গ্রেফতার: অভিযুক্ত কপিল গুজ্জর। শনিবার নয়াদিল্লিতে। পিটিআই
ধর্মীয় গোঁড়ামির জন্য নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা অবরোধের জেরেই বিরক্ত এবং হতাশ হয়ে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন কপিল গুজ্জর! শাহিন বাগে শূন্যে গুলি চালানোর এক দিন পর তাঁর পরিবারের তরফে এমন যুক্তিই দেওয়া হল।
শনিবার বিকেল পৌনে ৫টা নাগাদ আচমকাই গুলির শব্দে রীতিমতো হইচই শুরু হয়ে যায় শাহিন বাগে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কালো ট্রাউজার্স, লাল শার্টের উপরে ধূসর ফুল স্লিভ সোয়েটার পরা ওই যুবক কপিল গুজ্জর ব্যারিকেডের কাছে ‘জয় শ্রীরাম’, ‘হিন্দু রাষ্ট্র জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে দিতে শূন্যে দু’বার গুলি চালান। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, পুলিশকর্মীরা যখন ওই যুবককে একটি গাড়িতে তুলছেন, তখন সে বলছে, ‘‘আমাদের দেশে শুধু হিন্দুদের কথাই চলবে, অন্য কারও কথা চলবে না।’’ অথচ এর পরও তাঁর পরিবারের দাবি, কোনও কট্টরবাদী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কপিল যুক্ত নন বা বিন্দুমাত্র ধর্মীয় গোঁড়ামিও তাঁর মধ্যে নেই।
ওই দিন গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ২৫ বছরের কপিলও পুলিশকে একই কথা জানান। তিনি জানান, কোনও সংগঠন বা গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত নন। দেড় মাসের বেশি সময় ধরে ধর্না চালায় সে ক্ষিপ্ত ছিল, তাই ভয় দেখাতে গুলি চালায়। একটি অটো করে সে শাহিন বাগে ধর্নাস্থলের কাছে পৌঁছেছিলেন।
আরও পড়ুন: পা বেঁধে রাস্তায় হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হল শিক্ষিকাকে, তোপে তৃণমূল
পূর্ব দিল্লির দাল্লুপুরা গ্রামে তাঁর বাড়ি। তিনি দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তারপর পারিবারিক ডেয়ারির ব্যবসায় যোগ দেন। দাল্লুপুরাতে একটা এবং দক্ষিণ দিল্লির বাদারপুরে একটা ডেয়ারির বড় ইউনিট রয়েছে তাঁদের। অন্য দিনে যেখানে বাদারপুর ডেয়ারিতে যেতে গেলে মাত্র দশ কিলোমিটার দূরত্ব যেতে হত তাঁকে, শাহিনবাগের রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ চলায় তাঁকে সে জায়গায় ৩৫ কিলোমিটার যেতে হচ্ছে। প্রায়ই বাড়ি ফিরতে রাত একটা বেজে যায়। এই নিয়েই নাকি দীর্ঘদিন থেকেই বিরক্ত এবং হতাশ হয়ে পড়েছিলেন কপিল। বাড়িতে অনেকবার এই বিষয়ে নিজের বিরক্তিও জাহির করেছেন, তা বলে শনিবার যে তিনি ওরকম এতটা কাণ্ড করে বসবেন, তা পরিবারের কেউই ভাবতে পারেননি।
আরও পড়ুন: গুরুতর অসুস্থ ঋষি কপূর, ভর্তি হাসপাতালে
ঘটনার দিন কপিল বেশ স্বাভাবিক ছিলেন বলেই জানিয়েছেন তাঁর পরিবার। সবার সঙ্গে স্বাভাবিক কথাই বলছিলেন। দুপুরের দিকে তিনি বেরিয়ে যান বাড়ি থেকে। পরিবারের সকলেই ভেবেছিলেন, কপিল পাশেই ক্রিকেট খেলতে গিয়েছেন। কিন্তু তার কিছু ক্ষণ পর টেলিভিশনে ওই খবর দেখে চমকে যান তাঁরা।
কপিলের প্রতিবেশী এবং বন্ধুবান্ধবেরা জানিয়েছেন, খুব শান্ত স্বভাবের ছেলে তিনি। বাড়ি থেকে বার হওয়ার সময় তাঁর কাছে কোনও বন্দুক ছিল না। তাঁর পরিবারেরও যথেষ্ট নামডাক রয়েছে এলাকায়। পরিবারেরও লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক নেই। তাহলে মাঝ রাস্তায় কোথা থেকে ওই বন্দুক পেলেন?
কপিলের এক বন্ধুর মতে, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। কারও প্ররোচনার শিকার হয়েছেন তিনি। কারণ যে সমস্ত কথা ওই দিন তাঁর মুখে শোনা গিয়েছিল, তা কখনও কপিলের মতবাদ হতে পারে না, এমনই মনে করেন তাঁর বন্ধু এবং প্রতিবেশীরা।
কারণ কখনও মুসলিম বিরোধী মনোভাব নিয়ে চলতেন না কপিল। তাঁর নিজের প্রচুর মুসলিম বন্ধু রয়েছে। এবং তাঁদের সঙ্গে কপিলের সম্পর্কও খুব ভাল। তাছাড়া ওঁদের বাড়িতেও মুসলিম পরিবার ভাড়া থাকেন, কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও যুক্ত নন তিনি, জানান তাঁর এক বন্ধু।
যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে বাড়ি থেকে বেরনো এবং শাহিন বাগে পৌঁছনোর মাঝে কার সঙ্গে কপিলের দেখা বা কথা হয়েছিল, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।