infosys

স্বামীর সঙ্গে তৈরি করেন ইনফোসিস, সেই স্বামীর জন্যই সংস্থা ছাড়েন প্রতিবাদী, মেধাবী সুধা

দু’জনেই বই পড়তে খুব ভালবাসতনে। বন্ধুত্ব জমতে দেরি হল না। সুধার ভাল লাগত নারায়ণের সাদামাটা ভাব। দু’জনের আলোচনা জুড়ে থাকত শুধু বই। তিনি এক বারের জন্যও সুধার রূপ বা সাজগোজ নিয়ে কিছু বলতেন না। এতেই মুগ্ধ হয়ে যান সুধা।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৯ ১৪:৩৭
Share:
০১ ২২

‘মহিলাদের আবেদন করার প্রয়োজন নেই’— টেলকো-র চাকরির বিজ্ঞাপনের নীচে লেখা ছিল এই কথাগুলো। দেখে আরও রোখ চেপে গেল সুধা কুলকার্নির। ঠিক করলেন, এই চাকরিই করতে হবে।

০২ ২২

আবেদন তো করলেনই। সেই সঙ্গে স্বয়ং জে আর ডি টাটাকে চিঠি লিখলেন। জানতে চাইলেন এই লিঙ্গ বৈষম্যের কারণ কী?

Advertisement
০৩ ২২

নিরাশ হতে হল না সুধাকে। সত্বর এল উত্তর। ‘বিশেষ ইন্টারভিউ’-এর বন্দোবস্ত করা হল সুধার জন্য। চাকরির জন্য মনোনীত হলেন তিনি। ডেভলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যোগ দিলেন ‘টেলকো’-তে।

০৪ ২২

জয় করে নেওয়ার এই ধারা সারা ছাত্রীজীবন ধরেই সঙ্গী ছিল মেধাবী সুধার। তাঁর বাবা আর এইচ কুলকার্নি ছিলেন সার্জেন। মা বিমলা ছিলেন গৃহবধূ। সুধার জন্ম ১৯৫০ সালের ১৯ অগস্ট।

০৫ ২২

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এ সুধা ছিলেন স্বর্ণপদকজয়ী। তিনি কম্পিউটার সায়েন্সে এম ই করেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স থেকে। সেখানেও তিনি প্রথম। স্বর্ণপদক পেলেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স থেকে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়েও তাঁর ব্যাচে সুধা একাই ছিলেন ছাত্রী। বাকি সব পড়ুয়াই ছাত্র।

০৬ ২২

পুণায় টেলকো-য় কাজ করার সময় বইপাগল সুধা বই নিতেন এক বন্ধুর কাছ থেকে। দেখতেন, প্রায় সব বইয়েই একজনের নাম লেখা, ‘নারায়ণ মূর্তি’। কৌতূহলী সুধা আলাপ করলেন নারায়ণের সঙ্গে।

০৭ ২২

দু’জনেই বই পড়তে খুব ভালবাসতনে। বন্ধুত্ব জমতে দেরি হল না। সুধার ভাল লাগত নারায়ণের সাদামাটা ভাব। দু’জনের আলোচনা জুড়ে থাকত শুধু বই। তিনি এক বারের জন্যও সুধার রূপ বা সাজগোজ নিয়ে কিছু বলতেন না। এতেই মুগ্ধ হয়ে যান সুধা।

০৮ ২২

এর বাইরে দু’জনে ছিলেন বিপরীত মেরুর। সুধা বহির্মুখী, কথা বলতেন বেশি। আর নারায়ণ চুপচাপ, অন্তর্মুখী। একদিন সেই চুপচাপ, শান্ত ছেলেটাই প্রোপোজ করে ফেললেন সুধাকে।

০৯ ২২

কুলকার্নি পরিবার থেকে প্রাথমিক ভাবে আপত্তি ছিল না। একদিন পুণের রেস্তোরাঁয় মেয়ের বিশেষ বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতেন এলেন সুধার বাবা-মা।

১০ ২২

তাঁদের দীর্ঘ অপেক্ষায় রেখে এসেছিলেন নারায়ণ মূর্তি। তিনি বম্বে গিয়েছিলেন অফিসের কাজে। একে তো হবু জামাই দেরি করে এসেছেন। তার উপর তিনি জানালেন, ভবিষ্যতে কমিউনিস্ট নেতা হতে চান। খুলতে চান অনাথাশ্রম। এই উত্তর শুনে হবু জামাই হিসেবে মূর্তিকে নাকচ করে দেন সুধার চিকিৎসক বাবা।

১১ ২২

তবে মেয়ের পছন্দে সায় ছিল সুধার মা, বিমলার। কিন্তু বাবার আপত্তির জন্য তিন বছর আটকে ছিল বিয়ে। এই সময়ের মধ্যে আরও গভীর হয় নারায়ণ ও সুধার সম্পর্ক।

১২ ২২

সে সময়ে পুণার রেস্তোরাঁয় খেতে যেতেন দু’জনে। কিন্তু সে সময়ে সুধার থেকে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট নারায়ণের বেতন ছিল কম। যাবতীয় রেস্তোরাঁর বিল মেটাতেন সুধা-ই। তাঁদের প্রেমপর্বে মোট রেস্তোরাঁ-খরচ ছিল চার হাজার টাকা। এক সাক্ষাত্কারে সুধা জানান, সেই টাকা নাকি তিনি এখনও পাননি স্বামী নারায়ণ মূর্তির কাছ থেকে।

১৩ ২২

তাঁদের বিয়ে হয়েছিল ১৯৭৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। বেঙ্গালুরুতে মূর্তি পরিবারের বাড়িতে বসেছিল বিয়ের আসর। মোট খরচ ৮০০ টাকা। তার মধ্যে দু’জনেই যুগিয়েছিলেন ৪০০ টাকা করে। বিয়ে উপলক্ষে জীবনে প্রথম সিল্ক শাড়ি পেয়েছিলেন সুধা।

১৪ ২২

বিয়ের পরে মূর্তি দম্পতির স্বচ্ছল সংসার তৎকালীন বম্বে শহরে এগোচ্ছিল মসৃণ পথেই। এরমধ্যেই ১৯৮১ সালে নারায়ণ মূর্তি জানালেন, তিনি আর চাকরি করবেন না। শুরু করবেন ব্যবসা। দু’জনের পারিবারিক দিক দিয়ে ব্যবসার কোনও ইতিহাস ছিল না। স্বামীর সিদ্ধান্ত প্রাথমিক ভাবে তীব্র আপত্তি ছিল সুধার।

১৫ ২২

পরে সেই আপত্তি দূরে সরিয়ে রেখে সুধা-ই হয়ে ওঠেন নারায়ণের উদ্যোগ ‘ইনফোসিস’-এর অন্যতম কাণ্ডারি। একদিকে, সুধা তখন ছোট্ট দুই সন্তানের মা। অন্যদিকে তিনি-ই ইনফোসিসের প্রোগ্রামার-স্বামীর সেক্রেটারি-অফিসের রাঁধুনি ও কেরানি। তার আগেই স্বামীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন সঞ্চিত অর্থও। ইনফোসিস-এর জন্য তিনি অন্য সংস্থায় চাকরিও করতেন।

১৬ ২২

কিন্তু কিছুদিন এ ভাবে চলার পরেই সুধা আর তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস-এর সঙ্গে থাকলেন না। কারণ, নারায়ণ মূর্তি জানালেন, তিনি চান না ইনফোসিসে স্বামী স্ত্রী দু’জনে নিযুক্ত থাকুক। সুধা থাকতে চাইলে তিনি সানন্দে সরে দাঁড়াবেন।

১৭ ২২

কেরিয়ারিস্ট ও মেধাবী সুধা প্রথমে ভাবতেই পারেননি তিনি আর ইনফোসিস-এর অঙ্গ থাকবেন না। ধীরে ধীরে মনকে বুঝিয়ে শান্ত করেন তিনি। স্বামীর স্বপ্নকে সফল করতে সুধা সরে দাঁড়ান ইনফোসিস থেকে। কয়েক বছর নিজেকে আবদ্ধ করে নেন ঘরসংসারের চৌকাঠেই। তবে এই নিয়ে কোনও আক্ষেপ তখনও সুধার ছিল না, এখনও নেই।

১৮ ২২

সমাজকর্মী সুধা এখন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ইনফোসিস ফাউন্ডেশন’-এর পুরোধা। ১৯৯৬ সালে তৈরি এই সংস্থার সমাজসেবার বিস্তৃত শাখায় ব্রতী। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মহিলাদের স্বনির্ভরতা, জনস্বাস্থ্য-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেবার অগ্রণী ভূমিকা এই সংস্থার।

১৯ ২২

সাহিত্যপ্রেমী সুধা নিজেও বই লেখেন। ইতিমধ্যেই কন্নড় ও ইংরেজিতে বাচ্চাদের জন্য বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন তিনি। গল্পচ্ছলে সেখানে কিছু না কিছু বার্তার প্রয়াস লক্ষণীয়।

২০ ২২

সুধা মূর্তির স্বপ্ন, দেশের প্রত্যেক স্কুলে একটা করে সুন্দর পাঠাগার থাকবে। তাঁর সংস্থা ইতিমধ্যে ৭০ হাজার পাঠাগার তৈরি করেছে। বই কিনে পড়ার জন্য বাড়তি উৎসাহ দেন সুধা। তিনি মনে করেন, পাটকদের বই কেনার অভ্যাস না থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন লেখকরা। বই পড়ার পাশাপাশি সুধার আর দু’টি পছন্দের শখ হল বেড়াতে যাওয়া আর সিনেমা দেখা।

২১ ২২

ভারতীয় শিল্পপতিদের মধ্যে‌ অন্যতম নারায়ণ মূর্তি। সাম্প্রতিক নথি অনুযায়ী, তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় আড়াইশো কোটি ডলার। কিন্তু সবকিছুর পরেও মূর্তি দম্পতি বিশ্বাস সাধারণ জীবনযাপনে। বাকি শিল্পপতিদের ঘরনির মতো মহার্ঘ্য সাজপোশাক তো দূর অস্‌ত, গত প্রায় দু’দশকের বেশি সময় হল, সুধা মূর্তি কোনও শাড়িই কেনেননি।

২২ ২২

প্রাচীন রীতি অনুযায়ী, বারাণসীতে গিয়ে সুধার মনে হয়েছিল, তাঁর প্রিয় কোনও কিছু ত্যাগ করবেন। সেইমতো, তিনি বর্জন করেন নতুন শাড়ি কেনার অভ্যাস। যশ ও খ্যাতি শীর্ষে পৌঁছেও মেধাবী সুধার জীবনদর্শন বাঁধা আটপৌরে সুরেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement