খুনের হুমকির মুখে শেহলা আর জিগ্নেশ

শেহলার সঙ্গেই খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে গুজরাতের দলিত নেতা জিগ্নেশ মেবাণিকে। প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের রোষে পড়া চিকিৎসক কাফিল খানও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৫৮
Share:

মুখ খুললেই মরতে হবে!

Advertisement

প্রথমে সোমবার বিকেলে জেএনইউ-এর বাম ছাত্রনেতা উমর খলিদের প্রাণনাশের চেষ্টা। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই জেএনইউ-এর বাম ছাত্র রাজনীতিতে উমরের সহকর্মী শেহলা রশিদকে দেওয়া হল খুনের হুমকি। শেহলার সঙ্গেই খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে গুজরাতের দলিত নেতা জিগ্নেশ মেবাণিকে। প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের রোষে পড়া চিকিৎসক কাফিল খানও।

উমর খলিদের হামলাকারী ২৪ ঘণ্টা পরেও অধরা। মাফিয়া ডন রবি পূজারীর বিরুদ্ধে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন শেহলা। কাফিল খানও পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু এ সব ছাপিয়ে উঠে এসেছে একটি প্রশ্ন, গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই কি মরতে হবে? বা জুটবে খুনের হুমকি?

Advertisement

এমন প্রশ্ন ওঠার কারণও আছে। উমর-শেহলা-জিগ্নেশরা বরাবরই গেরুয়া শিবিরের দক্ষিণপন্থী রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব। শেহলার বক্তব্য, বিজেপি বিরোধিতায় লাগাতার মুখ খোলার জন্যই তাঁদের নিশানা করছে মৌলবাদী দক্ষিণপন্থীরা।

তিন বছর আগে জেএনইউ-এর ছাত্র আন্দোলনে কানহাইয়া কুমারের মতোই পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তাঁর সতীর্থ উমর-শেহলারা। নরেন্দ্র মোদী সরকার বিরোধী আন্দোলনে নামায় জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা শেহলাকে দেশদ্রোহী বলতেও ছাড়েনি দক্ষিণপন্থী মৌলবাদীরা। আজ টুইটারে ওই মাফিয়ার পাঠানো এসএমএসের স্ক্রিনশট শেয়ার করেন শেহলা। তাতে লেখা রয়েছে, ‘‘মুখ বন্ধ করুন। না হলে চিরদিনের মতো আমরা আপনার মুখ বন্ধ করে দেব। একই কথা উমর খলিদ এবং জিগনেশ মেবাণিকেও জানিয়ে দেবেন।’’

কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। রবি পূজারী প্রচার পাওয়ার জন্যই সাধারণত এ ধরনের হুমকি দেয়। যদিও শেহলা এর পিছনে গেরুয়া শিবিরের হাতই দেখছেন। উমরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার কলকাতায় বামপন্থী ছাত্র সংগঠন ইউএসডিএফ বিজেপি দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখায়।

বস্তুত গত দু’বছরে উমর-শেহলা বক্তব্য রাখার চেষ্টা করলেই তা ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করেছে সঙ্ঘের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। ফলে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, মোদী জমানায় বাক্‌স্বাধীনতা নিয়েই। উমর প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে টুইট করে বলেছেন, ‘‘স্বাধীনতা দিবসে আপনার বক্তৃতার জন্য আপনি পরামর্শ চেয়েছিলেন। আমার পরামর্শ হল, যাঁরা সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে মুখ খোলেন, তাঁদের নিরাপত্তা কি আপনি নিশ্চিত করতে পারেন?’’ ফেসবুকেও সরব হন উমর। তিনি বলেন, ‘‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলার অপরাধে যে দেশে কাউকে হত্যা করা হয়, সে দেশের নাগরিকদের কাছে স্বাধীনতার অর্থ কী!’’

উমর, শেহলার সঙ্গে একই দিনে হত্যার হুমকি পেয়ে একই সূত্রে জড়িয়ে পড়েছেন গোরক্ষপুরের চিকিৎসক কাফিল খান। গোরক্ষপুরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিশুদের বাঁচাতে গিয়ে যোগী সরকারের রোষের মুখে পড়া এই চিকিৎসকের ভাইকে সম্প্রতি খুনের চেষ্টা করা হয়। কাল কাফিলকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এসএমএস-বার্তায় বলা হয়েছে, ‘এ বার তোর পালা। তুই বাঁচতে পারবি না।’ পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পরে এ নিয়ে মুখ খুলে কাফিল বলেন, ‘‘প্রথমে আমার ভাইয়ের উপরে হামলা। তার পরে উমর। এর পর কি আমি? যা-ই হোক, লড়াই আমি চালিয়ে যাব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement