ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক ঘিরে আঁতাঁতের অভিযোগ এড়াতে একসুর তৃণমূল ও বিজেপি।
বাম ও কংগ্রেস শিবির যখন বলছে ‘সেটিং’ করতেই দিদি-মোদীর বৈঠক, তখন তৃণমূল ও বিজেপি-দুই যুযুধান শিবির যুক্তি দিচ্ছে— যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে দলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তার আঁচ বিলক্ষণ পাচ্ছেন রাজ্য নেতৃত্ব।
সদ্য গ্রেফতার হয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশি গরু, কয়লা পাচার নিয়েও এ রাজ্যে সমান্তরাল ভাবে তদন্ত চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাতে তৃণমূলের একাধিক প্রথম সারির নেতাদের নাম জড়াচ্ছে। এই সময়ে রাজ্য বিজেপি যখন পরিস্থিতির ফায়দা তুলে সরকার-বিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করতে চাইছে, ঠিক সেই সময় মোদী-মমতা সাক্ষাৎ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে দলের একাংশে। বিশেষ করে বিজেপির নিচুতলার কর্মীদের মধ্যে। যাঁরা বিধানসভার ভোটের আগে থেকে শাসক শিবিরের রাজনৈতিক হিংসার শিকার হয়েছেন, তাঁরা প্রকাশ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে ক্ষান্ত থাকেননি। একই সঙ্গে ই-মেল করে অভিযোগ জানিয়েছেন, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডাকে। ওই মেলে বলা হয়েছে, মোদী-মমতার আজকের বৈঠকের পরে যদি তদন্তের গতি রুদ্ধ হয় (যেমনটা আগে হয়েছে) এবং প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে থেকে যায়, তাঁরা বিজেপির রাজ্য দফতরের বাইরে অবস্থান করবেন। এমনকি আমরণ অনশন করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বাংলার বিজেপি কর্মীদের ভরসা অটুট। তাঁরা বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির সঙ্গে আপস করবেন না। ওই ই-মেল সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। এমনটা কেউ করে থাকলে তা দলের লাইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।”
তবে বৈঠক-অস্বস্তি এড়ানো যায়নি। এ দিন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে রাজ্যের নেতাদের ভার্চুয়াল বৈঠক ছিল। সেখানে উপস্থিত বিজেপি বিধায়ক তাপসী মণ্ডল বলেন, ‘‘এই সময়ে এ রকম বৈঠক হলে সেটিং নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। ভালই তো, তাতে যদি আমাদের দলীয় সংগঠন বাড়াতে সুবিধা হয়।’’ পরে এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা বলেন, ‘‘রাগেরমাথায় এমন বলে ফেলেছেন। এ রকম কিছু বলার থাকলে দলীয় নেতৃত্বকেই বলা উচিত।’’
বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে যে সন্দেহের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা তথাগত রায়ও। এ দিন টুইটে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, ‘দয়া করে বুঝিয়ে দিন মমতার সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া নেই।’ বৈঠক ঘিরে আঁতাঁতের অভিযোগ কাটাতে মুখ খুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি আজ টুইট করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এক জন মুখ্যমন্ত্রী দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন সেটাই স্বাভাবিক। রাজ্যে শিকড়হীন কংগ্রেস ও বামেদের আঁতাঁতের অভিযোগ তোলা কল্পনাপ্রসূত। বিজেপি বাংলার মানুষের সঙ্গে রয়েছে। দুর্নীতির রানি মমতার সঙ্গে আঁতাঁতের প্রশ্ন নেই।’
এ দিকে এই বৈঠক নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করতে গিয়ে কার্যত বিজেপি কর্মীদের একাংশের সংশয়েই সিলমোহর দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, “এতগুলো নীতি আয়োগের বৈঠক হয়েছে। একটাতেও মুখ্যমন্ত্রী যাননি। এখন যাচ্ছেন কেন? যত বারই বিপদে পড়েন তত বার তিনি দিল্লি ছোটেন। তবে এ বার ইডি যে ভাবে তদন্ত করছে, তাতে ছাড় পাওয়া মুশকিল।” অস্বস্তি যে বাকিদের মধ্যে রয়েছে তা-ও স্পষ্ট। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সময় চেয়ে আবেদন করেছিলেন বাংলার বিজেপি সাংসদেরা। পাননি। এখন ফের সময় চেয়েছেন রাজ্য নেতারা।
তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ শান্তনু সেন ‘আঁতাঁত’-অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, “বোঝাপড়া হলে কি অভিষেকের বাড়িতে সিবিআই যেত? অনুব্রতকে ডাকত? ইডি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করত? যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় রাজ্যের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী দেখা করবেন, এটাই স্বাভাবিক।”