Hathras

নির্ভয়ার ছায়া, গণধর্ষণ করে খুন বদায়ূঁতে

ঘটনার সঙ্গে নির্ভয়া-কাণ্ডের মিল পেয়েছেন অনেকে। যোগী প্রশাসনের বিরুদ্ধে একযোগে গর্জে উঠেছে বিরোধী দলগুলি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লখনউ শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৪৪
Share:

তদন্তে জেলাশাসক (নীল ব্লেজ়ার) ও পুলিশ কর্তারা। পিটিআই

হাথরসের পরে বদায়ূঁ। তিন মাসের মাথায় ফের শিরোনামে উত্তরপ্রদেশ। গত সেপ্টেম্বরে হাথরসের এক তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছিল সারা দেশ। দিন কয়েক হাসপাতালে লড়াই করার পরে মারা গিয়েছিলেন সেই নির্যাতিতা, যাঁর দেহ পরিবারের লোককে না জানিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এ বার সেই রাজ্যেরই পশ্চিমাংশে বদায়ূঁতে বছর পঞ্চাশের এক মহিলাকে গণধর্ষণ করে খুন করার অভিযোগ উঠল এক পুরোহিত ও তার দুই শাগরেদের বিরুদ্ধে। নিহত মহিলার গোপনাঙ্গে আঘাত রয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে তাঁর পা, পাঁজরের হাড়ও।

Advertisement

ঘটনার সঙ্গে নির্ভয়া-কাণ্ডের মিল পেয়েছেন অনেকে। যোগী প্রশাসনের বিরুদ্ধে একযোগে গর্জে উঠেছে বিরোধী দলগুলি। সরকারকে আক্রমণ করেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও। বিষয়টি নিয়ে আজ হইচই শুরু হওয়ায় দোষীদের দ্রুত কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

ঘটনা গত রবিবারের। নির্যাতিতার ছেলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মতো গ্রামের একটি মন্দিরে গিয়েছিলেন তাঁর মা। কিন্তু রাত পর্যন্ত বাড়ি ফেরেননি পেশায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ওই মহিলা। তাঁর ছেলে জানিয়েছেন, রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ তাঁর মায়ের মৃতদেহ বাড়িতে ফেলে রেখে যায় অভিযুক্ত পুরোহিত ও তার দুই শাগরেদ। মায়ের কী হয়েছে জিজ্ঞেস করায় তারা জানিয়েছিল, শুকনো কুয়োয় পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। বদায়ূঁর মুখ্য মেডিক্যাল অফিসার (সিএমও) যশপাল সিংহ জানিয়েছেন, ‘শক’ আর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে নির্যাতিতার। জেলাশাসক কুমার প্রশান্তও একই কথা জানিয়ে বলেছেন, নির্যাতিতার পরিবারকে সব রকম সাহায্য ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

Advertisement

বদায়ূঁর পুলিশ প্রধান সঙ্কল্প শর্মা জানিয়েছেন, মেডিক্যাল পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে। ঘটনার দু’দিন পরে পুলিশ এফআইআর নিতে রাজি হয় বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের পরিবারের লোকজন। সেই ঘটনায় স্থানীয় স্টেশন হাউস অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ প্রধান। অভিযোগ পেয়েই কাল পুরোহিতের দুই শাগরেদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মূল অভিযুক্তকে খুঁজতে চারটি দল গঠন করে তল্লাশি চালাচ্ছে তারা। বরেলীর এডিজি অবিনাশ চন্দ্র জানিয়েছেন, অভিযুক্ত পুরোহিতের খোঁজ দিতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। তবে এই ঘটনার সঙ্গে ২০১২ সালের নির্ভয়া-কাণ্ডের মিল খোঁজাটা উচিত নয় বলেই মত সঙ্কল্প শর্মার। নির্যাতিতার শরীরে কী ধরনের আঘাত রয়েছে, তা বিস্তারিত জানতে ময়না-তদন্তের রিপোর্টটির দ্বিতীয় মতামতের অপেক্ষা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

যদিও কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি আজ নির্ভয়া প্রসঙ্গ তুলেছে। উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা বঢরা গাঁধী সুর চড়িয়ে টুইট করেছেন, ‘‘হাথরসে নির্যাতিতার পরিবারের কাতর আবেদন শোনেনি প্রশাসন। উল্টে অভিযুক্তদের পাশে দাঁড়িয়েছিল তারা। বদায়ূঁতেও স্টেশন অফিসার নির্যাতিতার পরিবারের আর্জি শুনতে দেরি করলেন। মেয়েদের সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশ সরকারের অভিপ্রায়ই গোলমেলে।’’ পুলিশ ঘটনাস্থল পরীক্ষায় যায়নি বলেও অভিযোগ করেছেন প্রিয়ঙ্কা। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আর কত নির্ভয়া হবে? কত নৃশংসতার পরে উত্তরপ্রদেশ সরকারের ঘুম ভাঙবে?’’ বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যম চুপ বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। কংগ্রেসের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশের আরও দুই বিরোধী দল বিএসপি এবং এসপি-ও টুইট করে গোটা ঘটনার নিন্দা করে দোষীদের দ্রুত উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেছে।

নড়েচড়ে বসেছে জাতীয় মহিলা কমিশনও। কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা উত্তরপ্রদেশের ডিজিকে চিঠি লিখে অবিলম্বে হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়েছেন। মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা শীঘ্র ঘটনাস্থলে যাবেন বলেও জানান তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement