ্টন চুক্তিরও পক্ষে। সীতারাম জানান, তিস্তা চুক্তি হলে দু’দেশের মানুষের মধ্যে আস্থা ও বন্ধুত্ব আরও বাড়বে।
শুক্রবার ঢাকায় ‘দক্ষিণ এশিয়ায় মৌলবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী সংগ্রাম’ বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক আলোচনা সভায় বক্তৃতাতেও সীতারাম তিস্তা চুক্তির পক্ষে সওয়াল করেন। তিনি বলেন, গঙ্গার জলবণ্টন চুক্তির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর একটা বড় ভূমিকা ছিল। জ্যোতিবাবু মনে করতেন, উপমহাদেশের মানুষের স্বার্থেই ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক মজবুত হওয়াটা জরুরি। সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করেন সীতারাম। তিনি বলেন, এই লড়াইয়ের সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশের তরুণরা। গণজাগরণ মঞ্চের ঐতিহাসিক আন্দোলনে বাংলাদেশের তরুণদের ভূমিকার উল্লেখ করে সীতারাম বলেন, মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্রামের কোনও অবকাশ নেই। তরুণদের আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশের যে বামপন্থী দল ওয়ার্কার্স পার্টি এই আলোচনা সভার উদ্যোক্তা, তারাও হাসিনা সরকারের শরিক। দলের সভাপতি পর্যটন ও বিমান পরিবহণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা তাঁদের বক্তৃতায় মৌলবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের লড়াইয়ের কথা সবিস্তার উল্লেখ করেন। সুধাকর রেড্ডি ছাড়া ফরওয়ার্ড ব্লকের কেন্দ্রীয় নেতা শ্যামল রায় এবং পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার শীর্ষ বামপন্থী নেতারা আলোচনা সভায় বক্তৃতা দেন। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধাপক আবুল বারকাত। তিনি জানান, বাংলাদেশে মোট ১১৯টি মৌলবাদী সংগঠন রয়েছে, যেগুলির প্রতিটির সঙ্গে জামাতে ইসলামি ও তাদের শাখা সংগঠনগুলির নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। এদের লক্ষ্য গণতন্ত্রের উচ্ছেদ করে বাংলাদেশে তালিবান ধাঁচের ইসলামি ব্যবস্থা প্রণয়ন করা। এদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলির যোগাযোগও প্রমাণিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলাদেশ সফরকে এ দিন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় স্বাগত জানান বিরোধীরা। পাশাপাশি কিছু প্রশ্নও তুলেছেন বাম এবং কংগ্রেস সদস্যরা।
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের তির্যক মন্তব্য, ‘‘আগের বার আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলাম। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে ঢাকা যেতে বেঁকে বসেছিলেন! এ বারও না আঁচালে বিশ্বাস নেই! তবে মুখ্যমন্ত্রীকে শুভেচ্ছাই জানাচ্ছি।’’ কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়ার মন্তব্য, ‘‘মনমোহন সিংহের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশে যাননি, এটা ইতিহাস। মোদীর সঙ্গে তিনি যাচ্ছেন, এটাও ইতিহাসে থাকবে!’’ বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকা বা অ্যান্টার্কটিকা— যেখানেই যান না কেন, বাংলায় দু’দলের রাজনৈতিক অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হবে না!’’