অযোধ্যার রামমন্দির। ছবি: পিটিআই।
১৯৯০: করসেবায় গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা যান কলকাতার বড়বাজারের বাসিন্দা রাম ও শরদ কোঠারি।
১৯৯২: বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সাক্ষী বাবা-মা।
২০২৪: রামমন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে ‘শহিদের পরিবার’ হিসেবে আমন্ত্রিত বোন পূর্ণিমা।
মন্দিরের প্রবেশপথ থেকে পাঁচশো মিটার দূরে রাম-শরদ কোঠারি স্মৃতি সঙ্ঘের তাঁবু। সেখানেই আলাপ হল পূর্ণিমার সঙ্গে। ১৯৯০ সালে দুই ভাই যখন করসেবায় আসেন, তখন পূর্ণিমার বয়স ১৯
। সে বছরের ১৩ ডিসেম্বর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল পূর্ণিমার।
তা সত্ত্বেও ৩০ অক্টোবর করসেবায় অংশ নিতে অযোধ্যায় পৌঁছে গিয়েছিলেন রাম-শরদ ও তাঁদের দল। বাবার আপত্তি সত্ত্বেও। নেতৃত্বে ছিলেন বড়বাজারের বাসিন্দা, আরএসএসের কর্মী প্রদীপ। তাঁর দাবি, ‘‘১৯৯০ সালে ৩০ অক্টোবর বাবরি মসজিদে যারা উঠেছিল, তাদের মধ্যে ছিল রাম-শরদ। ফের ২ নভেম্বর, করসেবার দিন মুলায়ম সিংহ সরকারের পুলিশ লাঠি-কাঁদানে গ্যাস চালালে যে যার মতো আশ্রয় নিই। এক জনকে বাঁচাতে গিয়ে বুকে গুলি লাগে শরদের। পুলিশ গুলি খাওয়া ছোট ভাইকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে দেখে প্রতিবাদ করে রাম। তাকে পুলিশেরা সরে যেতে বলে, না হলে গুলি করার হুমকি দেয়। রাম ভাইকে ছাড়তে রাজি না হওয়ায় গুলি করা হয়।’’
দু’বছর বাদে ফের করসেবার ডাক দেওয়া হয়। সে সময়ে মেয়ে পূর্ণিমাকে নিয়ে করসেবায় যোগ দিতে অযোধ্যায় আসেন রাম-শরদের পিতা-মাতা হীরালাল ও সুমিত্রা কোঠারি। পূর্ণিমার কথায়, ‘‘৬ ডিসেম্বর আমাদের তিন জনের করসেবায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কিছু হতে পারে এই ভয়ে, আমাকে ঘরে আটকে রেখে যান মা।’’ রাম-শরদের পারিবারিক বন্ধু অশোক জয়সওয়াল বলেন, বাবরি মসজিদের মূল কাঠামো যখন উপর থেকে ভেঙে পড়ছে, মাকে কোনওক্রমে ধরে রাখা হয়। না হলে ছেলেদের শোকে হয়তো উনিও প্রাণ বিসর্জন দিতেন।’’
তিন দশক ধরে দুই ভাইয়ের মৃত্যুদিনে অশোক, প্রদীপেরা বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করেন। এ বার রামমন্দির নির্মাণ উপলক্ষে অযোধ্যায় এসেছেন তাঁরা। গত ১৪ জানুয়ারি থেকে ভক্তদের চা-বিস্কুট,নিমকি-কচুরি টোম্যাটোর সুপ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছে ওই সঙ্ঘ। যা চলবে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত।
মৃত্যুর সময়ে রামের বয়স ছিল ২২ আর শ্যামের ২০। বোন পূর্ণিমার কথায়, ‘‘মন্দির কে করছে, তার চেয়ে বড় ব্যাপার হল, রামমন্দির অবশেষে হচ্ছে। দাদারা থাকলে খুশি হত।’’