বঙ্গের ডাক, কিন্তু সিঙ্গাপুর আসছে গুজরাতে

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে রাজ্যের জন্য লগ্নি টানতে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী জানুয়ারিতে ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-এ সহযোগী দেশ বা ‘পার্টনার কান্ট্রি’ হিসেবে অংশ নিচ্ছে সেই সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুরের প্রথম সারির শিল্প সংস্থার শীর্ষকর্তারা ওই সম্মেলনে যোগ দেবেন। বেশ কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে লগ্নির বিষয়ে চুক্তি হবে বলেও আশা করছে গুজরাত সরকার।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৩
Share:

মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে রাজ্যের জন্য লগ্নি টানতে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী জানুয়ারিতে ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-এ সহযোগী দেশ বা ‘পার্টনার কান্ট্রি’ হিসেবে অংশ নিচ্ছে সেই সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুরের প্রথম সারির শিল্প সংস্থার শীর্ষকর্তারা ওই সম্মেলনে যোগ দেবেন। বেশ কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে লগ্নির বিষয়ে চুক্তি হবে বলেও আশা করছে গুজরাত সরকার।

Advertisement

গত মাসের মাঝামাঝি সিঙ্গাপুরে মমতার শিল্প সম্মেলনে সে দেশের ৮৯টি সংস্থার প্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন। কিন্তু অধিকাংশ সংস্থাই ছিল ক্ষুদ্র বা মাঝারি মাপের। আর তাদের প্রতিনিধিরাও তেমন পদস্থ কেউ নন। হাতে গোনা ব্যতিক্রম বাদ দিলে কোনও বড় সংস্থার চেয়ারম্যান বা সিইও ওই সম্মেলনে আসেননি।

উল্টো দিকে, গুজরাত সরকারের একটি প্রতিনিধি দল সিঙ্গাপুরে গিয়ে গত দু’দিন ধরে স্থানীয় শিল্প সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ, ইতোচু কর্পোরেশন, অং পার্টনারশিপ, এসআইসিসিআই, ডিবিএস ব্যাঙ্ক, হাইফ্লাক্স, সিঙ্গাপুর এক্সচেঞ্জের মতো প্রথম সারির শিল্প সংস্থার শীর্ষব্যক্তিরা। ওই সব সংস্থার বিনিয়োগে তাঁরাই শেষ কথা। ইতোচু কর্পোরেশনের সিইও (আসিয়ান অঞ্চল) আবার সিঙ্গাপুরে জাপান চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি।

Advertisement

মমতার সভায় উপস্থিতি ছিল ইন্ডিয়ান-সিঙ্গাপুর চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিরা। যা মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের সংগঠন। গুজরাতের প্রতিনিধি দলটি বৈঠক করেছে সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশনের সঙ্গে। যা সে দেশের শিল্পপতি ও লগ্নিকারীদের প্রধান সংগঠন।

মমতা সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন রাজ্যের ১২ জন সরকারি আধিকারিক এবং শিল্পমহলের ৫২ জন প্রতিনিধিকে নিয়ে। অন্য দিকে, গুজরাতের প্রতিনিধি দলে ছিলেন মাত্র ১২ জন। নেতৃত্বে রাজ্যের বিদ্যুৎ ও পেট্রোরসায়ন দফতরের সচিব এল চুয়াউঙ্গো। বাকিরা বিভিন্ন শিল্প বা পরামর্শদাতা সংস্থার উচ্চপদস্থ আধিকারিক।

মমতার সিঙ্গাপুরের সফরের পরে নতুন লগ্নি আসবে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। গুজরাত কিন্তু এক জন সচিবের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল পাঠিয়েই হাতেনাতে ফল পেয়েছে। চুয়াউঙ্গোর কথায়, “আমরা পেট্রোরসায়ন, বিদ্যুৎ, পরিবহণ, নগরোন্নয়নের মতো ক্ষেত্রগুলিতেই সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগ চাইছি। কোথায় কোথায় বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে, তা সে দেশের শিল্পকর্তাদের সমানে তুলে ধরা হয়েছে।” আর ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুরের (আইইএস) অ্যাসিস্ট্যান্ট সিইও টান সুন কিম বলছেন, “সিঙ্গাপুরের সংস্থাগুলির সামনে গুজরাতে নগরোন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও নির্মাণ শিল্পে লগ্নির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।”

পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে গুজরাতের ফারাকটা কোথায়? বণিকসভার কর্তাদের মতে, পার্থক্যটা দৃষ্টিভঙ্গি ও কাজের ধরনে। পশ্চিমবঙ্গ সিঙ্গাপুরের লগ্নি চেয়েছে ঠিকই, কিন্তু কোথায় কোথায় লগ্নি করা যেতে পারে, লগ্নি করলে কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট করে কিছুই বলেনি। গোটা ব্যাপারটাই অপেশাদার এবং আন্তরিকতাহীন। তা ছাড়া, রাজ্যে লগ্নির পরিবেশ তৈরি না-করে শিল্প সংস্থাকে আমন্ত্রণ করার কোনও অর্থই নেই। মমতার সফর চলাকালীনই সিঙ্গাপুরের বিদেশমন্ত্রী কে ষণ্মুগম আনন্দবাজারকে বলেছিলেন, কোনও জায়গায় লগ্নি করার আগে সেখানকার নিরাপত্তার দিকটি বিশেষ ভাবে খতিয়ে দেখেন তাঁরা। সিন্ডিকেট এবং শাসক দলের তোলাবাজির দাপটে পশ্চিমবঙ্গে এখন যার ঘোরতর অভাব।

অন্য দিকে, গুজরাতের প্রতিনিধিরা রীতিমতো ‘হোম ওয়ার্ক’ করে গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুরে। নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্র বেছে নিয়ে সেখানকার শিল্পকর্তাদের কাছ থেকে লগ্নি আহ্বান করেছেন তাঁরা। যে যে ক্ষেত্রে বিনিয়োগ চাওয়া হচ্ছে, সেই ক্ষেত্রের শিল্প সংস্থাগুলির সঙ্গেই বৈঠক করা হয়েছে। শিল্প সম্মেলনে মমতাকে সরাসরি প্রশ্ন করার কোনও সুযোগ পাননি সিঙ্গাপুরের শিল্পকর্তারা। গুজরাতের প্রতিনিধি দলের প্রধান এবং বিশেষজ্ঞরা কিন্তু তাঁদের প্রশ্নের উত্তরে নির্দিষ্ট ভাবে সমস্ত তথ্য

তুলে ধরেছেন।

জানুয়ারিতে গাঁধীনগরে ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-এর আসর বসবে। ওই সময়েই ‘বেঙ্গল লিড্স’ আয়োজন করবে পশ্চিমবঙ্গ। এ দেশের শিল্পকর্তারা বলছেন, দুই রাজ্যের দৃষ্টিভঙ্গির ফারাকই এই দুই শিল্প সম্মেলনের তফাৎ গড়ে দেবে।

‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’ এ বার অবশ্য অনেক অর্থেই আলাদা। এত দিন এই মঞ্চ থেকে দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিদের গুজরাতে লগ্নি করার জন্য আহ্বান জানাতেন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বার প্রধানমন্ত্রী মোদীর লক্ষ্য শুধু গুজরাত নয়, গোটা দেশ। আর সেই লগ্নি তিনি শুধু দেশের শিল্পপতিদের কাছ থেকে চাইবেন না, চাইবেন গোটা বিশ্বের লগ্নিকারীদের কাছ থেকে। ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-এ এ বার ‘গ্লোবাল সিইও সামিট’-এর আয়োজন করা হচ্ছে। ৫০০টি বহুজাতিক সংস্থার সিইও-দের এখানে আহ্বান জানানো হচ্ছে। ভারতে এই ধরনের সম্মেলন এই প্রথম। যা সফল করতে গুজরাতের এক একটি প্রতিনিধি দল এক একটি দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। সিঙ্গাপুরের দলটি যেমন সেখান থেকে হংকং, বেজিং ও সাংহাইতে চলে যাচ্ছে। জানুয়ারিতে গাঁধীনগরে প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলন হবে। সেই সম্মেলনের অতিথিদেরও ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-এ আহ্বান জানানো হচ্ছে।

এর আগের ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’-এ মোদী অন্যান্য বিজেপি-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের আহ্বান জানিয়েছিলেন। যাতে তাঁরাও নিজেদের রাজ্যকে লগ্নিকারীদের সামনে তুলে ধরতে পারেন। গুজরাত সরকার সূত্রের খবর, এ বার সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরই আহ্বান জানানো হবে। গুজরাত সরকারের এক কর্তা বলেন, “শিল্প তথা উন্নয়নের প্রশ্নে কোনও রাজনৈতিক ভেদাভেদ করা হচ্ছে না। আমরা চাইছি, সব রাজ্যই গাঁধীনগরে আসুক, লগ্নি টানার চেষ্টা করুক।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement