এজলাসে দাঁড়িয়ে হিন্দি বা ইংরাজিতে প্রতিপক্ষ আইনজীবীর সঙ্গে লড়ার দৃশ্য সকলেরই দেখা। কিন্তু এজলাসে কখনও নির্ভুল সংস্কৃত ভাষায় লড়ে চলা আইনজীবী দেখেছেন? সারা বিশ্বে তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও এ রকম দ্বিতীয় কোনও আইনজীবী পাবেন না। এর একমাত্র উদাহরণ রয়েছে রয়েছে বারাণসীতে।
বারাণসীই একমাত্র জায়গা এবং সেখানে এক জনই আইনজীবী রয়েছেন যিনি কথা বলার জন্য শুধুমাত্র শুদ্ধ সংস্কৃত ভাষা ব্যবহার করে থাকেন। হিন্দি এবং ইংরাজিতে সমান দক্ষ হওয়া সত্ত্বেও কখনও এই ভাষায় তাঁকে কথা বলতে দেখা যায় না এজলাসে।
তিনি হলেন আচার্য শ্যাম উপাধ্যায়। আদালতের কোনও আবেদনপত্র পূরণ করা হোক। লিখিত বয়ান জমা দেওয়া থেকে শুরু করে এজলাসে দাঁড়িয়ে লড়াই— সংস্কৃত ছাড়া আর কোনও ভাষা তিনি ব্যবহার করেন না।
১৯৭৮ সাল থেকে তিনি আইনজীবীর হিসাবে কাজ শুরু করেন। সংস্কৃতে আচার্য উপাধিপ্রাপ্ত এবং সংস্কৃত ভাষায় পরীক্ষা দিয়েই আইন পাশ করেন শ্যাম।
আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করার আগে বাবা বারবার সতর্ক করেছিলেন যে, দেশের আদালত সংস্কৃত ভাষা গ্রাহ্য করবে না। তা সত্ত্বেও তিনি সংস্কৃতেই পড়াশোনা করেন এবং দেশের একমাত্র সংস্কৃত ভাষার আইনজীবী হয়ে নজির তৈরি করেন।
সংস্কৃতের প্রতি তাঁর ভালবাসার সূত্রপাত শৈশবেই। তাঁর বাবাও সংস্কৃতে দক্ষ ছিলেন। বাবার সঙ্গে এক দিন বেরিয়েছিলেন তিনি। তখন তাঁর বয়স ১০ বছর।
রাস্তায় কিছু লোকের সঙ্গে বাবার দেখা হয়েছিল, যাঁরা নিজেদের মধ্যে অনর্গল ভোজপুরী ভাষায় কথা বলে যাচ্ছিলেন। শ্যামের বাবা তাঁদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, “আপনারা যে ভাবে ভোজপুরীতে কথা বলে চলেছেন সেই একই আবেগ এবং দক্ষতা নিয়ে কি সংস্কৃতে কথা বলতে পারবেন?”
বাবার কথাগুলো সেই মানুষগুলোর মাথার উপর দিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শ্যামের মনে গেঁথে গিয়েছিল সে দিন থেকেই। সংস্কৃতকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সেই দিন থেকেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ওঠেন তিনি।
পরবর্তীকালে সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। সম্পূর্ণানন্দ সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৌদ্ধ দর্শনশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করে আচার্য হয়েছেন।
গুরুর পরামর্শেই প্রথমে শিক্ষকতা করতে শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু শিক্ষকতায় মন বসত না তাঁর। অন্য কিছু নিয়ে এগোতে চেয়েছিলেন। তবে যে পথেই যান না কেন সঙ্গে সংস্কৃতকেও নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
তখনই আদালতে সংস্কৃত গ্রাহ্য হবে না বলে বাবা তাঁকে সতর্ক করে দিয়েছিল। বাবার এই কথাতেই জেদ চেপে যায় তাঁর।
পরবর্তীকালে হরিশচন্দ্র কলেজ থেকে সংস্কৃত ভাষায় আইন পাশ করেন। ১৯৭৮ সাল থেকে আজও একই ভাবে সংস্কৃততেই লড়ে চলেছেন তিনি।
তাঁর বেশভূষাতেও সংস্কৃত পণ্ডিত হওয়ার ঝলক চোখে পড়ে। সাদা জামার উপরে কালো কোট পরে তিনি রোজ আদালতে আসেন। কপালে জ্বলজ্বল করে সাদার উপর লাল রঙের তিলক।
যে মুহূর্তে তিনি সওয়াল করতে শুরু করেন আদালতে হাজির অনেকে হতভম্ব হয়ে যান। বোঝার সুবিধার্থে যতটা সম্ভব সহজ সংস্কৃত ব্যবহার করে থাকেন তিনি।
২০০৩ সালে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের সংস্কৃত মিত্রম পুরস্কার পান। সংস্কৃতকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
শুধু এজলাসে সওয়াল করেই সংস্কৃতের জৌলুস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন না শ্যাম। পাশাপাশি সংস্কৃতে অন্তত ৬০টি উপন্যাস লিখে ফেলেছেন তিনি।