ফাইল ছবি
“কামাখ্যা মন্দিরে জয় শ্রীরাম নয়, জয় কামাখ্যা বলতে হয়। জয় মা কামাখ্যা বলুন।”
কামাখ্যায় পুজো শেষ। ধূমাবতী মন্দিরে পুজো দেওয়ার পরে খাড়া সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছিলেন তিনি। মন্দির চত্বরে কার্নিশে দাঁড়ানো কয়েক জন যুবক চেঁচিয়ে উঠলেন, “দিদি, জয় শ্রীরাম”। তাঁদের উদ্দেশ করেই ওই মন্তব্য করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আজ সকাল থেকেই ফুলে সেজে উঠেছিল কামাখ্যা মন্দির। আগামী কাল মা কামেশ্বরী ও কামেশ্বরের বিয়ে। ২০১৩ সালের অগস্টে দেওধ্বনি উৎসবের পরই কামাখ্যা ও ভৈরবী মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন মমতা। আট বছরের ব্যবধানে এ বার পুজোর দিন পড়ল অধিবাসে।
এ দিন বেলা ২টোয় গুয়াহাটি বিমানবন্দরে পৌঁছন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশ-প্রশাসনের তরফে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি বিমানবন্দরে ‘গার্ড অব অনার’-এর ব্যবস্থাও রেখেছিল অসমের বিজেপি সরকার। কিন্তু মমতা জানিয়ে দেন, তিনি ‘গার্ড অব অনার’ নেওয়ায় স্বচ্ছন্দ নন। গলায় অসমিয়া ফুলাম গামোসা। ছায়াসঙ্গী সুস্মিতা দেব। কামাখ্যার মূল তোরণ দিয়ে ঢোকার পরে অতিথিশালায় জুতো রেখে মমতা প্রথমে যান সৌভাগ্য কুণ্ডে। গণেশ মন্দিরে প্রণাম সেরে বিকেল ৩টেয় ঢোকেন মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে। কামাখ্যার বড় দলৈ কবীন্দ্র শর্মা ও ছোট দলৈ মোহিত চন্দ্র শর্মা ছিলেন পুজোর দায়িত্বে। পুজো সেরে যান ধূমাবতী মন্দিরে। শেষ গন্তব্য বগলা মন্দির।
তত ক্ষণে ৭২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে কলকাতা পুরসভা জয় করে ফেলেছে তৃণমূল। তাই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর জন্য প্রশ্ন তৈরি থাকলেও সাংবাদিকদের ত্রিসীমানায় যেতে দেওয়া হয়নি। ফাঁক গলে ঢুকে পড়া চিত্রসাংবাদিকদের হাজার অনুরোধে ছবি তুলতে দিলেন শুধু। পুজো দিয়ে মমতা জানান, অনেক দিন থেকেই আসার ইচ্ছে ছিল। এত দিনে মনস্কামনা পূর্ণ হল।
এ দিন মমতার মেঘালয় সফরে যাওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়। রাজ্য তৃণমূলের কোনও নেতাকে সফরের খবর দেওয়া হয়নি। রাজ্য তৃণমূলের আহ্বায়ক, প্রাক্তন মন্ত্রী গোপীনাথ দাস খবর পেয়ে বিমানবন্দরে যান। কামাখ্যাতেও আসেন। প্রদেশ কংগ্রেসের ভাষিক সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান তথা মুখপাত্র অভিজিৎ মজুমদারও কামাখ্যায় দেখা করেন। বলেন, “ব্যক্তিগত ভাবে কামাখ্যায় এসেছিলাম। দিদির সঙ্গে সাক্ষাতে রাজনীতি নেই।”
কামাখ্যায় মমতার সামনে ‘ও দিদি’ ধ্বনি তোলার পরিকল্পনা হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছিল। তাই সতর্ক ছিল পুলিশ। তবে তেমন ঘটেনি। মন্দিরে ওঠা, প্রদক্ষিণ করা ও বেরোনোর রাস্তা জুড়ে বিভিন্ন রাজ্যের পুণ্যার্থী অবশ্য ‘দিদি দিদি’ রব তুলেছেন। নিরাপত্তার বেড়া ভাঙার উপক্রম হয়েছে। মন্দির থেকে নামার সময় আশপাশের দোকান দেখতে দেখতেই এক সাধুর বাহারি মুকুটে চোখ আটকায় মমতার। তাঁকে ও পাশে থাকা এক প্রতিবন্ধী ভিক্ষুককে ১০০ টাকা দেন তিনি। ফুলচরণ মণ্ডল ওরফে ‘মুকুট বাবা’ বললেন, “টাকাটা বড় কথা নয়। দিদি যে দুটো কথা বললেন, কিছু দিলেন, তাতেই মন ভরে গিয়েছে।”