ছবি: এএফপি।
সীমান্ত পেরোতে হচ্ছে না। দিল্লি ভোটের আগে খাস রাজধানীতেই নাকি গড়ে উঠেছে পাকিস্তান!
কোথায়?
গত দেড় মাস ধরে দিল্লির যে শাহিন বাগে মুসলিম মহিলারা নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে অবস্থান-বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন, সেটিকেই ‘মিনি পাকিস্তান’ বলে দিল্লি ভোটের আগে পুরোদস্তুর প্রচারে নেমেছে গেরুয়া শিবির। দলের লক্ষ্য হল, হিন্দু ভোটের মেরুকরণ ঘটিয়ে দেড় মাস বন্ধ থাকা কালিন্দি কুঞ্জ-শাহিন বাগ থেকেই দিল্লি দখলের রাস্তা খোলা। তাই কপিল মিশ্র থেকে অমিত শাহ— ভোট মরসুমে বিজেপির সব ছোট-বড় নেতার মুখেই মেরুকরণের একটিই মন্ত্র, শাহিন বাগ।
এ যাবৎ নীরব থাকলেও মুসলিম ভোটের কথা মাথায় রেখে গত কাল প্রথম শাহিন বাগের বিক্ষোভকে সমর্থন করে সরব হন আপ নেতৃত্ব। দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া এ নিয়ে মুখ খুলতেই কৌশলগত ভাবে সুবিধে হয়ে যায় বিজেপির। কারণ অমিত শাহদের পরিকল্পনাই হল শাহিন বাগকে সামনে রেখে এক দিকে হিন্দুত্বের মেরুকরণ, অন্য দিকে মুসলিম ভোট যাতে কংগ্রেস ও আপের মধ্যে ভাগ হয়ে যায় তা নিশ্চিত করা। দল মনে করেছে, মেরুকরণ ও মুসলিম ভোট ভাগাভাগির ক্ষেত্র তৈরি হলেই ২০১৩ সালের ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি তৈরি হবে। সে ক্ষেত্রে কেজরীবালের পক্ষে কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়া সরকার গড়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। আর তাই মেরুকরণের কৌশল মেনেই আজ দিল্লির কারওয়াল নগরের জনসভা থেকে কংগ্রেস ও আপ দুই শিবিরকে সমান ভাবে আক্রমণ শানান শাহ। বলেন, ‘‘দু’দলের নেতারা বলছেন তাঁরা শাহিন বাগের ধর্নাকারীদের সঙ্গে রয়েছেন।’’ প্রায় প্রতিটি জনসভার মতোই কারওয়াল নগরেও শাহরা প্রশ্ন রাখেন— যাঁরা হিংসা করেন বা হিংসায় মদত দেন, তাদের কি ভোটে জিতিয়ে আনা উচিত দিল্লিবাসীর?
আরও পড়ুন: রাজনীতির অপরাধ মুক্তির পথ বলতে হবে কমিশনকেই
বিজেপির কৌশলে অস্বস্তিতে কেজরীবালের দল। সূত্রের খবর, হিন্দু ভোটের মেরুকরণের আশঙ্কায় ভুগছেন আপ নেতৃত্ব। সে কারণেই এত দিন উন্নয়নের কথা বলে ভোট চেয়ে আসা কেজরীবালরা এখন কৌশল পাল্টে সিএএ-বিরোধিতা ও শাহিন বাগের সমর্থনে মুখ খুলে মুসলিম সমাজকে বার্তা দিচ্ছেন।
আগামিকাল সন্ধ্যায় প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। তার আগে আজ সকালে সিএএ-কে সমর্থন জানিয়ে গেরুয়া শিবির সমর্থিত জনা দশেকের একটি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন। রাষ্ট্রপতিকে তাঁরা বলেন, সিএএ কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নিচ্ছে না। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক দল নিছক রাজনীতির স্বার্থে আন্দোলন চালিয়ে দেশ জুড়ে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিধিদলটির বক্তব্য, দেড়শো জনের বেশি প্রাক্তন বিচারপতি, আমলা, শিক্ষাবিদ, প্রাক্তন সেনাকর্তারা ইতিমধ্যেই সিএএ সমর্থন করে সরব হয়েছেন। রাষ্ট্রপতিকে তাদের সমর্থনের চিঠিও দিয়েছেন। সিকিম হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি প্রমোদ কোহলি রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বেরিয়ে এসে পরে বলেন, ‘‘যে ভাবে ওই বিলের বিরোধিতা করে রাজনীতি করা হচ্ছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। শাহিন বাগে যদি অর্থের বিনিময়ে আন্দোলন হয়, তা হলে সেটি গর্হিত বিষয়।’’
গত ডিসেম্বরে সিএএ প্রত্যাহারের দাবিতে বিরোধী দলের নেতানেত্রীরা দেখা করেছিলেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে। সে সময়ে সেই সাক্ষাতের কোনও ছবি তোলা হয়নি। আজ সিএএ সমর্থনে যাওয়া দলটি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আসার আগেই সেই সাক্ষাতের ছবি সংবাদমাধ্যমের কাছে পৌঁছে যায়। সৌজন্যে সঙ্ঘ পরিবার। এমনকি পরে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতের ছবি প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি ভবনও।
শাহিন বাগের আন্দোলনকে এককাট্টা হয়ে আক্রমণ শানাতে আজ সরব হয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদও। তাদের নেতা মিলিন্দ পরান্ডে দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘‘শাহিন বাগে রাস্তা-ঘাট আটকে হিন্দু-বিরোধী ও দেশ-বিরোধী স্লোগান ও উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখা হচ্ছে। অবিলম্বে তা থামানো প্রয়োজন।’’ সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশ সরকারের মন্ত্রী মহসিন রাজা দাবি করেছিলেন, শাহিন বাগের আন্দোলনের পিছনে পিএফআই নামে মুসলিম কট্টরবাদী সংগঠনের মদত রয়েছে। সেই দাবিকে হাতিয়ার করে মিলিন্দ বলেন, ‘‘এক জন মন্ত্রী যখন বলছেন, তখন তিনি সত্যি কথাই বলবেন। সিএএ-র নামে দেশ জুড়ে যে হিংসাত্মক কার্যকলাপ চলছে তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। অবিলম্বে সরকারের উচিত এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।’’