শ্রদ্ধা ওয়ালকরের খুনের ঘটনার তদন্তের ভার পেতে পারে সিবিআই। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
শ্রদ্ধা ওয়ালকর খুনের মামলার অভিযুক্ত আফতাব আমিন পুনাওয়ালার ‘নার্কো অ্যানালিসিস টেস্ট’ করানোর অনুমোদন দিয়েছে সাকেত আদালত। বুধবার দিল্লি পুলিশের তরফে এ কথা জানিয়ে বলা হয়েছে, শীঘ্রই ধৃতের নার্কো পরীক্ষা করানো হবে। তবে মামলার গতিপ্রকৃতি দেখে আইনজীবীদের একাংশ মনে করেছেন শেষ পর্যন্ত শ্রদ্ধা খুনের তদন্তের ভার সিবিআই-কে দিতে পারে আদালত।
দিল্লি পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, সাধারণত বড় ধরনের অপরাধে সন্দেহভাজনকে নার্কো পরীক্ষা করানো হয়। মুম্বই বিস্ফোরণে ধৃত পাক নাগরিক আজমল কসাবের এই পরীক্ষা করানো হয়েছিল। ‘নার্কো অ্যানালিসিস টেস্ট’-এ ধৃতের জবানবন্দি আদালতগ্রাহ্য না হলেও এ ক্ষেত্রে তদন্তের সুবিধা হয়। বিচ্ছিন্ন সূত্রগুলি ‘জোড়া লাগাতে’ পারেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা।
প্রায় ছ’মাস আগে ২৭ বছর বয়সি লিভ-ইন সঙ্গী শ্রদ্ধাকে ২৮ বছরের আফতাব খুন করেন বলে অভিযোগ। এর পর প্রেমিকার দেহ ৩৫ টুকরো করেছিলেন তিনি। তার পর দিল্লির জঙ্গলে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সেই টুকরোগুলি। খুনের কিছু দিন আগে, শ্রদ্ধাকে নিয়ে হিমাচলে বেড়াতে গিয়েছিলেন আফতাব। তত দিনে খুনের পরিকল্পনা করতে শুরু করেছিলেন তিনি। ঘটনা ঘটিয়ে আফতাব যে ভাবে ঠান্ডা মাথায় গুগ্ল করে রক্ত পরিষ্কারের পদ্ধতি খুঁজেছিলেন, ফ্রিজ কিনেছিলেন, প্রেমিকার দেহ টুকরে টুকরো করে কেটে জঙ্গলে ছড়িয়েছিলেন, বান্ধবীদের নিয়ে ফ্ল্যাটে এসেছিলেন, আদালতে তা প্রমাণিত হলে এই অপরাধ ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ তকমা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
এমন গুরুতর ফৌজদারি মামলার ‘গন্তব্য’ সাধারণ ভাবে নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত হয়। শ্রদ্ধা খুনের মামলার অভিযুক্ত আফতাবের অপরাধ প্রমাণিত হলে তাঁকে ফাঁসিকাঠে ঝুলতে হতে পারে। কিন্তু তার আগে তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়গুলি তদন্তকারীদের ঠিক ভাবে অতিক্রম করতে হবে বলে মনে করছেন ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞদের ওই অংশ। কারণ, অতীতে অনেক ঘটনার ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, জঘন্যতম অপরাধে নিম্ন আদালতে সাজা পাওয়া অভিযুক্ত তদন্তে ত্রুটির কারণে ‘সংশয়ের ফাঁক গলে’ উচ্চ আদালতে মুক্তি পেয়ে গিয়েছে।
তাঁদের মতে, আইনগ্রাহ্য তথ্যপ্রমাণ পেশ করে আদালতে নিঃসংশয়ে ‘অপরাধী’ প্রমাণ করতে পারাটাই দিল্লি পুলিশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত অভিযোগের আইনগত সারবত্তা টিকিয়ে রাখার দক্ষতা দিল্লি পুলিশের রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আর সেই সূত্রেই উঠে আসছে সিবিআই তদন্তের সম্ভবনার কথা। বস্তুত, শ্রদ্ধা খুনের তদন্তের কাজে ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের ফসেন্সিক টিমের সাহায্য নিতে শুরু করেছে দিল্লি পুলিশ।