প্রতিবাদী: সিএএ, এনআরসি-বিরোধী বক্তৃতা দিচ্ছেন চন্দ্রশেখর আজাদ। বুধবার শাহিন বাগে। পিটিআই
স্থগিতাদেশ মেলেনি। তা বলে স্থগিত নয় আন্দোলনও।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় জনগণনা পঞ্জি (এনপিআর)-এর উপরে সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ না-দেওয়ার দিনে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার এই বার্তাই দিল শাহিন বাগ। একই সুর জেএনইউ, জামিয়া মিলিয়া, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন প্রতিবাদী ছাত্র সংগঠনের বয়ানেও। রাস্তায় নাছোড় আন্দোলনই সিএএ-এনপিআর-এনআরসি (জাতীয় নাগরিক পঞ্জি) সম্পর্কে সরকারকে পিছু হটতে বাধ্য করবে বলে এখনও আশাবাদী তারা।
এমন দিনেও অবশ্য তাল কাটল কিছু ক্ষেত্রে। শাহিন বাগে আজ ভীম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ আসার পরেই ভিড়ের চাপে প্রবল বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। মঞ্চ থেকে পড়ে যান কয়েক জন। আন্দোলনকারীদের একাংশ মানছেন, প্রতিবাদে জল ঢালতে বিভেদ তৈরির চেষ্টা শুরু হয়েছে। রটানো হচ্ছে মিথ্যে কথা।
শাহিন বাগ আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা শাহিন কওসরের কথায়, ‘‘সারা দেশে যে রকম পরিস্থিতি, যে ভাবে ভয়-ভাবনা শিকেয় তুলে রাস্তায় নেমেছেন মহিলারা, আশা ছিল, তা ভেবে স্থগিতাদেশ দেবে সুপ্রিম কোর্ট। সেটা হয়নি। কিন্তু আশা করি, সংবিধানের রক্ষাকর্তা হিসেবে শেষ পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের কথা মাথায় থাকবে তাদের।’’
আন্দোলনে শামিল মারিয়ম বেগম, বেবি নাজ়, একরা শাহিনরাও বলছেন, ‘‘এক বার যখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছি, দাবি আদায় না-হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে।’’ একই কথা ‘দাদি’ হিসেবে পরিচিত বৃদ্ধা বিলকিসের মুখেও। স্থানীয় বাসিন্দা জুনেদের দাবি, শুধু বহু আলোচিত ‘তিন পন্থা’ নয়, দীর্ঘমেয়াদি ভিসার ক্ষেত্রেও মুসলিমদের বঞ্চিত করার নীল নকশা তৈরি করেছে মোদী সরকার।
এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস বলেন, ‘‘আদালত, ক্যাম্পাস এবং রাস্তা— লড়াই অব্যাহত থাকবে তিন জায়গাতেই।’’ এআইএসএ-র সভাপতি এন সাই বালাজির দাবি, ‘‘আসল লড়াই রাস্তাতেই। আগামী দিনে তা আরও জোরদার হবে।’’ একই কথা বলছেন জামিয়ার সাহিল, মহম্মদ উসমানরাও। ৩০ জানুয়ারি জামিয়ার সামনে থেকে রাজঘাট পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
তবে সুপ্রিম কোর্টের আজকের অবস্থানের পরে বিভিন্ন তরফে চাপ বাড়বে বলেও আশঙ্কা করছে শাহিন বাগ। পুলিশ রোজ আন্দোলন তুলতে বলছে। এ দিন যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, ‘‘মহিলা ও শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’’ বিজেপির মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্রের দাবি, শাহিন বাগে মহিলাদের ‘মগজ ধোলাই’ করছে কংগ্রেস এবং অন্যরা। দীর্ঘ দিন রাস্তা আটকে থাকায় চাপ রয়েছে স্থানীয়দের একাংশেরও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর মেনেছেন, বিতর্ক এড়াতেই এখনও পুলিশ পাঠানোর রাস্তায় হাঁটেনি সরকার।
এ সবের মধ্যেই প্রায় ৫,০০০ পোস্টকার্ড প্রধান বিচারপতিকে পাঠিয়েছেন শাহিন বাগের মহিলারা। লিখেছেন, কেন সিএএ-এনপিআরে আতঙ্কিত তাঁরা। টাকা নিয়ে প্রতিবাদের অভিযোগের উত্তরে তাঁরা এক কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্যের বিরুদ্ধে। যাবতীয় বিরোধিতা সত্ত্বেও এই আন্দোলনের ছোঁয়ায় দেশের সমস্ত বাগ (বাগান) শাহিন বাগ হতে পারে বলে এ দিন দাবি করেছেন আজাদও।