Ram Mandir

‘ভোটের আগে রামরাম, ভোটের পর আরাম’, অযোধ্যায় বিজেপিকে তোপ শিবসেনার

কুম্ভকর্ণের মতো না ঘুমিয়ে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের কাছে অবিলম্বে রামমন্দির নির্মাণের দিন ঘোষণা করার দাবিও রেখেছেন উদ্ধব।রামমন্দির না বানালে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে বলেও বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ১৩:১৩
Share:

অযোধ্যায় বিজেপিকে তোপ উদ্ধব ঠাকরের। ছবি: পিটিআই।

এক দিকে শিবসেনা, অন্য দিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। অযোধ্যায় এই জোড়া উপস্থিতির পাশাপাশি হাজির তিন লক্ষ রামভক্ত। তা সামাল দিতে এলাকা জুড়ে ছয়লাপ হাজার হাজার নিরাপত্তারক্ষী। সব মিলিয়ে রীতিমতো দুর্গের চেহারা নিয়েছে সরযূ নদীর পাড়ের অযোধ্যা। আর সেখানেই রামমন্দির না হওয়ার জন্য বিজেপির তীব্র সমালোচনায় মুখর হলেন শিবসেনা সুপ্রিমো উদ্ধব ঠাকরে। সাংবাদিক সম্মেলনে বললেন, ‘‘ভোটের আগে ‘রামরাম’ আর ভোটের পরে ‘আরাম’, এটাই বিজেপির কৌশল।’’

Advertisement

গত কাল অযোধ্যায় পা দেওয়ার পর থেকে এলাকার উত্তাপ অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছেন উদ্ধব। সেই উত্তেজনাই বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ হয়ে আছড়ে পড়ল রবিবারের সাংবাদিক বৈঠকে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আগাগোড়া বিজেপিকে নিশানা করে দাগলেন একের পর এক তোপ। কেন্দ্রে ক্ষমতায় নরেন্দ্র মোদী, উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ। দুই কট্টর ‘রামভক্ত’ ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও আজও অযোধ্যায় কেন রামমন্দির হল না, সেই প্রশ্ন তুললেন উদ্ধব। তাঁর কথায়, ‘‘ তিন তালাক আর নোটবন্দি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আদালতের দ্বারস্থ হয়নি সরকার। অথচ রামমন্দিরের বেলায় আদালতের প্রসঙ্গ তুলে হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছে সরকার। মানুষের আবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করুক বিজেপি।’’ কুম্ভকর্ণের মতো না ঘুমিয়ে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের কাছে অবিলম্বে রামমন্দির নির্মাণের দিন ঘোষণা করার দাবিও রেখেছেন উদ্ধব। রামমন্দির না বানালে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে বলেও বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। সাংবাদিক বৈঠকের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিজেপিকে আক্রমণ করলেও তাঁর অযোধ্যায় উপস্থিতির পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই বলেই জানিয়েছেন শিবসেনা সুপ্রিমো। রামলালা দর্শনের উদ্দেশ্যেই তাঁর অযোধ্যায় আগমন বলে জানিয়েছেন উদ্ধব।

অবশ্য শুধু উদ্ধব নন, ‘একা রামে রক্ষা নেই, সুগ্রীব দোসর’-এর মতো অযোধ্যায় আজ বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ধর্ম সংসদ ঘিরেও চড়ছে উত্তেজনার পারদ। সপ্তাহব্যাপী একের পর এক মিছিল, জনসভার পর আজই চূড়ান্ত ধর্ম সংসদের ডাক দিয়েছে ভিএইচপি। রামমন্দিরকে কেন্দ্র করেই এই ধর্ম সংসদ আর এর পরে কোনও ধর্ম সংসদ বসবে না বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ভিএইচপি-র তরফে। রামমন্দির নিয়ে চূড়ান্ত ফয়সলা এই ধর্ম সংসদেই হয়ে যাবে বলে দাবি করছে তারা। অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স জারি করে রামমন্দির নির্মাণের দিন ঘোষণা করার দাবি রাখছে তারা। তাদের তোপের মুখেও উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকারই। ধর্ম সংসদ উপলক্ষে সারা দেশ থেকে তিন লক্ষ মানুষকে তারা এনে ফেলেছে সরযূ নদীর পাড়ে।

Advertisement

আরও পড়ুন: কর্তারপুরে যাওয়ার পাক আমন্ত্রণে ‘না’ সুষমার, যাচ্ছেন দুই ক্যাবিনেট মন্ত্রী

পরিস্থিতি সামাল দিতে অযোধ্যায় মোতায়েন বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী। ছবি: পিটিআই।

আর এই সব কিছুর মাঝে ভূমিকাটা একটু পাল্টে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের। অযোধ্যায় রামমন্দিরের দাবিতে নিজের রাজনৈতিক জীবনের পুরোটা কাটালেও এখন তিনি বলছেন রামের মূর্তি বানানোর কথা। শনিবার রাতেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে রামের মূর্তির মডেলে অনুমোদন দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। মূল মূর্তি হবে ১৫০ মিটার। ভিত্তি ও ছাউনি মিলিয়ে দাঁড়াবে ২২১ মিটার, যা ছাপিয়ে যাবে বর্তমানের সর্বোচ্চ পটেল-মূর্তিকেও। শুধু রামের মূর্তিই না, রামমন্দির আন্দোলনের মুখ এই বিজেপি নেতাকে দেখতে হচ্ছে প্রশাসনিক দিকগুলিও। অযোধ্যায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। মোতায়েন করা হয়েছে ৮২ কোম্পানি পিএসি বাহিনী, ৫ কোম্পানি র‌্যাফ, ৭০০ কনস্টেবল, ও ১৬০ জন ইনস্পেক্টর । থাকছে ড্রোন ক্যামেরা, প্রস্তুত এটিএস কম্যান্ডোও।

আরও পড়ুন: সাংসদের বয়স বাড়ে না! রাজস্থানের সোনারাম পাঁচ বছর পরেও ৭৩-এ দাঁড়িয়ে

বড় কিছু বিপদ হয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় অযোধ্যায় সেনা নামানোর দাবি তুলেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ধর্ম সংসদ ঘিরে নিরাপদ বোধ করছেন না স্থানীয় মুসলিমরা। অনেকেই এলাকা ছেড়েছেন। বাকিদেরও কয়েক দিনের জন্য অযোধ্যা ছেড়ে লখনউ চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড।

সারা দেশ থেকে অযোধ্যায় হাজির তিন লক্ষ ‘রামভক্ত’। ছবি: পিটিআই।

লোকসভা ভোটের ঠিক আগে অযোধ্যায় গেরুয়া শিবিরের এই জমায়েত ঘিরে রাজনৈতিক মহলেও উঠছে নানা প্রশ্ন। বহুজন সমাজ পার্টির প্রধান মায়াবতী সাফ জানাচ্ছেন, এই জমায়েত ভোটের আগের চমক ছাড়া আর কিছুই নয়। ধর্ম ও জাতপাত ও ঘৃণার রাজনীতি ছেড়ে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। আগামী ৬ ডিসেম্বর আর জোরদার ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ দিবস পালনের ডাক দিয়েছে বাম দল গুলির জোটও। ১৯৯২ সালে এই দিনটিতেই ভেঙে ফেলা হয়েছিল বাবরি মসজিদ।

(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement