তিনি সাহসের বেড়া টপকেছেন। মনে জেদ ছিল, ‘কিছু একটা হতেই হবে।’ আর সেই জেদে ভর করেই শত বাধা বিপত্তির মুখে পড়েও পুলিশে যোগ দিয়েছেন তিনি। শুধু যোগ দেওয়াই নয়, সাব-ইনস্পেক্টর হয়ে তাঁর এলাকা, মহল্লা, গ্রামের সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন হেমলতা।
মেয়ের সাফল্যে খুশি গোটা গ্রাম। পুলিশ আধিকারিক হয়ে গ্রামে পা রাখতেই ফুল ছুড়ে তাঁকে স্বাগত জানান গ্রামবাসীরা। শুধু তাই-ই নয়, বোনের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হয়ে দাদারা তাঁকে নিজেদের কাঁধে তুলে গোটা গ্রাম ঘোরান।
তিনি হেমলতা জাখড়। রাজস্থানের বাড়মের জেলার ছোট গ্রাম সরণুর বাসিন্দা। তাঁরই সমবয়সি মেয়েরা যখন গ্রামের সীমানা পেরিয়ে অন্যত্র যাওয়ার সাহস দেখাতে পারেননি, সেখানে হেমলতা সেই বেড়া ভেঙে বাইরে বেরিয়েছেন। শুধু বেরোনোই নয়, নিজের লক্ষ্য পূরণ করে তবেই বাড়ি ফিরেছেন।
এক সাক্ষাৎকারে হেমলতা বলেন, “গ্রামেরই একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। তার পর নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার জন্য গ্রামের বাইরের একটি স্কুলে ভর্তি হতে হয়েছিল। রোজ ১৪ কিলোমিটার হেঁটে যেতাম সেখানে।”
বাবা দুর্গারাম জাখড় এক জন কৃষক। জমিজমাও অল্প। তাতে চাষ করে যা আয় হয় তা দিয়েই সংসার চালান। টানাটানির সংসারে বেড়ে ওঠা হেমলতার স্বপ্ন ছিল কিছু একটা করতেই হবে। আর সেই স্বপ্নের পিছনে ছোটা শুরু করেন তিনি। হেমলতার কথায়, “ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল পুলিশ হব। পুলিশের উর্দি আমাকে আকৃষ্ট করত। আর সেই উর্দি গায়ে পরার জন্য দিনরাত কসরত করে গিয়েছি।”
হেমলতা জানিয়েছেন, তাঁর গ্রামের কোনও পুরুষ বা মহিলা সাব-ইনস্পেক্টর হননি। পুলিশেও চাকরি করেননি। তিনিই প্রথম এই পুলিশে যোগ দিয়েছেন এবং সাব-ইনস্পেক্টর হয়েছেন। হেমলতার বাবা বলেন, “মেয়ে পুলিশের চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে শুনে গ্রামবাসীরা নিত্য দিন হাসি-ঠাট্টা করতেন। কিন্তু মেয়ের প্রতি আমার ভরসা ছিল এক দিন ও পুলিশ অফিসার হবে এবং পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করবে।”