নতুন জীবন শুরু করতে চেয়েছিলেন দু’জনে, বলছে তদন্ত। তা হলে খুন কেন? গ্রাফিক— সনৎ সিংহ
শ্রদ্ধা ওয়ালকরকে সঙ্গে নিয়ে আফতাব আমিন পুনাওয়ালা দিল্লিতে এসেছিলেন ৮ মে। অর্থাৎ শ্রদ্ধাকে খুন করে টুকরো টুকরো করে ফেলার ঠিক ১০ দিন আগে। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি পূর্ব পরিকল্পিত চক্রান্ত এবং খুন করার জন্যই দিল্লিতে আনা হয়েছে বলে মনে হলেও কিছু হিসাব এখনও মেলাতে পারছেন না তদন্তকারীরা।
তদন্তে তাঁরা জানতে পেরেছেন, দিল্লিতে কলসেন্টারের নতুন চাকরি নিয়ে এসেছিলেন আফতাব। শ্রদ্ধাও নতুন শহরে এসে চাকরির খোঁজ শুরু করেছিলেন তাঁদের প্রশ্ন, পূর্ব পরিকল্পনা করে খুন করাই যদি লক্ষ্য হবে তবে দিল্লিতে নতুন চাকরি নিয়ে আসা এবং সেই চাকরিই করে যাওয়ার কী দরকার ছিল? আফতাব তো যে কোনও অজুহাতেই খুন করে দিল্লি থেকে পালিয়ে যেতে পারতেন! গত পাঁচ মাস ধরে অপরাধের জায়গাতেই কেন রয়ে গেলেন তিনি?
বস্তুত তদন্তে উঠে আসা আরও একটি তথ্য নিয়ে খটকা লাগছে তাঁদের। পুলিশ জেনেছে দিল্লিতে আসার কিছু দিন আগে আফতাবের সঙ্গে তাঁর বাবা-মায়ের অশান্তি হয়েছিল শ্রদ্ধাকে নিয়ে। তদন্তকারীরা জেনেছেন, আফতাবের পরিবারেরও সায় ছিল না দু’জনের সম্পর্কে। বাবা-মায়ের আপত্তির জন্যই মুম্বইয়ের বাড়ি ছেড়ে দিল্লিতে থিতু হওয়ার কথা ভেবেছিলেন শ্রদ্ধা-আফতাব। শুধু দিল্লিতে কোনও একজনের চাকরি পাওয়ার অপেক্ষা করছিলেন। আফতাব সেই চাকরি পেতেই দু’জনে দিল্লিতে চলে আসেন। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, যদি বাধা এড়িয়ে নতুন জীবন শুরু করাই দিল্লিতে আসার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তবে শ্রদ্ধাকে খুন করলেন কেন আফতাব?
৮ মে দিল্লিতে আসার পর প্রথম রাত দিল্লির পাহাড়গঞ্জের একটি হোটেলে কাটিয়েছিলেন আফতাব আর শ্রদ্ধা। পরের দিন আবার হোটেল বদলান। তৃতীয় রাত কাটে দিল্লিতে আফতাবের এক পরিচিতের বাড়িতে। দিল্লিতে শ্রদ্ধারা নতুন ফ্ল্যাট নিয়েছিলেন তারও দিন কয়েক পরে। অর্থাৎ ১৩ মে-র আশপাশে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই ১৮ মে বান্ধবীকে খুন করেন আফতাব। এমনকি, পুলিশকে জেরায় তিনি এমনও জানিয়েছেন যে, যেদিন তিনি শ্রদ্ধাকে খুন করেছিলেন, তার কয়েক দিন আগে থেকেই খুন করার ইচ্ছে হয়েছিল তাঁর।
তদন্তকারীদের প্রশ্ন খুন করাই যদি উদ্দেশ্য হবে তবে ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে গেলেন কেন আফতাব। আর সেখানেই মাসের পর মাস থেকেই বা গেলেন কেন! তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, শ্রদ্ধাকে খুন করার কথা আচমকাই মাথায় এসেছিল আফতাবের। যে রাগ থেকে মাঝেমধ্যেই শ্রদ্ধার উপর অত্যাচার চালাতেন তিনি। বান্ধবীকে খুনের সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন সেই সীমাহীন রাগ থেকেই।