ফাইল চিত্র
দিল্লির সাম্প্রদায়িক হিংসার তদন্তে ব্যর্থতার জন্য আদালতে গত কাল কড়া ভর্ৎসনার মুখে পড়েছে রাজধানীর পুলিশ। আজ সেই দিল্লি পুলিশেরই পাশে দাঁড়ালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর কথায়, “পুলিশের ভাবমূর্তি খারাপ করার জন্য কেন যে প্রচার চালানো হয় তা আমার বোধগম্য নয়। পুলিশের খারাপ দিকটিই অধিকাংশ সময়ে সামনে আসে। ভাল কাজগুলি প্রচার পায় না।”
বিরোধীদের প্রশ্ন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চয়ই আদালতের পর্যবেক্ষণকেও পুলিশ-বিরোধী প্রচার বলে মনে করছে না? কারণ, কড়কড়ডুমা আদালত গত কাল দিল্লির ২০২০-র হিংসা নিয়ে তদন্তের খামতিগুলি সুনির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করেছে। কড়া প্রশ্ন তুলেছে পুলিশের সদিচ্ছা নিয়েও।
ব্যুরো অব পুলিশ রিসার্চ ডেভেলপমেন্টের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আজ বক্তব্য রাখেন শাহ। দাবি করেন, গণতন্ত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ব্যক্তি স্বাধীনতা ও নিজের মত প্রকাশের অধিকার। যা সরাসরি উন্নত পুলিশ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। সেই কারণে পুলিশ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়া প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা ঠিক না-থাকলে গণতন্ত্র সফল হতে পারে না। যা শুনে বিরোধীদের প্রশ্ন, তা হলে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করলেই কেন শিক্ষাঙ্গনে ধরপাকড় শুরু করে শাহের অধীনে থাকা পুলিশ?
শাহ নিজে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বললেও, জেএনইউ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজে স্বাধীন মত প্রকাশের কারণে বারবার ধরপাকড় চালিয়েছে দিল্লি পুলিশ। সরকারের সমালোচনা করায় জামিয়া মিলিয়া, জেএনইউয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা পর্যন্ত করেছে দিল্লি পুলিশ। বিরোধীদের প্রশ্ন, তখন কেন চুপ ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী?
শাহ এ দিন বলেন, “গণতন্ত্র আমাদের চরিত্রের অঙ্গ। স্বাধীনতার আগে থেকেই যা আমাদের চরিত্রে ছিল এবং স্বাধীনতার পরে যা আমরা গ্রহণ করেছি। গণতন্ত্রের বড় দিকটি হল ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা।” গণতন্ত্র নিয়ে শাহের ব্যাখ্যাকে কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। গণতন্ত্র প্রসঙ্গে শাহের বক্তব্য টুইট করেছিল সংবাদ সংস্থা। সেই টুইটটির নীচে হাসি মুখের একটি ইমোজি বসিয়ে ফেসবুকে তা পোস্ট করেছেন রাহুল। কংগ্রেসের ব্যাখ্যা, শাহের মুখে গণতন্ত্রের কথা যে হাস্যকর, সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন রাহুল।
দিল্লি হিংসার ‘জঘন্য খারাপ’ তদন্তের জন্য আদালতে গত কাল প্রবল ভর্ৎসনার মুখে পড়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা পুলিশ। একই দিনে দিল্লিতে ধর্ষণের শিকার হয় এক শিশুকন্যা। দিল্লি পুলিশের সার্বিক দক্ষতা যখন নানা ভাবে প্রশ্নের মুখে, তখন তাদের রক্ষায় এগিয়ে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ পুলিশের হয়ে সওয়াল চালান। তাঁর বক্তব্য, পুলিশের ভাবমূর্তির উন্নতি ঘটাতে তাদের ভাল কাজগুলিকে জনতার সামনে আরও বেশি করে তুলে ধরা দরকার। একই সঙ্গে পুলিশের গতানুগতিক কাজের পদ্ধতি পাল্টানোরও পরামর্শ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, “আজকের দিকে সাইবার হানা, ড্রোন হামলা, ড্রাগ পাচার, জাল নোট আটকানো পুলিশের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জ অনুযায়ী কাজের অভ্যাস পাল্টাক পুলিশকর্মীরা।”