সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ঘুরছে এমন মিম।
আবার ‘বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র’দের খোঁজ মিলল নেট-দুনিয়ায়। এ বার অবশ্য তাঁরা মূর্তি ভাঙা দেখেননি, দীপিকা পাড়ুকোনের সিনেমা দেখার টিকিট কেটেও বাতিল করেছেন!
মঙ্গলবার রাতে দিল্লির জেএনইউ গিয়ে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ান দীপিকা। তার পরেই গেরুয়া শিবির থেকে তাঁর মুক্তি পেতে চলা ছবি ‘ছপাক’ বয়কটের ডাক দেওয়া হয় #বয়কটছপাক হ্যাশট্যাগে। দীপিকার পাশে দাঁড়িয়ে #আইসাপোর্টদীপিকা হ্যাশট্যাগে জবাব দেন বিরোধীরা। প্রথম দিকে দেশে ট্রেন্ডিংয়ে এক নম্বরে ‘বয়কটছপাক’, ও দু’নম্বরে ‘আইসাপোর্টদীপিকা’ থাকলেও পরে দীপিকার জন্য সমর্থন ছাপিয়ে যায় বিরোধিতাকে। বুধবার টুইটারে দীপিকার বিরোধীরা শেয়ার করেন ‘ছপাকে’-এর তিনটি টিকিট বাতিলের স্ক্রিনশট। সঙ্গে বার্তা, ‘‘আমি টিকিট বাতিল করেছি। আপনিও করুন।’’
আশ্চর্য ভাবে বডোদরার একটি সিনেমা হলের একই শো-এর এ-৮, ৯, ১০— এই তিনটি টিকিটই বাতিল করার ছবি শেয়ার করা হয় অজস্র অ্যাকাউন্ট থেকে। সেগুলি কাটাও হয়েছে একই অ্যাপ থেকে! অভিযোগ ওঠে, বিজেপির আইটি সেল দীপিকার সমর্থনের সঙ্গে পাল্লা দিতে না-পেরে এমন হাস্যকর বিরোধিতা তৈরির চেষ্টায় নেমেছে। সমাজমাধ্যমে আলোচনায় উঠে আসে লোকসভা ভোট চলাকালীন কলকাতায় বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনা। কলেজ স্ট্রিটে অমিত শাহের মিছিলের পরে বিজেপি সমর্থকেরাই ওই কাণ্ড ঘটান বলে অভিযোগ উঠেছিল। তবে ওই ঘটনার পর-পরই সমাজমাধ্যমে ছড়ায় ‘আমি বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র’ এক বলে এক ‘প্রত্যক্ষদর্শী’র বয়ান, যেখানে অভিযোগ উড়িয়ে টিএমসিপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। বিজেপি সমর্থক বলে পরিচয় দেওয়া অজস্র প্রোফাইল থেকে হুবহু সেই বার্তা শেয়ার হয়। এ দিনও অনেকের একই টিকিট বাতিলের জেরে কারও কারও কটাক্ষ, ‘‘সে দিনের বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্ররাই এখন দল বেঁধে এক টিকিট বাতিল করেছেন!’’
প্রতিটি স্ক্রিনশটে টিকিট বাতিলের জন্য ফেরত টাকার অঙ্ক চারশো কুড়ি! জালিয়াতির অপরাধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০ ধারা প্রয়োগ হয়। তাই এই অঙ্ক নিয়েও কটাক্ষ করেছেন অনেকে। এক জনের প্রশ্ন, ‘‘গোটা দেশের নানা জায়গার লোকজন কী করে ওই এক শো-তে টিকিট কাটলেন? এত জন একসঙ্গে বসবেনই বা কোথায়?’’ ছড়িয়েছে আরেকটি ছবিও। যেখানে দেখা যাচ্ছে, যে অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক দিন আগে বিজেপির দেওয়া সিএএ-সমর্থনের নম্বর-সহ বন্ধুত্বের ডাক দেওয়া হয়েছিল, সেই অ্যাকাউন্ট থেকেও টিকিট বাতিলের একই স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়েছে।
কার্টুনে-মিমে এই ঘটনা নিয়ে সরগরম ছিল নেট-দুনিয়া। একটি মিমে দীপিকার একটি কান্নার দৃশ্যের ছবিতে লেখা হয়েছে, ‘তিনটি সিট খালি দেখে দীপিকার প্রতিক্রিয়া’।
এ দিন একটি প্রতিবেদন তুলে ধরে কারও কারও অভিযোগ, সত্যি ঘটনা অবলম্বনে তৈরি ‘ছপাক’-এ হামলাকারী চরিত্রটির ধর্ম পাল্টানো হয়েছে। যদিও তাতে আমল না-দিয়ে দীপিকার সমর্থনেই সরব নেটিজ়েনরা। জেএনইউয়ের আন্দোলনের সমর্থকরা মন্তব্য করেছেন, ‘‘যারা জেএনইউয়ে অ্যাসিড নিয়ে হামলা চালিয়েছিল, তারা অ্যাসিড-হানা নিয়ে তৈরি ছবি তো বয়কট করবেই!’’ শিল্পী সত্রাজিৎ চৌধুরী ঐশীর পাশে দীপিকার দাঁড়ানোকে ফুটিয়ে তুলেছেন তুলিতে। ‘ওয়ান্ডার ওম্যান’ লেখা তাঁর আঁকা কার্টুনে দেখা যাচ্ছে, যোদ্ধার বেশে ঢাল নিয়ে দীপিকা ও ঐশী। ঐশীর কাঁধে হাত রেখেছেন দীপিকা।
এ দিন রাত অবধি দীপিকার সমর্থন ও বিরোধিতার লড়াই চলে টুইটারে। #বয়কটছপাক-এ টুইটের সংখ্যা ছাড়ায় পাঁচ লক্ষ, #আইসাপোর্টদীপিকা-তে ছাড়ায় চার লক্ষ।