কেরল থেকে ভিন্ন সুর শোনা গিয়েছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু দলের মধ্যে লড়াই জিততে আরও সংখ্যা চাই। তাই এ বার ছোট ছোট রাজ্যগুলির নেতাদের মন পেতে উগ্যোগী হলেন সীতারাম ইয়েচুরি।
চিনের কমিউনিস্ট পার্টি তাদের সাম্প্রতিক পার্টি কংগ্রেসের পরে অন্যান্য দেশের কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতাদের আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। যার পোশাকি নাম ‘ডায়লগ উইথ ওয়ার্ল্ড কমিউনিস্ট লিডার্স’। সেই আমন্ত্রণ স্বীকার করে এ দেশ থেকে সিপিএম এবং সিপিআইয়ের দুই সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি ও সুধাকর রে়ড্ডি এখন বেজিঙে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ইয়েচুরি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির দুই সদস্য বাদল সরোজ ও অবধেশ কুমারকে। কেন্দ্রীয় কমিটির আগের বৈঠকে ইয়েচুরি শিবিরের পাশে দাঁড়িয়েছিল মধ্যপ্রদেশ। সে রাজ্যের সরোজকে বিদেশ সফরে নিয়ে গিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক। একই ভাবে বিহারের অবধেশকে সঙ্গে নেওয়ার মধ্যেও ছোট রাজ্যের মন জয়ের চেষ্টা স্পষ্ট। সচরাচর এই ধরনের সফরের সুযোগ পান সিপিএমে বড় রাজ্যের নেতারা।
সিপিএমের অন্দরে প্রকাশ কারাট দীর্ঘ দিন ছড়ি ঘুরিয়ে এসেছেন কেরল-সহ দক্ষিণী শিবিরের সমর্থনের জেরে। কেন্দ্রীয় কমিটির বিগত বৈঠকে কারাট শিবিরকে অনেকটাই ধাক্কা দিয়ে ইয়েচুরি লাইনের পক্ষে হাত উঠেছিল কেরল থেকেও। দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা, কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো দক্ষিণী রাজ্যগুলির পুরোপুরি সমর্থন তিনি কখনওই পাবেন না বুঝে সাধারণ সম্পাদক এ বার ছোট ছোট রাজ্যগুলির দিকে নজর দিচ্ছেন। যে সব রাজ্যে সিপিএম একেবারেই বড় শক্তি নয়। কংগ্রেসের হাত ধরা হল কি না, সেই প্রশ্নে ওই সব রাজ্যে দলের মধ্যে কোনও ওলটপালট হবে না। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটিতে সব রাজ্যেরই যে হেতু ভোট আছে, তাই তাদের নিজের পক্ষে নিয়ে আসার চেষ্টায় তৎপর হয়েছেন ইয়েচুরি।
আরও পড়ুন: শিবের বারে মনোনয়ন
এত দিন কংগ্রেস-প্রশ্নে কট্টর অবস্থানে থাকলেও কারাট এখন মানছেন, বিজেপি-আরএসএসই প্রধান বিপদ। তাদের মোকাবিলায় সংসদের ভিতরে ও বাইরে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েই লড়াই করতে হবে। ইয়েচুরি শিবিরের কৌশল, ওই লাইনকেই এ বার হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসের দলিলে সিলমোহর দেওয়া। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘সংসদের ভিতরে-বাইরে কংগ্রেস-সহ গণতান্ত্রিক সব দলকে নিয়ে বৃহত্তর মঞ্চ গড়ার লাইন পার্টি কংগ্রেসে অনুমোদিত হয়ে গেলে আগামী লোকসভা ভোটের আগে এক বছর সময় হাতে পাওয়া যাবে। সর্বত্র যৌথ আন্দোলন ঠিকমতো গড়ে তুলতে পারলে ভোটের সময়ে নির্বাচনী সমঝোতায় যাওয়ার জন্য তখন আপনা থেকেই চাপ বাড়বে!’’
সিপিএম সূত্রের খবর, ইয়েচুরির ওই মতকে সামনে রেখেই পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক ও কৌশলগত লাইনের খসড়া তৈরি হচ্ছে। দিল্লির গোলমার্কেটে দলের কেন্দ্রীয় দফতরে আসন্ন পলিটব্যুরো বৈঠকে তা নিয়ে এক প্রস্ত আলোচনা হবে। তার পরে পার্টি কংগ্রেসের খসড়া চূড়ান্ত করতে জানুয়ারির মাঝামাঝি কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বসবে কলকাতায়। ইয়েচুরিরা চাইছেন, শরীর সামলে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও সেখানে উপস্থিত থাকুন।