মুম্বইয়ের পাঁচতারা হোটেলে সোমবার জোটবদ্ধ থাকার শপথ নিচ্ছেন শিবসেনা, এনসিপি এবং কংগ্রেস বিধায়কেরা। রয়েছেন তিন দলের নেতা (বাঁ দিক থেকে) উদ্ধব ঠাকরে, শরদ পওয়ার ও মল্লিকার্জ্জুন খড়্গে। পিটিআই
মহারাষ্ট্রের বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের দিনক্ষণ আগামিকাল ঠিক হবে সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু তার আগের রাতে মুম্বইয়ের পাঁচতারা হোটেলে ১৬২ জন বিধায়ককে হাজির করল শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট। ছিলেন এসপির দুই বিধায়কও। তাঁরা শপথ নিলেন, কোনও প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে বিজেপির সঙ্গে যাবেন না। ২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য ১৪৫ জন বিধায়কের সমর্থন দরকার।
ঘটনাচক্রে এ দিনই বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানো এনসিপি নেতা অজিত পওয়ারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৯টি সেচ-দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে রাজ্যের দুর্নীতি দমন শাখা (যদিও বাহিনীর ডিজি পরমবীর সিংহ পরে দাবি করেন, তদন্ত চালু রয়েছে)। রাজনৈতিক মহলের মতে, এটা আসলে বিজেপির সঙ্গী হওয়ার পুরস্কার এবং এর মাধ্যমে প্রফুল্ল পটেল, ছগন ভুজবলের মতো যে সব এনসিপি নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত চালু রয়েছে, তাঁদেরও বার্তা দেওয়া হল।
এ দিন শপথ নিয়ে বিজেপি-কেও পাল্টা বার্তা দিয়েছেন জোটের বিধায়কেরা। রাজ্যপালকে চাপে রাখতে এ দিন সকালে তাঁর সঙ্গে দেখা করে সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিধায়কদের সমর্থনের চিঠি দেন কংগ্রেস নেতা অশোক চহ্বাণ। আর সন্ধ্যার বৈঠকের পরে আত্মবিশ্বাসী শরদ পওয়ারের মন্তব্য, ‘‘আমরাই সরকার গড়ব। মহারাষ্ট্র গোয়া নয়।’’
তবে আজ সুপ্রিম কোর্টে সরকার পক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেন, দেবেন্দ্র ফডণবীস সরকারের পক্ষে ১৭০ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। তবে বিধায়কদের সশরীরে হাজির করার প্রশ্নে তারা পিছিয়ে। শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোট ১৬২ জন বিধায়ককে হাজির করে ফেলতে পারায় এটা স্পষ্ট যে, গত দু’দিনে আর বিধায়ক ভাঙিয়ে উঠতে পারেনি অমিত শাহের দল। উল্টে যে তিন এনসিপি বিধায়ককে গুরুগ্রামের হোটেলে রেখেছিল বিজেপি, তাঁরাও শরদ শিবিরে ফিরেছেন।
আরও পড়ুন: বিরোধীদের কাছে এনে দিল মহারাষ্ট্র, আজ ধর্না ‘মমতার কৌশলে’
শীর্ষ আদালতে আজও দ্রুত সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ভোটাভুটি চেয়ে সওয়াল করেন তিন দলের আইনজীবী কপিল সিব্বল ও অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। একই সঙ্গে কোন জাতীয় বিপর্যয়ের কারণে ভোর ৫.৪৭ মিনিটে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করা হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। তিন দলের জোট রিট পিটিশনে দাবি করেছিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিধানসভায় আস্থা ভোট করা হোক। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা ও বিজেপির আইনজীবী মুকুল রোহতাগি প্রশ্ন তোলেন রাজ্যপাল ৩০ নভেম্বর আস্থা ভোটের দিন ধার্য করেছেন। তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে কি এ ভাবে প্রশ্ন তোলা যায়? আজ প্রায় দেড় ঘণ্টার কাছাকাছি দু’শিবিরের বক্তব্য শোনেন বিচারপতি এন ভি রমন্না, বিচারপতি অশোক ভূষণ ও বিচারপতি সঞ্জীব খন্না। কাল সকাল সাড়ে দশটায় রায় ঘোষণা করা হবে।
পরশু শপথ নেওয়ার পরে আজ প্রথম বার নিজের দফতরে যান মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার তাঁর সঙ্গে দেখা করলেও, প্রশাসনিক বৈঠকে উপমুখ্যমন্ত্রীর আসনটি ফাঁকাই ছিল।
স্বভাবতই আজও দিনভর প্রশ্ন উঠেছে, এনসিপির শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি অজিতকে দল থেকে বের করে দেওয়ার যে সুপারিশ করেছে, তা কেন কার্যকর করছেন না শরদ। শিবসেনা-কংগ্রেস এটিকে এনসিপির অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এড়িয়ে যাচ্ছে। এনসিপি সূত্রের মতে, বহিষ্কার হলে অজিতের বিধায়ক পদ থেকে যাবে। তাই তা করতে চাইছেন না শরদ।
দলের এখন মূল লক্ষ্য হল, অজিত যাতে হুইপ জারি করতে না পারেন সেটা নিশ্চিত করা। কারণ এনসিপির পরিষদীয় দল নেতা হিসেবে তিনিই রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছেন। পরে অবশ্য তাঁর বদলে জয়ন্ত পাটিলকে পরিষদীয় দলনেতা করা হয়েছে। এই নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আজ শরদ অবশ্য দাবি করেন, ‘‘কোনও বিধায়ককে সাসপেন্ড করার অধিকার অজিতের নেই।’’