নরেন্দ্র মোদী
ফি-বছর কোনও না কোনও ভোটের ধাক্কা এড়াতে একই সঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন করানোর লক্ষ্যে আরও এক ধাপ এগোল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সাংসদ, বিধায়ক, আমলা, বিশেষজ্ঞ এবং আম নাগরিকের কাছে এই বিষয়ে মতামতও চাওয়া হয়েছে সরকারি ওয়েবসাইটে।
এক সময় বিজেপির প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী এক সঙ্গে সব ভোট করানোর কথা বলতেন। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বারবার বলেছেন, এই বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার। সম্প্রতি দু’টি সাক্ষাৎকারেও এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন তিনি। তার পর শিক্ষক দিবসে দিল্লির একটি বিদ্যালয়ে পড়াতে গিয়ে খোদ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় একসঙ্গে ভোট করানোর কথা বলার পরে আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ বার সরকারি পোর্টাল— ‘মাই গভ’-এ এই নিয়ে সকলের মত জানতে চেয়েছেন তিনি। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে এই মতামত দেওয়া যাবে।
প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যেই কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা বলেন— ‘সব ভোট যেন পাঁচ বছর অন্তর একই সঙ্গে হয়। এ ব্যাপারে কিছু করুন মোদীজি।’ কিন্তু একা মোদী তো এই নিয়ে কিছু করতে পারে না! এর জন্য নির্বাচন কমিশনকে এগিয়ে এসে সব দলের সঙ্গে বসে ঐকমত্য রচনা করতে হবে।’’ ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম বছরেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁর সচিব নির্বাচন কমিশনারকে ফোন করে এই বিষয়ে উদ্যোগী হতে বলেন। কমিশন একটি খসড়া তৈরিও করে দিয়েছিল। ১৯৯৯ সালে আইন কমিশনও একসঙ্গে ভোটের পক্ষে সওয়াল করে। সম্প্রতি সংসদের স্থায়ী কমিটিও বিষয়টি খতিয়ে দেখে।
একসঙ্গে ভোট হলে যেমন খরচ অনেক কমে যাবে, তেমনই আদর্শ আচরণ বিধির ধাক্কায় আটকে থাকবে না জনমুখী প্রকল্পের রূপায়ণ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত লোকসভা ও বিধানসভার নির্বাচন একই সঙ্গে হয়েছে। কিন্তু তার পরে আর তাল রাখা যায়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জানেন, এই বিষয়টি বাস্তবায়িত করতে একটি সামগ্রিক ঐকমত্য রচনা করা দরকার। কারণ, একসঙ্গে ভোট করতে হলে কোনও বিধানসভার মেয়াদ কমাতে হবে, কোনওটার বাড়াতে হবে। তা ছাড়া, হঠাৎ কোনও সাংসদ বা বিধায়কের মৃত্যু হলে বা পদ ছেড়ে দিলে কী হবে? শাসক দল বা জোট যদি মাঝপথে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ফেলে, সে ক্ষেত্রেই বা কী হবে? এই বিষয়গুলো নিয়েই সকলের মতামত চাওয়া হয়েছে।
অনেক আঞ্চলিক দল মনে করে, বিধানসভার সঙ্গে লোকসভা হলে কেন্দ্রে শাসক দলের প্রভাব খাটবে। সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি, লোকসভার সময়ই ওড়িশার বিধানসভার নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু মানুষ আজ এত বেশি সচেতন যে, দুই নির্বাচনে দু’রকম রায় দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের বক্তব্য, পরের লোকসভা ২০১৯ সালে। সে বছরই ৯টি রাজ্যে বিধানসভা ভোট আছে। আবার সামনের বছরই আরও পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। ২০১৮ সালে আরও ১৩ রাজ্যে ভোট। একবার ঐকমত্য রচনা হলে সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করতে হবে। কিন্তু সব থেকে বড় প্রশ্ন, এই উদ্যোগের পরেও কি সব রাজনৈতিক দল একসঙ্গে ভোট করানোর পক্ষে সম্মতি দেবে?