গুরু গড়তেন জোট, শিষ্য নিরুপায়

রাজনৈতিক গুরু এই বোকামি কোনও দিন করতেন না। কিন্তু শিষ্য নিরুপায়। আজ যখন দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে রাহুল গাঁধীকে পাশে নিয়ে মোদীর পদত্যাগের দাবি তুলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সীতারাম ইয়েচুরি তখন কলকাতায়।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:০৫
Share:

সীতারাম ইয়েচুরি ও হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ

রাজনৈতিক গুরু এই বোকামি কোনও দিন করতেন না। কিন্তু শিষ্য নিরুপায়।

Advertisement

আজ যখন দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে রাহুল গাঁধীকে পাশে নিয়ে মোদীর পদত্যাগের দাবি তুলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সীতারাম ইয়েচুরি তখন কলকাতায়। ২০১৯-এর লোকসভায় ভোটের আগে বিজেপি-বিরোধী জোট তৈরিতে এখন অনুঘটকের কাজ করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ সিপিএমের নেতারা আশায় ছিলেন এই ভূমিকাটা নেবেন সীতারাম ইয়েচুরি। অতীতে যেমনটা নিয়ে এসেছেন তাঁর রাজনৈতিক গুরু, হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ। বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহের সরকার গঠন, তার পর যুক্তফ্রন্টের সরকার তৈরির সময়ও সুরজিৎ সব দলকে এক সঙ্গে আনার কাজটি করেছিলেন। সব দলকে নিয়ে চলার এই রাজনৈতিক কৌশল সুরজিতের থেকেই শিখেছিলেন ইয়েচুরি।

আজ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক আটকে গেলেন দু’টি জায়গায়। এক দিকে রাজ্য সিপিএমের কথা ভেবে তৃণমূলের ছোঁয়া বাঁচানো। অন্য দিকে প্রকাশ কারাটদের চোখ রাঙানিতে কংগ্রেসের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা। যা দেখে সিপিএমের প্রবীণ নেতারাই মনে করছেন, বোকামি করে জাতীয় রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছেন দলীয় নেতৃত্ব। তাঁদের মতে, এমনিতেই সংসদে শক্তি কমে যাওয়ায় বামেরা এখন কোণঠাসা। ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে নিজেদের পবিত্র রাখতে গিয়ে একঘরে হয়ে পড়ার ঝুঁকি নিচ্ছে দল। এখনই আরও বেশি করে অন্য বিরোধী দলগুলির সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলা জরুরি।

Advertisement

কংগ্রেসের নেতা জয়রাম রমেশের মতে, ‘‘মাও বলেছিলেন, হাঁটতে হয় দু’পায়ে। আমি নিশ্চিত ইয়েচুরিও সে কথা জানেন। এক পায়ে আপনাকে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লড়াই করতে হবে। অন্য পায়ে লড়তে হবে জাতীয় দলের সঙ্গে। অভিজ্ঞ, জাতীয় নেতা হিসেবে ইয়েচুরি নিশ্চয়ই তা বুঝতে পারবেন।’’

সিপিএমের প্রবীণ নেতারা জানাচ্ছেন, তাঁরা এক সময়ে দিল্লিতে সুরজিৎকে দেখেছেন কেন্দ্র-বিরোধী জোটের প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে। কিন্তু প্রকাশ কারাট ও তাঁর অনুগামীরা সেই ইতিহাস মনে রাখতে চাননি। সেই কারণেই কারাটের আমলে দলের তরফে প্রকাশিত সুরজিতের সংক্ষিপ্ত জীবনীতে এই জোট রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকারই উল্লেখ ছিল না। প্রবীণ নেতাদের যুক্তি, ‘‘সিপিএম পশ্চিমবঙ্গ-কেরল-ত্রিপুরার গণ্ডিতে আটকে ছিল। তা-ও সুরজিতের দিল্লিতে সব দলকে এক মঞ্চে আনার ক্ষমতার জন্যই জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা ছিল সিপিএমের। এই সময়ে দাঁড়িয়েও দলের নেতাদের তা বোঝা জরুরি।’’

বুঝতে পারলেও ইয়েচুরির হাত-পা বাঁধা। এক দিকে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের বিরোধিতায় আঞ্চলিক রাজনীতির পিছুটান। অন্য দিকে জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস না বিজেপি কে বড় শত্রু, তা নিয়ে দোটানা। তৃণমূল নেত্রীর পাশে গিয়ে বসলে আলিমুদ্দিনের নেতাদের সমস্যা হবে। আলিমুদ্দিন চটলে ইয়েচুরির পক্ষে সাধারণ সম্পাদকের গদিতে ফিরে আসা মুশকিল। আবার কংগ্রেসের সঙ্গে বেশি হৃদ্যতা তৈরি করলে পলিটব্যুরোয় তাঁকে প্রকাশ কারাট তথা কেরল লবির আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে।

ইয়েচুরি নিজে গত কাল যুক্তি দিয়েছিলেন, সব দলের সাংবাদিক সম্মেলন ডাকার আগে কংগ্রেস নেতারা তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেননি। দলের কিছু নেতার মতে, আজ রাহুল-মমতার মঞ্চে গেলে তাঁদের নেতৃত্বে চলতে হতো ইয়েচুরিকে। কিন্তু দলের অন্য এক অংশের পাল্টা যুক্তি, এ কথা ভাবতে গেলে সুরজিৎ কোনও দিনই মুলায়ম-দেবগৌড়া-বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহদের সঙ্গে জোটে যেতে পারতেন না।

ঘটনাচক্রে আগামিকালই পঞ্জাবের বান্দালায় সুরজিতের গ্রামে যাবেন ইয়েচুরি। সুরজিতের স্ত্রী প্রীতম কৌর তিন দিন আগে মারা গিয়েছেন। আগামিকাল তাঁর শেষকৃত্য। রাজনৈতিক গুরুর গ্রামে ফিরে গিয়ে কি ফের জোট রাজনীতির পথে হাঁটার দিশা খুঁজে পাবেন ইয়েচুরি!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement